পুকুর বালিশ চুরি
শফিক হাসান
🕐 ৪:০২ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০১৯
মলিন রায়ের নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাস্তবতা ‘সহৃদয়’ আচরণ করবে বুঝতে পারলে বাবা-মা নিশ্চয়ই এমন নাম রাখতেন না। নাম বদলে রাখতে পারতেন উজ্জ্বল রায়! উজ্জ্বল রায় হতে পারতেন শৌখিন গায়ক, কণ্ঠে খেলত ‘আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবন ভরা...।’
বনের রাজা সিংহের পদবি যখন ছিনিয়ে নিলেন একজন বন কর্মকর্তা, তার বালিশ-তোষকের নিচে মিলেছে কাড়ি কাড়ি টাকা; সেই থেকে মলিনের ইচ্ছা, যে করেই হোক একটা বালিশ সংগ্রহ করবে। আলাদিনের চেরাগের আশা করে লাভ নেই, দৈত্য হয়তো বুড়ো হয়ে মরে পড়ে আছে। চেরাগে ঘষার পর ঘষা দিলেও সাড়া মিলবে না!
ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে মলিন টাকায় টাকা আনে। এ জন্য বালিশে কিছু টাকা রেখে ঘুমাতো সে। কদিন পরে ওয়াড় খুলে হতাশই হতে হতো টাকাগুলো বাচ্চা দেয়নি। ১০০ টাকার নোটের ১০ টাকা, ৫০ টাকার নোটের অন্তত ৫ টাকা বাচ্চা দেওয়াই ছিল সংগত, কিন্তু কেন দেয় না! টাকায় টাকা আনলো কই, হতাশা ছাড়া! হতোদ্যম মলিন বালিশে টাকার চাষ বন্ধ করল।
শেষমেশ বুঝতে পারল, তার বালিশে হয়তো সমস্যা আছে। অসৎ কোনো ব্যবসায়ী কিংবা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বালিশ চুরি করে হলেও আসনে পারলে কেল্লাফতে। বালিশের গুণেই এদের অর্থবিত্ত ফুলেফেঁপে ওঠে।
সমস্যা হচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের বাসা-বাড়িতে পাহারায় থাকে পুলিশ-দারোয়ানরা। বালিশ দূরে থাক, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফুলের কেশর আনতে পারাও দুঃসাধ্য। তাই বলে হাল ছাড়েনি মলিন। এত দিনে বুঝে ফেলেছে, তাকে মলিন থেকে উজ্জ্বল করতে পারে ক্ষমতাবান একটি বালিশই। চাকরি কিংবা ব্যবসার পেছনে সময় নষ্ট না করে ব্রত নিয়েছে বালিশ চুরির। আগে-পরে একটা বালিশ মিলবেই!
দোকানপাটে বালিশ-কোলবালিশ কম নেই। সেগুলোর বাড়তি কোনো ক্ষমতা নেই। অবশ্য যদি থাকত, বালিশ বিক্রেতা ব্যবসা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই রাতদিন সুখস্বপ্ন দেখত। তাতে মলিনের লাভ হতো না। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে, ছিনিয়ে নিতে হবে ক্ষমতাধর একটি বালিশ। যে বালিশ হবে সুইস ব্যাংকের মতো অর্থবিত্তের আঁধার।
ভগবান বুঝি অবশেষে তার দিকে মুখ তুলে চাইলেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলো রূপপুরের অরূপ বালিশের গল্প। যে লোক তুলেছিল অপরূপ বালিশগুলো, সে নিশ্চয়ই এত দিনে বিরাট ধনী হয়ে গেছে। তার বালিশটা চুরি করতে পারলেই কেল্লাফতে। তখন উল্টো ডেল কার্নেগি বাছাধনকে জানিয়ে দেওয়া যাবে ধনী হতে কদিন লাগে!
পাবনার পথে রওনা দিল মলিন। সুপারভাইজারকে বলে রাখল, তাকে যেন বালিশপুরে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরিবহনকর্মী মলিনের কথায় ভ্রু কোঁচকালো, মুখে কিছু বলল না। বাসের বাতাসে তন্দ্রামতো এসেছিল মলিনের। হেলান দিয়েই চমৎকার একটা স্বপ্নও দেখল। অনেক বড় একটা বালিশের মালিক হয়েছে সে। বালিশটার এককোণা ছেঁড়া। ঝাঁকুনি দিলেই সেখান থেকে টাকা পড়তে থাকে। পড়তে পড়তে কাড়ি কাড়ি টাকায় ভরে যায় ঘর-বারান্দায়!
সুখস্বপ্ন ভেঙে গেলে মলিন বুঝতে পারল, সঙ্গে থাকা যৎকিঞ্চিৎ টাকা পকেটমারের কব্জায় চলে গেছে! কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে পাশের যাত্রীর ওপর চড়াও হলো ভাই, আমার টাকা কে নিল!
হাউকাউ বাড়তে না দিল সুপারভাইজার, বাসে থাবড়া দিয়ে ডাকল তাকে বালিশপুর নামেন।
এসে গেছে! খুশিতে টাকা হারানোর কথা ভুলে গেল মলিন। বাস থেকে নামামাত্র ছিনতাইকারীরা খুলে নিল তার শার্ট। নগদ টাকা না থাকায় দুইটা চটকানাও দিল।
কিছুক্ষণ পর হেরোইনচিরা কেড়ে নিল অবশিষ্ট প্যান্ট। প্রায় দিগম্বর মলিন দিনভর হাঁটল বালিশপুরের সন্ধানে। কেউই জানাতে পারল না কাক্সিক্ষত ঠিকানা! হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে ইট মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সে। এবার দেখল উল্টো স্বপ্ন বিশাল একটি বালিশ থেকে বেরিয়ে আসছে পারমাণিক বোমা। এগিয়ে আসছে তার দিকেই!
অলংকরণ : মানিক বর্মন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228