ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মাস্টারপ্ল্যান

শিমুল শাহিন
🕐 ২:২৪ অপরাহ্ণ, মে ০৭, ২০১৯

তুমি আজকেও পিয়াজ আনোনি? রীতিমতো তেড়ে এলো রীতা! রুদ্রমূর্তি দেখে জলদি সাবান-তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম! আমি জানি, রীতার রাগ ভাঙতে খুব বেশি সময় লাগবে না, গোসল করে বের হতে হতে সে ভুলেও যাবে কী নিয়ে রাগারাগি করছিল! কিছুক্ষণ পরেই গোসল করে বের হলাম, প্রত্যাশিতভাবেই পরিস্থিতি অনুকূলে আছে প্রত্যক্ষ করলাম!

টি টেবিলের ওপর থেকে পেপারটা হাতে নিয়ে চোখ বুলোতে বুলোতে হঠাৎ গলা বাড়িয়ে বললাম, ‘রীতা, এক কাপ চা দেবে!’ বলেই নিজের জিভ কামড়ে ধরলাম ধুর, কী বোকামিটাই না করে বসলাম চা চেয়ে! আমার কথা শুনেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো রীতা! আবারও অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল, ‘লজ্জা করে না তোমার চা চাইতে? লাস্ট কবে চিনি কিনেছ মনে আছে?’

রীতার হাত থেকে একটু আগে না হয় রক্ষে পেয়েছিলাম ওয়াশরুমে ঢুকে, কিন্তু এবার কী করে রক্ষা পাওয়া যায় ভাবতে লাগলাম! উপায় না পেয়ে শেষমেশ প্রেমকালে পুরনো কৌশল প্রয়োগ করলাম! দুটি হাত ধরে টেনে পাশে বসালাম। চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘আরে পাগলী, আমি তো ইচ্ছে করেই চিনি কিনি না!’ চোখে চোখ রাখাতেই কি না, রীতার রাগ অনেকটা কমে গেছে!

শুধু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ইচ্ছে করে কেন না মানে?’ বললাম, ‘আরে আমার বউটা কম মিষ্টি নাকি! শোন, আমি যখন চা চাইবো তুমি শুধু পানি গরম করে টি ব্যাগটা দেবে আর আমার সামনে; সে চায়ে একটা আঙ্গুল চুবিয়ে দেবে কিংবা ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে দিলেও চলবে, সেই চা নিমিষেই মিষ্টি হয়ে যাবে!’

এ কথায় রীতার রাগ নিমিষে উধাও হয়ে রীতিমতো রোমান্সে রূপ নিল! অনেকটা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, ‘তুমি এমনভাবে কথা বলো, চাইলেও রাগতে পারি না!’ ওকে আরেকটু কাছে টেনে বললাম, ‘আমি তো সেটাই চাই! তুমি কখনো রাগবে না, শুধু ভালোবাসবে!’

রীতা আহ্লাদিত হয়ে বলল, ‘তা মশায়, পিয়াজ কেনেননি কেন? এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বলবেন না আমি তরকারিতে আঙ্গুল চুবালে পিয়াজের অভাব দূর হয়ে যাবে!’
আমতা আমতা করে বললাম, ‘আরে বোকা, পিয়াজটাও তো আমি ইচ্ছে করেই কিনিনি!’ রীতা ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কেন, কেন?’

‘খেয়াল করে দেখেছি, যখন পিয়াজ কাটো তোমার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরে! তোমার চোখের জল সইতে পারি না তাই পিয়াজ কেনা বাদ দিয়েছি!’ বোকা মেয়েটা আমার এমন ছলকথায় সব ভুলে গেছে। ও এখন চুপ করে আমার বুকে মাথা রেখে বসে আছে! মনে মনে ভাবছি, কী কী করলে খরচ আরও কমানো যায়!

ভাবছেন, আমি কিপটে একজন মানুষ? উহু, মোটেও নয়! রমজান মাস আসছে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে তাতে রমজানে জিনিসপত্রের দাম শুনলেই মূর্ছা যেতে হবে নিশ্চিত! সবকিছু ভেবেচিন্তে বুদ্ধিগুলো বের করেছি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য! পিয়াজ কেনা কমিয়েছি, চিনি বাদ দিয়েছি, সামনে মাছ-মাংস কেনাও বাদ দেব!

আমার মাস্টারপ্ল্যানটা কী জানেন? এসব কিপটেমি সহ্য করতে না পেরে একসময় রীতা রাগ করে ওর বাবার বাসায় চলে যাবে! রোজার মাসটা থাকবে ওর বাবার বাসায়, আমার অভ্যেস আছে কোনো রকমে চালিয়ে নেব ডিম আর আলু ভর্তায় পুরো মাসটা!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper