ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেতাল

শফিক হাসান
🕐 ২:৫২ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০১৯

গরম এলেই সবকিছু বেতাল হয়ে যায়! উল্টাপাল্টা দেখতে শুরু করে দবির উদ্দিন। তেমনটি হলো আজও! কাঁচাবাজারে পটোলের কেজি ১২০ টাকা শুনে চেতে গেল সে। গতকালই টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে, খুচরা বাজারে পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। বাজারে আসার সময় মা পইপই করে বলে দিয়েছেন ৫০ টাকার ওপরে যেন কোনো সবজি না কেনে। একদিকে বাজারের গরম অন্যদিকে প্রকৃতির গরম বৃষ্টি ঝরাচ্ছে শরীর থেকে। সবমিলিয়ে আউলা মাথায় দোকানদারের কলার চেপে ধরে সে ‘ফাজলামি করো মিয়া, পটোলে কি সোনার আস্তর দিছো?’

হকচকিয়ে যাওয়া দোকানিও কথার তুবড়ি ছুটিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তার হাঁসফাঁস করাই সার। ঠেসে কলার চেপে ধরে ‘কৃষক কেন পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না, মাঝখানে কারা অস্বাভাবিক মুনাফা লুটছে’ জাতীয় প্রবন্ধ উত্থাপন করে দবির। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখে মুহূর্তেই ভিড় জমে যায়। ব্যাগভরে বাজারের টাকা আনতে না পারা অক্ষম ক্রেতারা ইন্ধন দেয় পিডান হালা রে! সাহস কত, পটোলের কেজি ১২০ টাকা চায়!

দবিরের সাহস বাড়ে আরও। বলে, ‘সত্য করে বল, পাইকারিতে কত টাকা কেজি কিনেছিস?’ দোকানি গড়গড় করে আড়তের নাম বলে দেয়। পাইকারিতে তার কেনা পড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। ছুটে আসা আশপাশের দোকানদাররা বেয়াড়া খদ্দেরকে বাগে আনার চেষ্টা করে। ততক্ষণে ছুটে এসেছে গোটা পাঁচেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। একজন সাংবাদিক দবিরের কাছে জানতে চান ‘কী নিয়ে বচসা, কাইন্ডলি বলবেন? ৮টার সংবাদে দেখানো হবে!’

‘৮টার সংবাদ? সরকারি টেলিভিশন কই?’ অনেক কষ্টে দবির মিয়াকে বোঝানো হলো, সরকারি টেলিভিশনে গোলযোগের সংবাদ দেখানো হয় না। বরং আজ সকাল থেকেই জল-মাটি শীর্ষক অনুষ্ঠানে পটোল চাষের সহজ পদ্ধতি, পটোলের গুণাগুণ, দোলমার রেসিপি, বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও পটোল তোলার যুৎসই কানুন দেখানো হচ্ছে। ততক্ষণে এসে গেছে আরও কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরা ও দৈনিক পত্রিকার বাজার প্রতিবেদক। চ্যানেলের বুম জড়ো হলে দবির উদ্দিন বলে ‘বাজারমন্ত্রী শেষ কবে বাজার করেছেন! তিনি কি খোঁজ রাখেন নিম্নমানের পটোলের কেজিও ১২০ টাকা। অন্যদিকে কৃষকরা উৎপাদিতে পণ্যের মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে চার বছর ধরে আমার বিয়ে থমকে আছে। বউ পালবো কীভাবে সেই চিন্তায় আমার মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। এই দেখুন!’

পরদিন রাতেই দবিরের ডাক পড়ল বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে। ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে চাঁদাবাজির প্রভাব’ আলোচনা অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা সে। সেই চ্যানেলের সিইও বাজারমন্ত্রীর অবিশ্বস্ত সূত্রের আত্মীয় হলেও সম্পর্ক ভালো নয়। দবিরকে বলা হলো, সে যেন কোনো ক্ষমতাধরকেই ছেড়ে কথা না কয়। আলোচনাকালে তার তুখোড় যুক্তির কাছে সহ-বক্তারা কিছুই বলতে পারলেন না। কাউকে বলার সুযোগ না দেওয়ায় দবিরের সুনাম ছড়াল সুনামির আকারে। এরকম তুখোড় বক্তার আবির্ভাবে ধন্য ধন্য পড়ে গেল চারদিকে। কপাল খুলল দবিরের। প্রায় প্রতিদিনই সরকারি টেলিভিশন ব্যতীত বেসরকারি অনেক চ্যানেলে ডাক পড়তে থাকে। উপার্জনও খারাপ নয়। দবিরকে এখন বাজারে যেতে হয় না। কাঁচাবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজ উদ্যোগে বাসায় আনাস-তরকারি পাঠিয়ে দেয়। এমন বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় সে ভাবল, তিন বছর আগে যে পাত্রীটি দেখতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, সেখানে একবার ঢুঁ দেওয়া যায়। টেলিভিশনের পরিচিত মুখ, পাত্রীর বাবা রাজি হতেও পারেন। কিন্তু এখনো অনড় সুন্দরী পাত্রীর অসুন্দর বাবা। তাচ্ছিল্য করে বললেন, ‘কী আছে তোর, কোন যোগ্যতায় আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাস!’

দবিরও কম যায় না। আলোচকের ভঙ্গিমায় বলে, ‘আমার বাড়িতে এসি, আইপিএস সবই আছে। আপনার মেয়ে গরমে কষ্ট পাবে না!’

সেই রাতে টকশোর আলোচনায় দবির বলল উল্টো কথা ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎই যদি না থাকে, তাহলে বিদ্যুতের খাম্বাগুলোর কাজ কী? কাকপক্ষীর অবকাশযাপনের জন্য!’

অলংকরণ : মানিক বর্মন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper