চাপাবাজ
সুজন মজুমদার
🕐 ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
বন্ধু ফয়সাল আর আমি গ্রামে থাকি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পড়ালেখার জন্য একসঙ্গে দুজনে শহরে থাকব। নতুন একটা মেসে উঠেছি দুই বন্ধু। শহরে আসার পর কয়েক মাস পার হতেই টিউশনি শুরু করি। টিউশনির টাকায় ভালোই চলছে দিনকাল। কিন্তু ফয়সালের হাতে এখনো কোনো টিউশনি আসেনি। শহরে আসার ৬ মাসেরও বেশি চলছে।
এই পর্যন্ত দু’তিনটা টিউশনির কথা পাকাপোক্ত হলেও শেষমেশ ফয়সালের হাতের মুঠোতে তা ধরা দেয়নি। হাত ফসকে সব বের হয়ে যায় কোনো এক অজানা কারণে।
ফয়সাল গ্রামের সহজ-সরল তরুণ। উপস্থিত বুদ্ধিতে একটু কাঁচা, তবে বিদ্যার জাহাজ। দর্শনের ছাত্র। কিন্তু কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, তোমার সাবজেক্ট কী?
নতুন বউয়ের মতো লজ্জায় সাবজেক্টের নাম বলতে পারে না। মুখ লাল হয়ে যায়। টিউশনি পাওয়া কোনো অভিভাবকের সামনে আরও বেশি লজ্জা! এসব লজ্জার কারণে টিউশনি হয় হয় করেও হয় না। তাকে বুদ্ধি বাতলে দিই- সাবজেক্টের নাম বাংলায় না বলে ইংরেজিতে Philosophy বলবি, তাহলে আর লজ্জা লাগবে না। লজ্জাবাবুর মুখ দিয়ে বাংলা দর্শনই বের হয়। মুখে কখনো ইংরেজি আসে না।
হঠাৎ একদিন আমার এক স্টুডেন্টের অভিভাবকের ফোন এলো- ‘স্যার, রাজীবের বাবা হেকমত বলছি। আমার পাশের ফ্ল্যাটের নতুন ভাড়াটিয়ার ছেলের জন্য একজন গৃহশিক্ষক লাগবে। একজন ভালো মানের শিক্ষক। ছেলেটা ক্লাস ফাইভে পড়ে। গণিত-ইংরেজি ভালো পড়াতে পারবে এমন শিক্ষক দরকার।’
বিরাট আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, ‘আমার রুমমেট ফয়সাল আছে। ওই যে চশমা পরা ছেলেটা। অনেক মেধাবী...।’
আংকেল বললেন, ‘সে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছে?’
খানিকটা চুপ থেকে বললাম, ‘অ্যাকাউন্টিংয়ে।’
‘বাহ! ভালোই হবে।’
‘তা কত দিতে হবে?’ টুপ করে বলে দিলাম, ‘৫ হাজার আংকেল। ও তো আরও ৩-৪টা টিউশনি করে। এটা করলেও অনেক সময় বের করে করতে হবে।’
‘আচ্ছা। কালই পাঠিয়ে দাও তোমার বন্ধুকে। সব শুনে ফয়সাল বলল, ‘এত বড় চাপাবাজি? আমি কি অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়ি, ৩-৪টা টিউশনি করি?’
‘আরে বোকারাম, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একটু চাপা মারাই যায়।’ টিউশনিতে গিয়ে ফয়সাল ঠিকমতো চাপাবাজি করতে পারবে কি-না সেটাই দেখার বিষয়!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228