ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কম দামি বর

শফিক হাসান
🕐 ২:২০ অপরাহ্ণ, মে ০৭, ২০১৯

মূল্যবৃদ্ধির কারসাজিতে ঘাড়-কোমর একত্রে ভাঙে জানা ছিল না জহিরের। নতুন বিয়ের এমন জ্বালা জানলে কোন শালা পা দিত ফাঁদে! এর চেয়ে ঢের সহজ বসতি গাড়া চাঁদে! সমস্যা হচ্ছে, নতুন বিয়ের স্বাদ না নিলে ‘পুরনো বিয়ে’র প্রসঙ্গই বা কীভাবে পাড়বে!

বিয়ের নাম মুখে নেওয়ার পর থেকেই মূল্যসন্ত্রাসের বিষয়টি বুঝতে শুরু করে জহির। বিষয়গুলো বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজনের সামলানোর কথা থাকলেও সবটাতেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে তাকেই। কাউকে হয়তো টাকা দিতে হবে, বাবা পাকড়াও করলেন তাকে। অমুক জায়গায় অত টাকা লাগবে, জলদি টাকা দে! এসব করতে করতে যখন বর সেজে মুখে রুমাল গুঁজে স্টেজে বসেছে, তখনো বাবা কাছে এসে কানে কানে বলেছেন, ২০০ বোতল কোকাকোলার টাকা দিতে হবে! কনেপক্ষ থেকে ১০০ জন মেহমান আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তারা জানিয়েছেন, অনেক আত্মীয়স্বজন, ১০০-তে পোষাবে না, ২০০ জন আসবে! বাড়তি টাকার জোগান দিতে কিস্তি লোন নিতে হয়েছে শহর ব্যাংক থেকে।

বাবাকে টাকা দিতে অভ্যাসবশত পকেটে হাত দিয়ে দেখে, বিয়ের পোশাকের পকেট নেই! পকেট থাকলেও তাতে টাকা থাকত কি না, সেটা আরেক বিষয়। সব ভেজাল চুকিয়ে ১০ লাখ টাকার মোহরানার বউ মৌ যখন তার সামনে এলো, অথবা জহিরই নববধূর সামনে গেল বিপত্তির শুরুটা সেখান থেকেই। ভাবীদের পরামর্শে নববধূর জন্য বেশ ভালো টাকা দিয়ে স্বর্ণের টিকলি গড়ে এনেছিল সে। বাসর ঘরে প্রথম সাক্ষাতে এটা পরিয়ে দিতে গেলে মৌ ছোঁ মেরে নিল নিজ হাতে। বলল, ‘এখানে কত আনা স্বর্ণ আছে, খাদের পরিমাণ কত?’

টিকলি এবং বরের উত্তর কোনোটাই পছন্দ না হওয়ায় সে ছুড়ে মারল অদূরে। ঢুলির বেড়ায় ধাক্কা খেয়ে গতিপথ পাল্টাল আবার! জহির কোনোভাবে বলতে পারল ‘এটা কী করলে মৌ?’ প্রকৃতপক্ষে সে বলতে চেয়েছিল ‘এটা কী করলে বউ?’ ম এবং ব-এর দ্বন্দ্ব এবং জড়তা নেই নববধূর। খেঁকিয়ে উঠল সে ‘তুমি এটা কী করলে? জানো, আমার কোন বান্ধবীর বিয়েতে কত গহনাগাটি পেয়েছে?’

‘না। কীভাবে জানবো!’

‘কিছু না জেনেই আমাকে নিয়ে এলে এই ভাঙাবাড়িতে? বিয়ে, বউ এখন এত সস্তা হয়ে গেছে!’

জহির কল্পনায় নিজের কপালের দিকে তাকানোর চেষ্টা করল। দুর্মূল্যের এ বাজারে বিয়ে করতে চাওয়াই বোকামি হয়েছে। বাবা-মা আছেন চিরকেলে প্রথায় আটকে। চাইলেও সে দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি। নিরানন্দ বাসর কাটিয়ে পরদিন সকালে না-ধোয়া মুখেই ভাবতে বসল, অবস্থাটা এমন না যে মৌয়ের পরিবার তাদের চেয়ে কোনো অংশে এগিয়ে। তবে এত খাই কীসের! কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারে না জহির। বেলা চড়লে আশপাশের বাড়ির ছেলে-বুড়ো-বউরা এলো নতুন বউ দেখতে। জহির এবং বউ কাউকে দেখেই সন্তুষ্ট হলো না তারা। রঙ্গ-তামাশা জমল না। বিয়েবাড়ি নাকি পোড়োবাড়ি!

ঠাট্টার সম্পর্কের ভাবীরা জহিরের কাছে গিয়ে উল্টো থতমত খেল। তার নিমীলিত চোখ বলে দিচ্ছে, এ ক্লান্তি রাতজাগার নয়। নিয়মমাফিক পরদিন বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল জহির। বউ তার বাবা-মায়ের কানে কোন মন্ত্র দিয়েছে কে জানে সবাই গম্ভীর। একপর্যায়ে শ্বশুর রাখঢাক না করে বললেন, ‘আমার ভুলের মাসুল আমিই দেব। তোমার ভুলের মাসুল তুমি দিয়ে যাও।’

‘আমার কী ভুল?’

‘এই যে তুমি বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার আগেই আমাদের সর্বনাশটা করলে! যা হওয়ার হয়ে গেছে। দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা দিয়ে তুমি চলে যাও।’

‘এ ব্যবসা কবে থেকে শুরু করলেন?’

শ্বশুরপক্ষের সঙ্গে বরের হয়ে গেল একচোট। মৌ আড়ালে দাঁড়িয়ে মিচকি মিচকি হাসলো। মৌয়ের ছোট ভাইসহ কয়েকজন হন্যে হয়ে বেরিয়ে পড়ল ঘটক ‘পশু ভাই’য়ের খোঁজে। তার কাছে একটাই জিজ্ঞাস্য এত কমদামি পাত্র এ বাড়িতে কোন আক্কেলে আনলো!

অলংকরণ : মানিক বর্মন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper