ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জীবন্ত কার্টুন

হাফিজ উদ্দীন আহমদ
🕐 ১২:২২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০১৯

সন্ধ্যায় অফিস ফিরে একটু রসিয়ে কথা বলতে গিয়েই শামীম ঝামটা খেলো বৌ রেজিনার। আর কত বোবা হয়ে থাকবে? অনেক কিছু তো মেনে নিয়েছে। সারা দিন ঘানি টেনে এসে মনটা একটু শান্তি চায়। চায় বিনোদন, নরম হাতের স্পর্শ, দুটো মিষ্টি কথা। কিন্তু তা ভাগ্যে নেই। কাজের লোক দরজা খুলতে ড্রইং রুমে পা দিয়েই দেখে রেজিনা ৬ মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হিন্দি সিরিয়ালে ডুবে আছে। বাচ্চার মুখে দুধের একটা বোতল ধরা তবে নিপলটা বাইরে। দুধ ঝরে যাচ্ছে। সোফার নিচে পোষা বিড়াল তা চেটে খাচ্ছে। বৌ মগ্ন টিভি স্ক্রিনে।

রেজিনার কথার কোনো জবাব দিল না সে। দিলে ঝগড়া বাঁধবে। চুপ থাকাই শ্রেয়। বরং একটু চাঙ্গা হওয়া দরকার। কাজের চাপে অফিসের পত্রিকাটাও পড়া হয়নি। শামীম বুদ্ধি আঁটে, বউকে চায়ের জন্য পাঠাবে। বউ উঠে গেলে টিভির রিমোটের অধিকার পাবে। চা খেতে খেতে তারিয়ে তারিয়ে খবরটাও দেখা যাবে। সারাদিন ওটা তো রেজিনার কবলেই থাকে। কী এমন নেশা তাতে বোঝে না। তবে ঈদ, জন্মদিন এসব এলে টের পায় সিরিয়ালের ছোবল কী। নায়িকাদের নামের ড্রেস না দিলে মন ভার থাকে। আত্মীয়-স্বজনদের কাকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হবে সে উপদেশও আজকাল দেয়। অথচ ওরা বাড়িতে এলে বাহ্যিক সমাদরে গলে পড়ে- এত দিনে আমাদের মনে পড়ল! এসব কপটতা আগে ছিল না ওর।

: একটু চা খাওয়াও না!
ভাবল চা চাইলে রেজিনা শুধু চা নয়, সঙ্গে একটু নাস্তাও দেবে। উপরি পাবে রিমোট। মুহূর্তের জন্য টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে একটু অবাক হয়ে তাকাল রেজিনা।
: চা খাবে তো বল্লালের মাকে বললেই পারো। একটু শান্তিতে দেখতেও দেবে না নাটকটা?

খেঁকিয়ে উঠল রেজিনা। তারপর নরম হয়ে যেন অনেক অনুগ্রহ করছে এভাবে হাঁক ছাড়ল : এই বল্লালের মা, সাহেবকে চা দে।
পরক্ষণে স্ক্রিনে ডুবে গেল।

ক্লাস ফাইভে পড়া অনীক দূর থেকে লক্ষ করছিল সব। কাছে এসে বলল : আব্বু, তোমার মন খারাপ? নিউজ দেখবে, তাই না?
ও জানে বাবার খবর দেখা পছন্দ, কদাচিৎ খেলা। কিন্তু সুযোগই পান না। মা-ই আগলে রাখে টিভি সারাদিন। একদিন মা টয়লেটে, এই ফাঁকে বাবা সোফায় গ্যাঁট হয়ে বসে টিভি দেখছিল। হঠাৎ মা এসে চিলের মতো ছোঁ মেরে রিমোটের বোতাম টিপে পছন্দের চ্যানেলে গেল।

: আহ, একটু দাও না গো!
কাতর কণ্ঠে অনেক মিষ্টি করে মিনতি করেছিল সে মন ভেজাতে।
: অফিস ফিরে টায়ার্ড হয়ে এসেছ, এসব কে কী করল, কে কী বক্তৃতা করল, কে খুন হলো, কে ধর্ষিতা হলো দেখে মাথা খারাপ করার কাজ নেই। রেস্ট করো।
পানের বাটা হাতে রেজিনা আরও জাঁকিয়ে বসল টিভির সামনে। অনীক ছুটির দিনেও কার্টুন দেখতে গিয়ে মায়ের ধমক খায় : খালি কার্টুন আর কার্টুন! হোম টাস্ক শেষ করো!
চোখে জল নিয়ে দূরে সরে যায় সে।

‘আব্বু তোমার মন খারাপ’ প্রশ্নটা শুনে অজান্তেই তার চোখের কোণ ভিজে গেল। দেখে সান্ত¡না দিতে বাবার গায়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল অনীক।
: আমাকেও মা কার্টুন দেখতে দেয় না। আচ্ছা আব্বু, বলো তো ছুটির দিনে কার্টুন দেখা কি খারাপ?
শামীম উত্তর দেয় না। একটু থেমে ছেলেটা আবার বললো- শুধু নিজেই টিভি দেখবে। তুমি বলো না মাকে। একটু পরেই তো কার্টুন শুরু হবে।

সন্তানের আবদারে হঠাৎ চিবুক শক্ত হলো শামীমের। বলল- চিন্তা করিস না। তোকে আমি আজ জীবন্ত কার্টুন দেখাব।

কিছুই বুঝতে না পেরে হাঁ করে থাকল অনীক। শামীম কিচেনে ঢুকে একটু পরেই একটা কাগজের ঠোঙা হাতে ফিরল। এবার পা টিপে টিপে সোফায় বসা স্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল- তেলাপোকা! তেলাপোকা!

অনীক দেখল বাবা ঠোঙাটা উপুড় করে ধরেছে আর সেখান থেকে ঝপাৎ করে একটা বড় তেলাপোকা মায়ের পিঠের ওপর পড়েছে। বাবা তাহলে এটা জোগাড় করতেই কিচেনে গিয়েছিল! শামীমের চিৎকার আর পেছনে ঘাড়ের কাছে একটা বিশ্রী শিরশির অনুভূতি টের পেতেই দু’হাত লাফিয়ে উঠে মেঝেতে চিৎপাত হলো রেজিনা। মাকে জেরির মতো লাফ দিতে দেখে প্রথম ফিক করে হেসে ফেলেছিল অনীক। পরক্ষণেই ‘আমার পা, আমার পা’ বলে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল রেজিনা। হতভম্ব হয়ে পড়ল শামীম। কৌতুক এতদূর গড়াবে তা ভাবেনি। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। তিনি আশ্বস্ত করলেন- ভয় নেই। পা ভাঙেনি, তবে গোড়ালিটা খারাপভাবে মচকে গেছে। মাসখানেক বিছানায় রেস্ট করতে হবে।

এভাবে সে রিমোটটার দখল নিতে চায়নি। মন খারাপ হলো শামীমের। তবে ১ মাস সে নিশ্চিন্তে নিউজ, অনীক কার্টুন দেখতে পারবে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper