ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তাই তো!

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী

আলম তালুকদার
🕐 ৭:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

প্রথমেই বলে রাখি, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভালোমন্দ বলার একটু হলেও অধিকার আমার আছে। অনেকটা সেই বিশেষজ্ঞের মতো। শিশুদের নিয়ে একজন এমনভাবে কথা বলছে যে, আসল বিশেষজ্ঞরা অবাক। তো একজন তাকে বলল, আপনি এ বিষয়ে কোথা থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন? সে নির্বিকারভাবে বলল, কোথাও না! শিশুদের নিয়ে কথা বলতে আবার বিশেষজ্ঞ হতে হয় নাকি? আমি নিজে নিজেই তো একসময় অনেক বছর শিশু ছিলাম। তো সেইরকম যুক্তিতে আমি যেহেতু বেশ কয়েক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আছে বলে মনে করি।

একাডেমিকভাবে বলতে গেলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাজের মধ্যে প্রথম এবং প্রধান কাজ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা। মানবিক গুণসম্পন্ন আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করা। উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবেশ বজায় রেখে আধুনিক মানুষ সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীর সামনে হাজার হাজার সুযোগ উন্মুক্ত করা। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার দরজা উন্মুক্ত করা। সর্বোপরি নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। স্নাতক শব্দটি নেওয়া হয়েছে স্নান থেকে। এ ডিগ্রি নেওয়ার সহজ-সরল অর্থ হলো গোসল সমাপন করে একেবারে পূতপবিত্র হওয়া। স্নাতকোত্তর হলো জ্ঞানের রাজ্যে গোসল সমাপন করে জীবনযুদ্ধে শামিল হওয়া। সিরিয়াস বিষয়ে সিরিয়াস বেশিক্ষণ থাকা আমার পক্ষে কঠিন।

আশির দশকে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ খুব ডাটেফাটে পাঠকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। র’নবীর কার্টুন ছাড়া বিচিত্রা চিন্তাই করা যায় না। একবার প্রচ্ছদ কাহিনী হলো, বিশ্ববিদ্যালয়। কার্টুন এঁকেছেন এমনটা, মানুষ চেহারা নিয়ে ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে ঢুকছে। আবার বের হওয়ার সময় বিভিন্ন পশুর আকার নিয়ে বের হচ্ছে! কার্টুনটা দেখে নিজের দিকে তাকালাম। তবে আমি কি গরু-ছাগল? খুব খারাপ লেগেছিল। এসব মন্তব্য ঢালাওভাবে প্রযোজ্য নয়। দেশ তো দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্ররাই চালাচ্ছে। তা হোক সেটা টেকনিক্যাল বা ননটেকনিক্যাল।

আবার একটা আইছে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় তারপর বিশ্ববিদ্যালয়। তো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মেজাজ খুব খাট্টাস। মাইরের ওপর ওষুধ নাই সে এ নীতিতে বিশ্বাসী। রাস্তার ধারে স্কুল। এক গরিব বুড়ি ওই রাস্তা দিয়ে মানে স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেল, ‘তোর মতো কত গাধা পিটাইয়া মানুষ করেছি। তোরে পারমু না? তো বুড়ির ছিল একটা গাধার বাচ্চা। পরদিন সে ওই শিক্ষকের সামনে গাধা নিয়ে হাজির। দেখে এবং তার বক্তব্য শুনে শিক্ষক বলল, ঠিক আছে। ওই গাছের সঙ্গে বাইন্ধা রেখে যাও। দুই বছর পরে খোঁজ নিবা। তো বুড়ি ঠিক ঠিক দুই বছর পরে আবার হাজির।

শিক্ষকের সামনে গিয়ে তার গাধার দাবি পেশ করে। তাকে দেখেই চালাকির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষক বলল, ‘আরে আপনি তো বারো মাস পরে আইলেন, শোনেন বুড়ি মা। আপনার গাধা খুবই ট্যালেন্ট। সে এগারো মাসেই গাধা থেকে মানুষ হয়ে ঐপুরে গিয়ে বিরাট অফিসার হয়া গেছে। যান, খবর নেন। আমারে গাধাদের মানুষ করবার দেন।’

একদিক দিয়ে কিন্তু কথা বেঠিক না। আসলেই তো মানুষ হতে হয়। যেমন কবিও হতে হয়। আগে কাঁচা স্কুল কলেজ ছিল, পাকা পাকা শিক্ষক ছিল। এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাকা, আর শিক্ষক ব্যতিক্রম বাদে কাঁচা!

আমাকে এক সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘প্রাইমারি মানে বুঝলেন তো? প্রায়ই মারি! প্রায় প্রতিদিন সময় মারি, পোলাপান রে মারি, ফাঁকি মারি! এ কারণে এর নাম হয়েছে, প্রাইমারি। সঠিক বানান, ‘প্রায়ইমারি’! আগের দিনের শিক্ষকগণ এটা জানতে পারেনি! আর এখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে দুই রকম। পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। পাবলিক রে এবং তাদের পোলা-মাইয়াদের জীবন ঠিক করার মহান দায়িত্বে নিয়োজিত আছে এ রকমের কিছু কিছু পাবলিক ইউনিভার্সিটি। কিন্তু কখনও কখনও মূল দায়িত্ব ভুলে গিয়ে সব লিক করে দিচ্ছে!

অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করে থাকেন ও ‘প্রাইভেট’? তো তাদের বিভিন্ন স্তরে প্রায়ই নানান রকম ‘ভেট’ দিতে হয়! ‘প্রায়ই ভেট’! এইটা হলো গিয়ে পাবলিক ও প্রাইভেটের মাজেজা! কেউ বিশ্বাস না করলে তাই বলে অবিশ্বাসী বলা হবে না। সব সময় লক্ষ্মী আর সরস্বতীর সহবাস হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে গিয়ে যে নৈতিক অবক্ষয়ের নমুনা দেখা যাচ্ছে তাতে কখন কে যে কার গোপন লিক করে দেয় তা জানা বা বোঝা কঠিন। আর এমন নিন্দাবাচক কর্ম সবার মনকে লিক করে দিয়ে পাবলিক নামের সার্থকতা প্রমাণ করবে! কাজেই মাইরের সাবধান নাই! কার যে কখন লুঙ্গির চেইন বা কপাল খোলে আর ‘আইটকা’ যায় একমাত্র উপরওয়ালা জানেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper