ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মশা কতটা পাওয়ারফুল

আলম তালুকদার
🕐 ২:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৯

মশার ইতিহাস আর তাদের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করলে অনেকেই হয়তো বলতে বাধ্য হবে- ‘শোনো হে মানুষ ভাই, মশার উপরে কারও পাওয়ার নাই!’ ক্ষুদ্র একটা প্রাণী তার ভয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ নাদান এবং অসহায়! বাদশাহ নমরুদের নামের সঙ্গে একটি মশাও পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছে। নমরুদের মতো পাওয়ারফুল বাদশাহর জীবননাশ করে দিয়েছিল এ মশা। মশার প্রধান খাদ্য যেহেতু রক্ত সেহেতু যেখানে মানুষ সেখানে মশা থাকবেই। আধুনিক জগতে বিজ্ঞান কতকিছু আবিষ্কার করেছে, কিন্তু মশা নির্মূল করার যন্ত্র বা ওষুধ তৈরি করতে পারেনি!

কাজেই মানুষ যেমন সামাজিক জীব মশারাও তেমনি সামাজিক জীব। ওরা মানুষকে খুব ভালোবাসে। শুধু তাই নয়, গুনগুন পুনপুন করে বিনা টাকায়, বিনা অনুরোধে গানও শুনিয়ে থাকে।

তো মানুষ বলে- গান শুনাও আপত্তি নেই, কিন্তু কামুড় দেও ক্যা?
মশা বলে, থাপ্পড় বা তালি দাও সমস্যা নাই কিন্তুক মগর ডলা দেও ক্যা?
দেখা যাচ্ছে মশা আর মানুষের সঙ্গে চিরকালে এক অলিখিত যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এটা চলতেই থাকবে। মশা যখন আমাদের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ তখন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার বয়স যখন তিন বা সাড়ে তিন তখন কোলকাতায় মশার কামড় খেয়ে লিখেছিলেন- ‘দিনে মশা রাতে মাছি/ এই নিয়া কোলকাতায় আছি’!

এখনও আমরা আছি, মশামাছিও আছে। এক লোক মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিষ খেয়ে শুয়ে মশাদের আহ্বান করে বলল- আয়, কত রক্ত খাবি খা!
বিখ্যাত ছড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায়ের দুটি ছড়ার লাইন হলো- ‘মশায়/দেশান্তরী করল আমার কেশনগরের মশায়’! বাংলাদেশে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হচ্ছে, অনেকজন মারাও যাচ্ছে! মনে হয় অনেকেই এখন দেশান্তরী হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে! আচ্ছা সিরিয়াস জিনিস আমার কি সাজে! সাজে না? মশা এ জমানায় কত প্রকার? একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন-

এভাবে আরও শ্রেণিকরণ করা যাবে। বাচ্চা মশা প্রথম উড়তে শিখেছে। ওরা উড়ে এসে খুব খুশি। বাবা তাদের বলল, কেমন?
তারা বলল, আমাদের উড়তে দেখে সব মানুষ হাতে জোরে জোরে তালি দিয়েছে! কিন্তু তালি লাগাতে পারেনি!
আরও একটা মশা জোকস এসেছে। মা মশা তার বাচ্চাদের বলল, আজকে ভালো আচরণ করলে পিকনিকে নিয়ে যাব।

কোথায় কখন?
পাশের বনে, রাতেরবেলায় অনেক মানুষ থাকবে। তারা পিকনিকে আনন্দ করবে, সঙ্গে আমরাও! একবার এক লোক মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য লেপ দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে শুয়ে ভাবল, এবার আয় কেমনে আসবি? কিছুক্ষণ পর দেখতে পেল, একটা জোনাকি পোকা আলো জ্বালিয়ে উড়ছে।

সে মনে মনে বলল, দেখছনি কারবার, শালার মশা লাইট জ্বালাইয়া আমারে খোঁজতাছে!
তা খুঁজতেই পারে। মশার তো জীবন-মরণ প্রশ্ন। রক্ত না খেলে মারাই যাবে।

এ ভয়ঙ্কর মশাদের আয়ু মাত্র পনের দিন! যদি পনের বছর হত? হায় হায়! মানুষ বাঁচিত না হে! তবে মশাদের সবটাই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। আমার আপনার হাতে পায়ে ধরার হয়ত কেউ নেই। কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। এক সময়ে মশারাই সংগোপনে বা প্রকাশ্যে আপনার বা আমার হাতে-পায় ধরবে এবং রক্ত পরীক্ষার জন্য সুঁই ব্যবহার করবে! চিন্তা করেন, কতটা বিনয়ী এবং নিরহংকারী!

সদ্য প্রয়াত নাট্যকার ও অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ স্যার আমাকে বলেছিলেন, বিয়ে করা সহজ কিন্তু বিয়ের পর মশারি কে টানাবে এটা নিয়ে কিন্তু কাইজা হতে পারে! কাজেই বিয়ের আগেই এটার সমাধান করা উচিত!
তিনি আরেক দিন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন- আচ্ছা তালুকদার বলেন তো, মশারি ঠিকঠাক মতো টানালেও চারপাশ ঠিকমতো ‘গুনজিলে’ও কীভাবে মশা মশারির ভেতরে প্রবেশ করিয়া থাকে?

মনে হয় প্রশ্নটা এখন অনেকেরই। একবার বল্টু নতুন মশারির মধ্যে একটা ফুটো করে রাখল। ঘরের সব মশা ঢোকার পরে সে বাইরে শুয়ে আরামে ঘুম দিল! কী রকম বুদ্ধি? হায় রে ছোট্ট মশা, তোর জন্য যায় না কোথাও বসা, তোদের ভয়ে ধনী গরিব সবার করুণ দশা!

অলংকরণ : শামস বিশ্বাস

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper