ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নরসুন্দরের অসুন্দর গল্প

শফিক হাসান
🕐 ৮:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯

বাসুদেব শীলের ভালো নাম আড়াল হয়ে গেছে ডাকনাম মধু-র কারণে। নামের সঙ্গে আচরণের মিল নেই; মধুর ছিটেফোঁটা দূরে থাকুক, তার মুখ-নিসৃত বাক্য চিরতা, নিম, করলার চেয়েও তেতো। হাতে সবসময়ই থাকে ক্ষুর-কাঁচির মতো অস্ত্র, এটাই বোধহয় দিয়েছে বেয়াড়া হওয়ার আত্মবিশ্বাস। নরসুন্দরের অসুন্দর আচরণে অনেকে কষ্ট পেলেও যাওয়ার জায়গা নেই বলে সয়ে যায়। মানুষ তোয়াজ-তমিজ পছন্দ করে। অন্যদিকে নগদ কারবারি হওয়ায় মধু সে সবের ধার ধারে না!

কেনই বা নত হবে! দেশের, এলাকার ক্ষমতাধর অনেক পেশাজীবীই তার ‘বান্ধা’ কাস্টমার। চুল-দাড়ি কাটতে কাটতে এদের সঙ্গে নানা ধরনের গল্প হয়। কাস্টমারের ক্ষমতার বলে সেও বলীয়ান হয়। যাদের ক্ষমতা রিচার্জ করে নেয়, তাদেরও ছেড়ে কথা কয় না।

গত মাসে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে যখন সেলুন মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হলো- বখাটে কাট দেওয়া যাবে না, তাতে খুব একটা দমেনি মধু। বখাটে কাট তাকে দিতেই হবে। বখাটেই যদি না থাকে, বাড়তি টাকা আসবে কোত্থেকে! বখাটেপনায় জড়িত কেউ কেউ বিভিন্ন ‘মডেল কাট’ দিতে আসে। এ ধরনের কাজে দ্বিগুণ টাকা আদায় করে। যদি সত্যিই বন্ধ করে দিতে হয় তাহলে কী হবে! ভেবে খাবি খায় সে।

সেলুন মালিক সমিতি বছর বছর চুল-শেভের বর্ধিত তালিকা দিয়েই খালাস, আর সময়মতো চাঁদা নেয়। তারা কেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করল না! মধুর পুলিশ কাস্টমারও আছে কয়েকজন। কিন্তু প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য কীভাবে চাইবে; কাজ উদ্ধার করতে এরা নাকি বাবার কাছ থেকেও ঘুষ নেয়! শালা-শালি হলে অন্য কথা। কিন্তু কে আর সেধে বাঘের খাঁচায় মুখ দেয়!
বেশিক্ষণ দুর্ভাবনায় থাকতে হলো না তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগমন ঘটল কনস্টেবল আলফাজ আলীর।

এ পুলিশ সদস্য মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা। ভাড়া দিতে হয় না বলে এক বাড়িতেই রয়েছে দীর্ঘদিন। ঢুকেই ধপাস করে বসল সে। দৃষ্টি আকর্ষণ করল মধুর- ‘টাকা অনেক কামিয়েছি, এখন দরকার আরামের! শরীরটা ভালোভাবে ম্যাসাজ করে দে!’

মুখ ফসকে যায় মধুর, ‘আপনের বেতন কত?’
‘বেতন দিয়ে কী করবি রে হাঁদারাম! কাজ শুরু কর।’
চুল থেকে শুরু করে পিঠ, কোমর সবখানেই আঙ্গুল সঞ্চালন চলে। ‘বানানোর’ কৌশলে মুগ্ধ হয়ে আলফাজ বলে, ‘আগে পকেট মারতি নাকি?’
‘এ কেমন অপমান!’
‘আঙ্গুল যাদের ভালো চলে এদের অনেকেই লোকাল বাসে পকেট কেটে হাত পাকিয়েছে।’

ঘণ্টাখানেক ম্যাসাজের পর আলফাজ বলল, ভুঁড়িটাও ম্যাসাজ করে দিতে। নিমরাজি মধু শেষপর্যন্ত মানতে বাধ্য হলো। অন্য কেউ এমন আবদার করলে অনেক কথা শুনিয়ে দিত। পুলিশ বলে কথা! নধর ভুঁড়িতে আঙ্গুল চালাতেই কাতুকুতু উঠল আলফাজের। স্থির থাকতে না পেরে একপর্যায়ে হা হা হা করে হেসে উল্টে পড়ল চেয়ারসহ। চেয়ারের চাপে মধু পায়ে চোট পেল। চিৎপটাং আলফাজকে উদ্ধার করল মধুর সহকারী তীর্থঙ্কর। চুল-ধুলা ঝাড়া শেষে মধুর দিকে আলফাজ বাড়িয়ে দিল একশ’ টাকার একটা নোট। টাকা না ধরেই মধু বলল, ‘বিল পাঁচশ’ টাকা!’

‘পুলিশের কাছ থেকে বাড়তি টাকা চাস, এত্ত সাহস!’
‘পুলিশ বলেই বিল কম করেছি! বখাটে হলে...!’
‘বখাটের আনাগোনাও আছে! তোর বিরুদ্ধে কেস হবে রে! পাবলিকের চুল-দাড়ি কেটে তো ঠিকই একশ’ বিশ টাকা নিয়ে যাস! নে, ধর।’

‘টাকা লাগবে না। পরে দিয়েন।’
‘আমার ছেলেকে পাঠাচ্ছি। ওর চুলটাও কেটে দিস। দুজনের টাকা আগামী বছর মনে করে নিস!’
আলফাজ আলী বেরিয়ে গেলে গুগলে তার নাম লিখে সার্চ দিল মধু। চলে এল থ্রি আর ছবি। একটা ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছিল। সেই ছবি নিয়েই মধু স্ট্যাটাস দিল- ‘ঘুষখোর হারামখোরদের ফ্রি সার্ভিস দিই! তাদের টাকা নিয়ে হাত নোংরা করি না!’

একটু পরেই হাজির হলো পুলিশ-তনয়। তার চাহিদামতো বখাটে কাট দিল মধু। দুই জুলফির মাঝখানে বানাল সরু গলিপথ। মাথার ডানে বামে পেছনের চুল ফেলে বসাল তিনটি আইল! এরপর সেই ছবি তুলে আপলোড দিল ফেসবুকে।

মধুর ব্যবসায়িক কৌশল এটা! একদিকে টাকা না নিয়ে পুলিশকে তুলে দিয়েছে আসামির কাঠগড়ায়, অন্যদিকে ছেলের ছবি দেখিয়ে মুক্তি পাওয়া যাবে ‘অভিযোগ’ থেকে। একেই বলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বুদ্ধি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper