ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ওরা কয়েকজন

আবুল কালাম আজাদ
🕐 ২:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৯

আমাদের পাশের বাড়ি শিলা আপুর কথা বলছি। কলেজে পড়ে। লেখাপড়ায় খুব ভালো। কলেজে গিয়ে সে প্রেমে পড়ল। গভীর প্রেম। পরস্পরকে জানে-প্রাণে ভালোবাসে। কিন্তু সেকেন্ড ইয়ারে যেতে না যেতেই কী থেকে কী হলো বোঝা গেল না। তাদের ব্রেকআপ হয়ে গেল। শিলা আপু কেঁদেকেটে সারা। কয়েকদিন খাওয়া-দাওয়া করল না ঠিকমতো। শেষে একসময় মায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘আমি ডিসিশন ফাইনাল করে ফেলেছি, আম্মু।’

‘কী ডিসিশন, মা?’
‘আমি জীবনে বিয়ে করব না। এমনকি আমার ছেলেমেয়েকেও বিয়ে করতে দেব না।’
শিলা আপুর ছোট ভাইয়ের নাম শিপলু। ও স্কুলে পড়ে। ও আবার শিলা আপুর মতো না। লেখাপড়ায় মনোযোগ কম। প্রায়ই স্কুল কামাই করে। সেদিন টিচার বললেন ‘শিপলু, তুই গতকাল স্কুলে আসিসনি কেন?’
‘আমার বার্ড ফ্লু হয়েছিল স্যার।’
‘বার্ড ফ্লু তো পাখিদের হয়। তুই তো মানুষ!’
‘এ শিপলু রে কোনোদিন মানুষ মনে করেছেন, স্যার? শুরু থেকেই তো ক্লাসে নিলডাউন করে মুরগি বানিয়ে রাখেন।’
এবার হেলাল ভাইয়ের কথা বলি। এলাকার বড় ভাই। বছর খানেক হলো বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর প্রথম প্রথম সবার মনেই ফুর্তি থাকে। কিন্তু হেলাল ভাইকে তেমন দেখলাম না। কেমন মনমরা। সেদিন সুন্দরী ভাবীর সঙ্গে হেলাল ভাইয়ের কথা হচ্ছিল ‘তোমার প্রাণের বন্ধু রাশেদুল যে মেয়েটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, সে মেয়েটা তো মোটেও ভালো না। বদমেজাজি, বেপরোয়া খরচের হাত, ঝগড়াটে, তেমন কোনো গুণও নাই।’
‘জানি।’
‘তাহলে তাকে এ বিয়ে করতে নিষেধ করছ না কেন?’
‘আমার বিয়ের আগে ও কি আমাকে নিষেধ করেছিল? এখন মরুক গে!’
হেলাল ভাইয়ের বন্ধু নেহাল ভাই। খুব বুদ্ধিমান মানুষ। বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ছকবাঁধা জীবনে ঢুকতে চাই না। বিয়ে করলেও অন্যসব ছেলের মতো বউয়ের সামনে পুতুপুতু করব না।’
‘পুতুপুতু’ শব্দের অর্থটা আমরা ঠিক ধরতে পারি না। আবার নেহাল ভাইকে জিজ্ঞেসও করতে পারি না। জিজ্ঞেস করলেই নেহাল ভাই বলবেন, ‘দিনরাত ফেসবুক নিয়ে থাকলে বছর পাঁচেক পর ৮০% বাংলা শব্দ ভুলে যাবি। তখন শব্দ বলতে তোদের কাছে থাকবে লোল, ওয়াও, ফ্রান্স, হাই এসব।’
নেহাল ভাই প্রেম করেন। প্রেমের ক্ষেত্রেও খুব হিসাবি। মোটেও আবেগকে প্রশ্রয় দেন না। কিছুদিন আগে নেহাল ভাই অফিস থেকে বিদেশে এক বছরের একটা ট্রেনিং পেলেন। তার প্রেমিকা রিনি আপু বিমানবন্দরে গেলেন বিদায় জানাতে। বিদায়ের আগে তাদের কথাবার্তা ‘তোমার হাতের হীরার আংটিটা আমাকে দিয়ে যাও।’
‘কেন প্রিয়তমা?’
‘এ আংটি আমাকে সারাক্ষণ তোমার কথা মনে করাবে।’
‘এটা ছাড়াও তুমি সারাক্ষণ আমাকে মনে করবে।’
‘সেটা কীভাবে?’
‘তোমার মনে সবসময় খচখচ করবে, আংটিটা চেয়েছিলাম, দিল না। কী প্রেম করেছিলাম রে বাবা!’ আমাদের বন্ধু নওরোজ। বছর খানেক হলো সে কবিতা লিখতে শুরু করেছে। দিনে অন্তত দশ/পনেরোটা কবিতা লেখে। যাকে কাছে পায় তাকেই পড়ে শোনায়। ফেসবুকে কবিতা ছাড়া আর কিছু পোস্ট করে না। কাউকে ঈদ, পূজা, নববর্ষ ইত্যাদির শুভেচ্ছাও জানাবে কবিতার ছন্দে। তাও একটা না, প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুইটা করে এসএমএস পাঠায়। ওকে বললাম ‘দোস্ত, তুই শুভেচ্ছা জানিয়ে দুইটা করে এসএমএস পাঠাস কেন?’
‘আমার কবিতাগুলো খুব ভালো হয়। ধর, তোরা কাউকে একটা ফরোয়ার্ড করে দিলি, তখনো তোদের কাছে একটা থাকল!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper