ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মোটা না সরু!

আলম তালুকদার
🕐 ৪:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৯

কোরবানির ঈদ মানে আনন্দ না হয়রানি? কী বলেন নানা-নানি? একথা নিয়ে হচ্ছে বেশ কানাকানি! এতে আবার যুক্ত হয়েছে লেডিস এডিস কানাকানি! এ বর্ষার সময়ে অনেকের হয় আবার চুলকানি। এবারের কোরবানির ঈদে এডিস মশার বড়ই খিদে, বাঙালিরে এবারে করে দিবে একেবারে সোজা সিধে! মানুষ মশারির কবরে ঘুমায়। গরুরাও মশারির তলে ঘুমায়। পার্থক্য কী? মানুষকে হুল না ফুটাতে পারলে গরুরে পুট করে কামড়িয়ে দিলে গরুর যদি ডেঙ্গু হইয়া যায়! তাইলে কিবা অবে? হায় শান্তি নাই ভবে? ডেঙ্গু আমাদের করতে চায় পঙ্গু! বাঁচব কেমবু?

ঈদের মধ্যে মশারা যদি কিত কিত খেলায় তাহলে তো আপদের মধ্যে বিপদ! আমার মনে হয় কোরবানির ঈদ এবার গতবারে মতো বেশি জমিবে না। ঝক্কি ঝামেলা বাড়িয়া যাইবে! পুঁজিবাদী সমাজে, ডিজিটাল সময়ে এখন টাকা দিয়ে সব হাতের নাগালে চলে আসে।

অনলাইনে গরু ছাগল কিনে একেবারে শুধু গোস্ত বাসা বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে- এমন কোম্পানি পয়দা হয়ে গেছে। কেউ রান্নার ঝামেলা এড়াতে চাইলে সেটাও হবে। শুধু কষ্ট করে হাত দিয়ে মুখে তুলে আরেকটু কষ্ট করে চিবাবেন বা ছোত করে গিল্লা ফেলবেন। তাও যদি কষ্ট হয় তবে আপনার পক্ষে কেউ খেয়ে নিতেও পারবে! কাজেই এখন শুধু টাকার পরিমাণ বেশি মজুত রাখতে হবে। তাহলে আর নো ঝামেলা! এক কৃষক মরাধরা একটা গাই কোরবানি সিজনে হাটে তুলেছে।

দুই ঘণ্টা পার সে তার গাই গরু বেচতে পারল না। তো এক দালাল বিষয়টা খেয়াল করে তার কাছে গিয়ে বলল- শোনেন, আপনি আমাকে শতকরা দশ টাকা দালালি দেবেন, আমি আপনার গাই চড়াদামে বিক্রি করে দেব। কৃষক আর কী করে, রাজি হয়ে গেল। তো সেই দালাল, গরুটা নিয়ে একটু উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বেশ উচ্চ কণ্ঠে গাইটির গুণাবলি বলতে থাকে- ‘এ গাই গরুটি বিদেশি জাতের প্রতিদিন দশ লিটার দুধ দেয়। শান্তশিষ্ট। যে কেউ যে কোনো সময়ে দোহন করতে পারে।

প্রতিবছর চারটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। সব রকমের খাবার খেতে পারে। গরুটির বিশেষ গুণ হলো, সবসময় ছেড়ে রাখলেও সীমানার বাইরে কেউ নিতে পারবে না। খারাপ লোকদের গুতায় ভালো লোকদের গা চেটে আদর করে! ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বলে অনেক গ্রাহক জুটিয়ে ফেলে। এক সময় কৃষক তার নিজের গাই গরুর এত গুণের কথা শুনে হঠাৎ দালালকে গিয়ে বলল, ‘ভাই আমি গরু বেচিব না!’ কেন? কেন? জবাবে সে বলে, ‘আমার গরুর এত গুণাগুণ আছে আগে জানতাম না! কাজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি গাই আর বেচিব না!’

তবে কোরবানির গোশত বিক্রির একটা বাজার দেখে খুব বিস্মিত হয়েছি। ফকির শ্রেণির লোকজন ঈদের দিন বিকালে বাসায় বাসায় গিয়ে যে গোশত সংগ্রহ করে থাকে তাতে কারো কারো ভাগে ৫ কেজি হতে ১০ কেজি হয়ে যায়। তারা তখন কিছুটা নিজের জন্য রেখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বা বসে বসে অবশিষ্ট গোশত ২০০ টাকা হতে ৩০০ টাকা কেজি দরে কোরবানির গোশত বিক্রি করে দিয়ে থাকে। যারা কোরবানি দিতে পারে না, তারা এই গোশত কিনে নিয়ে ঈদের গোশত গলাধঃকরণ করে থাকে।

এবার চিন্তা করেন কোথাকার গোশত কোথায় কীভাবে দৌড়াচ্ছে! গরু মোটা না সরু? কোনটা চাই? দেশি গরু বেশি মোটা তাজা হয় না। তবে গরু ব্যবসায়ীরা মার্কেটে চাহিদা মোতাবেক গরু মোটা তাজা করে থাকে! একবার আমি একটা মোটা তাজা এবং বেশ বিগ সাইজ গরুর পাল্লায় পড়েছিলাম।

আমার লোকজন এক সপ্তাহ আগেই গরুটি কিনে আমার বাসায় মোতায়েন করে। প্রথমে দেখে সবাই খুব পছন্দ করল। কিন্তু দিন দিন গরুটা সরু হতে হতে কোরবানির দিন তার কাহিল অবস্থা দেখে আমরা শঙ্কিত হয়ে গেলাম। মোটা গরু আর মোটা রহিল না! তালুকদার আর কাউকে কিছু কহিল না। ভাবলাম মোটা গরু কপালে সহিল না!

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper