ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা কলেজের ছাত্রী ইডেন কলেজের ছাত্র!

শফিক হাসান
🕐 ১:৩৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৯

আশফাকের সঙ্গে মীরার এ জনমে দেখা না হলেও কারও বড় কোনও লাভ-ক্ষতি ছিল না; খেয়ালী নিয়তি একদিন ঠিকই দুজনকে মুখোমুখি করাল! অনেক জায়গাতেই দুজনের মিল। লোকাল বাসে ভাড়া অর্ধেক দেওয়া কিংবা না দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র পরিচয়ে সুবিধা। রাজধানীর কয়েকটি কলেজের নাম জানে আশফাক, কেন যেন ইডেন কলেজের ছাত্র পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে!

অন্যদিকে মীরার পড়াশোনার গ্যাপ জমেছে অনেক কিন্তু পরিচিত অনেককেই ‘ঢাকা কলেজে অ্যাডমিশনটা নিয়েই ফেললাম’ শুনিয়ে চাপা হাসির জোগান দিয়ে যাচ্ছে। পরিবহনকর্মীরা সাধারণত শিক্ষার্থী পরিচয় শুনে ঘাটায় না তেমন; তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে।

আশফাক গ্রামত এক ভাইয়ের বস্তিতে উঠলেও ভদ্রসমাজে পরিচয়টা দিতে ইতস্তত করে। অকাতরে ইন্টারভিউ দিচ্ছে, চাকরি হলে মেসে উঠবে এমনই পরিকল্পনা। আপাতত নিবেদিতা শান্তি হলের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। সকালবেলায় কুদ্দুস ভাইয়ের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছে আশফাক, তার গলগ্রহ হয়ে থাকাটা পছন্দ করছেন না দেশি ভাই। যত খাতিরেরই হোক, ঢাকা শহরে কেউ কাউকে এক সপ্তাহের বেশি সহ্য করে না। আজও ইন্টারভিউ আছে কিন্তু কুদ্দুস ভাইয়ের অবস্থা দেখেই মুড বিগড়ে গেছে তারও। তাই বাসে কন্ডাক্টর ভাড়া চাইলে প্রথমটায় শুনতেই পায়নি। তৃতীয়বারের মতো চাইলে হুঁশ ফিরল। ভাড়া না দিয়ে পরিচয় দিল, ‘ইডেন কলেজের ছাত্র’!
‘ছাত্র! তাইলে অর্ধেক ভাড়াই দ্যান!’

‘আমার কাছে টাকা নেই।’
‘তাইলে বাসে উঠছেন ক্যান!’
শক্ত প্রশ্নের উত্তরে বাদানুবাদে গেল না আশফাক- ‘বিশ্বাস করেন, আমার হাতে একটা টাকাও নেই!’
পাশের যাত্রী মুখ খোলে এবার- ‘যদি আপনার কাছে টাকা পাওয়া যায়?’
‘বললামই তো, আমার হাতে টাকা নেই!’

রাগান্বিত প্রতিবেশী আসন থেকে উঠে অভদ্রের মতো হাত ঢুকিয়ে দিলো আশফাকের পকেটে। ঝনঝন করে উঠল ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েকটি মুদ্রা। কন্ডাক্টর এবার রাগ দেখানোর মওকা পেল- ‘এই টাকা ক্যামনে বাইর অইল?’
‘বলেছি, হাতে টাকা নেই। পকেটের কথা তো বলিনি!’

গুঞ্জন উঠল বাসজুড়ে। চালক ঘাড় ঘুরিয়ে খিস্তি উচ্চারণ করল। জেগে ওঠা বাসের যাত্রীরা মহাখ্যাপা। সামান্য ক’টা টাকার জন্য এমন কৌশলী প্রতারণা! ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সংরক্ষিত আসনে বসা এক তরুণী কুঁদে উঠল- ‘আপনি ইডেন কলেজের ছাত্র নাকি দারোয়ান?’

পেছন থেকে এক ছাত্র উড়ে এল সামনে- ‘শালার কত্ত সাহস- ইডেনের নাম ভাঙায়!’
সে ফটাফট দু’ঘা বসিয়ে দিল আশরাফকে। ইডেন কলেজের সত্যিকারের ছাত্রী ওই তরুণীও দেখানো পথে চপেটাঘাত করল। অনেক দিন পর সুযোগ পেয়ে হাত চালাল কন্ডাক্টরও। এমনিতেই প্রতিদিন মুখ চালিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। উপর্যুপরি কিল-চড় পড়তে থাকলে পুরুষ আসন থেকে উঠে এল আরেক তরুণী- ‘কী করছেন আপনারা, মেরে ফেলবেন নাকি লোকটাকে?’
উদ্যত হাত থমকে গেল ইডেনের তরুণীর- ‘আপনি আবার কে!’

‘আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র!’
‘বুঝেছি, এক গোয়ালের গরু।’
হাসির হুল্লোড়ে চাপা পড়ল বচসা। অগ্রণী তরুণ বলল, ‘এরা বোধহয় সংঘবদ্ধ চক্র। বাসের পরিবেশ নষ্ট করছে। দুজনকেই নামিয়ে দিই?’
কণ্ঠভোটে সিদ্ধান্ত হল শৃঙ্খলা ফেরানোর। নিচে নামার পর জড়সড় আশফাককে নিরাপদ জায়গায় বসাল মীরা- ‘কোথায় যাবেন?’
‘চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। এ অবস্থায় না যাওয়াই ভালো।’
‘আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিই তাহলে?’

কৃতজ্ঞতায় আশফাক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। মীরা রিকশা ডাকে। বুদ্ধি করে কুদ্দুস ভাইয়ের বস্তি থেকে কিছুটা দূরে নামতে বলে আশফাক। ভাড়া মেটানোর সময় দেখা গেল- দুজনের সব টাকা একত্র করেও ৫০ টাকা হচ্ছে না! মীরা রিকশাঅলাকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলল, ‘এদিকে যখনই আসবেন, কল করবেন। দ্বিগুণ টাকা দেব। ওই যে বড় লাল বিল্ডিংটা দেখতে পাচ্ছেন, ওটাই আমাদের বাড়ি!’
নিমরাজি রিকশাঅলাকে বিদায় হলে আশফাক বলল, ‘আপনাকে টাকাটা পৌঁছে দেব একদিন।’

হাসল মীরা- ‘ধ্যুৎ, ওকে ভুল নম্বর দিয়েছি। আমি থাকি ড. মিজান হোস্টেলে।’
পরের সপ্তাহে ধানমন্ডি লেকে দেখা গেল আশফাক-মীরাকে। চাকরি না খুঁজে আশফাক যোগ দিল মীরার লোক ঠকানোর ব্যবসায়!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper