ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যাত্রা অসুভ

শফিক হাসান
🕐 ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৪, ২০১৯

গোলাম খসরুকে দেখে কেউই অন্তত বলবে না স্বাস্থ্যই সুখের মূল! তার স্বাস্থ্যের যে বাড়বাড়ন্ত অবস্থা, আতঙ্কিত না হয়ে উপায়ও নেই। ভেজানো পাউরুটির মতোই তিনি ফুলেফেঁপে উঠছেন ক্রমশ। রিকশাওয়ালারা তাকে দূর থেকে দেখলেই গতিপথ পাল্টে ফেলে। দ্রুত ব্রেক কষে আবার লেন বদলে দুর্ঘটনা ঘটানোর ইতিহাসও আছে। মহল্লায় রিকশাওয়ালারা পাকে-চক্রে ঢুকে পড়লেও মনে মনে জপ করে ‘মোডা ছার’ যেন সামনে না পড়ে।

অবশ্য এর জন্য দায়ী খসরু নিজেই। পারতপক্ষে ঘরের বাইরে যান না। বাড়িওয়ালা বাবার দুইমাত্র ছেলে, তার বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। এদিকে তিনি শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে থেকে সুমো কুস্তিগীর হচ্ছেন। বছরভর কুম্ভকর্ণের ভূমিকা নিলেও ঈদুল ফিতরের আগে অন্তত একবার বেরোতে হয় নতুন জামা কিনতে। আজকাল অনলাইনেও কেনাকাটা করা যায়। সেখানে দুইবার ধরা খেয়েছেন। একবার খদ্দরের পাঞ্জাবির অর্ডার দিয়ে পেয়েছিলেন এক কেজি তুলা। আরেকবার অর্ডার দিয়েছিলেন নামি ব্র্যান্ডের জুতা, পেলেন দু’ফালি করে কাটা এক কেজি পটোল!

বাধ্য হয়ে অনলাইন থেকে হাঁটার লাইন ধরলেন।

বছর তিনেক আগে মার্কেটে যাবেন বলে এক রিকশাওয়ালাকে ডাক দিলেন। সে ধারণক্ষমতার পরিধি অনুধাবন করে তড়িঘড়ি পালিয়ে গেল। বাধ্য হয়ে কৌশলের আশ্রয় নিতে হলো খসরুকে। ঘাপটি মেরে থাকলেন এক ঘণ্টা। যেই না যাত্রী নেমে ফাঁকা হলো একটা রিকশা, বিনা বাক্যব্যয়ে সেটাতেই চড়ে বসলেন। তারপরের ঘটনা জীবনেতিহাস রিকশার টায়ার ফেটে, স্পোক ছিঁড়ে মুহূর্তেই পাকা রাস্তায় চিৎপটাং হয়ে মারাত্মক চোট পেলেন। রিকশাওয়ালা পেল নিজের চোখের পানি, তার ঠিকানা হলো হাসপাতালে। এলাকায় ছড়াল ভোটকাইয়ার রঙ্গরস!

সুস্থ হওয়ার পর কিছুদিন রিকশায় চড়ার ঝুঁকিতে গেলেন না। শেয়ারভিত্তিক রাইড পাঠাও কল করে তার চালককে দিলেন ‘হাঁটাও’ ফর্মুলায় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ! নিজেও হাঁটলেন মার্কেট পর্যন্ত। পরপর কয়েকটি দোকানে ঢুকে বললেন, ‘পাঞ্জাবি দেন!’

শুনতে হলো অভিন্ন উত্তর ‘আপনার সাইজের পাঞ্জাবি নাই!’

শেষমেশ নাঙ্গা হয়েই ঈদ পালন করতে হয় কি না এমন আশঙ্কার সমুদ্র থেকে তাকে উদ্ধার করল তৃতীয়তলার ভাড়াটে মিন্টু। খসরুর নির্বুদ্ধিতায় জিহ্বা কামড়ে বলল ‘ফ্যাশন বিশ্ব এগোচ্ছে আর আপনি পাঞ্জাবি খুঁজে হয়রান হচ্ছেন! দেখেন না, নায়িকারা গামছা কেটে পোশাক বানায়! সেগুলো আবার মারাত্মক জনপ্রিয়ও!’

শরীরের তুলনায় খসরুর মাথাটা ছোট। সেই মাথাটাই দুলল বিরক্তিতে ‘ধুর মিয়া, নায়িকার পোশাক দিয়ে আমি কী করব! নায়িকা হব নাকি!’
‘আপনি হবেন ভিলেন অথবা নায়ক! গামছা ফ্যাশন ধরেন, ঝুট-ঝামেলামুক্ত।’

মিন্টু তাকে বুদ্ধি দিল গ্রামীণ চেকের চারটা গামছা কেনার। গামছাগুলো সামনে-পেছনে প্রয়োজনমতো ছড়িয়ে স্ট্যাপলারের পিন মেরে দিতে হবে।

কপাল প্রসন্ন হলে ফ্যাশন আইকন হিসেবেও পরিচিত হয়ে যেতে পারেন গোলাম খসরু! একটা সময় ছিল পোশাক পরা ফ্যাশন, এখন না পরাও ফ্যাশন এটা কি তিনি জানেন না!

বুদ্ধিটা পছন্দ হলো খসরুর। দুই সেট পাঞ্জাবির জন্য আটটা গামছা কিনে নিলেন। গামছা দিয়ে বানানো পাঞ্জাবি পরেই বাড়িতে যাবেন সিদ্ধান্ত নিলেন। ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলাপ-পরিচয় হয়েছে, মিন্টু তার গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী।

খসরু জানালেন, গ্রামে দুজনে ঈদগায় মিলিত হবেন। যাবেন একত্রে। টিকিটও কেনা হলো দুইটা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বাসে ওঠার সময় দেখা গেল, প্রবেশপথটা খসরুর বৃহদাকার শরীরের তুলনায় খাটো। বিকল্প হিসেবে জানালা দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন। ঝনঝন শব্দে গ্লাস ভাঙল একটা! উপায় না দেখে হেঁটেই রওনা হলেন খসরু। কয়েক লিটার ঘাম ঝরিয়ে, কয়েক কেজি চর্বি কমিয়ে ১২ ঘণ্টা পরে গ্রামে পৌঁছালেন। কল করল মিন্টুকে ‘কোথায় আছো?’

‘অর্ধেক পথ এসেছি! বাস এখন যানজটে আটকা। যাত্রীরা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কেনাকাটা সারছে!’

‘আমি তো হেঁটেই চলে এলাম!’ ‘ভালো করেছেন। চর্চা অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে হাঁটা বাবা হিসেবে নাম করতে পারবেন। তবে খবরটা গোপন রাখেন। পরিবহন মন্ত্রণালয়ের লোকজন শুনলে আপনাকে বিরোধী দলের চর আখ্যা দিতে পারে!’

অলংকরণ : মানিক বর্মন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper