ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্রিটিশ আমলের কামান কাহিনী

আলম তালুকদার
🕐 ১:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০১৯

সেই ব্রিটিশ আমলের কথা-কাহিনী। যাদের জন্ম ব্রিটিশ আমলে তারা ত্রিকালদর্শী। তারা তিন পতাকার নিচে বসবাস করা নাগরিক। তাদের অনেকে পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন করেছেন। মূল গল্পের আগে একটু প্যাঁচাল পারি। আচ্ছা ব্রিটিশরা বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করতে কেন যেত? তার মানে তাদের দেশে কাজ ছিল না, বেকারত্ব দূর করার জন্য কিছু কামাই-রুজির জন্যই মূলত তাদের আগমন। আর হাবাগোবাদের দেশে এসে বেশ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এ দেশের কিছু লোভীজনের কারণে ওরা একেবারে রাজাসনে বসে যায়। ওরা ইন্ডিয়ায় এসে বুঝেছিল ‘ইন’ মানে ভেতরে ঢুকে ইনদিয়া চলে আসেন, আর ভারতের ভেতরে থেকে যান। কারণ ভারতে ভাত আছে ভার আছে আর ভাবে রত থাকলে মনের মতো শাসন-শোষণ চালানো কোনো বেসুবিধা নেই। এটা হলো মোদ্দাকথা!

 

তো সেই ব্রিটিশ আমলের কথা। তখন ভারতের ছিল না স্বাধীনতা। পরাধীন দেশের এক ধনী ব্যবসায়ী একবার তার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরে কামানের লাইসেন্স চেয়ে দরখাস্ত পেশ করেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তখন জেলা জজ, জেলা কালেক্টরসহ নানা কিছু। ওই আমলে এমপি-মন্ত্রীর চেয়ে জেলা হাকিমের চোটপাট ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি ছিল। ব্রিটিশ রাজ তাদের ওপর নির্ভর করেই ১৯০ বছর শাসন করে গেছে।

জেলা ম্যজিস্ট্রেট মি. টেনসন তার ডাক ফাইল দেখছিলেন। তিনি প্রতিটি চিঠি ভালো পড়ে চিঠির ওপরেই প্রয়োজনীয় আদেশ লিখে নিচে নামিয়ে দিতেন। একদিন ডাক ফাইলে এক অভিনব আবেদন পড়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে চুপ করে বসে চিন্তা করতে লাগলেন। কামান? মিনস কেনন? বাট হোয়াই? একজন নাগরিক কামান দিয়ে কী করবেন? যুদ্ধ করবেন? তা যদি না হয় তাহলে প্রদর্শনীর জন্য? তা হবে কেন? কিছুতেই বিষয়টা মেলাতে পারছেন না। এ দেশে এসে কত আজব কিছু যে দেখতে হবে আর শুনতে হবে একমাত্র মহান যিশু জানেন। তিনি একজন বাঙালি আইসিএস অফিসারকে ডাকলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো কামানের কয়টা অর্থ আছে? না কামানের অর্থ কামানই। কামান ফার্সি শব্দ। আগেকার রাজা-রাজড়ারা এটা ব্যবহার করত তাও যুদ্ধের সময়। এটা যুদ্ধ করার অস্ত্র। বাংলা ভাষায় একই বানানে শব্দের অনেক মানে আছে। যেমন পদ। পদ মানে পা, আবার গানের কলিও, আবার তরকারির পদ। কবিতার পদ। কিন্তু কামান তো কামানই। তো আবেদনকারীর নামটা দেখা হলো। শশীকান্ত শীল। আচ্ছা শীলেরা তো কামায়। মানে তারাও দাড়ি কামান। উহু ওই কামানে তো আর লাইসেন্স লাগে না। তা হলে ওই যুদ্ধ কামানই হবে। অনেক কথা, গবেষণা। শেষ পর্যন্ত আবেদনকারীকে অফিসে তলব করা হলো।

শশীকান্ত শীল এলেন, ডিএম সাহেবের সামনে বসলেন। তার এই উদ্ভট আবেদনের কারণ কী জানতে চাওয়া হলো। প্রথমে তো ভয়ে অস্থির না জানি কী অপরাধ করে ফেলেছেন। ডিএম সাহেবের কথা শুনে একটু স্বস্তি পেলেন।

প্রথমেই তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কামান খায় না পরে?
শীল মশাই তো ভ্যাকাচ্যাকা খান। যা হোক এবার তিনি বলতে থাকেন-সাহেব, গত বছর আমার মেয়ের বিয়ে ছিল। বাজারে চিনির আকাল। আমার তো মিষ্টি দরকার প্রায় দশ মণ। কিন্তু হালইরা বলল, কর্তা পারব না। কেন? চিনির আকাল। তবে ডিএম সাবের কাছে চিনি আছে। চিনির রেশনিং চলছে। এক সেরের বেশি চিনি সরকার বিক্রি করে না। ডিএম সাহেবের কড়া আদেশ। তো আমি আপনার কাছে কাকুতি-মিনতি করে দরখাস্ত দিলাম। আবার দরকার ছিল দশ মণ চিনির। আপনি দিলেন মাত্র এক সের। এ রকম আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে গেলে যেখানে দরকার হাজার টাকা সেখানে দেন মাত্র বিশ টাকা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দরকার এক মণ চাল সেখানে দেন মাত্র এক সের, দুই সের। এবার আমার একটা অস্ত্রের দরকার।

নিরাপত্তার জন্য। ভাবলাম যদি আমি পিস্তলের লাইসেন্স চাই তাহলে হয়তো ছোট একটা চাকুর লাইসেন্স দেবেন। এসব ভাবনা করে কামানের লাইসেন্স চেয়েছি। আমি জানি যে দশ মণ চাইলে যে কর্তা এক সের চিনি মঞ্জুর করেন সেই কর্তার কাছে বড় একটা কিছু না চাইলে ছোট একটা কিছুর লাইসেন্স পাওয়া যাবেই। কামান থেকে নামতে নামতে আপনি আর পিস্তলের নিচে নামতে পারবেন না। হাজার হলেও আপনাদের একটু হলেও চক্ষুলজ্জা থাকতেই হয়, স্যার! মি. টেনসনের আরও টেনশন বাড়ার আগেই নাকি ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলেন। শীলের কিল মার্কা কথা শুনে তাকে নাকি কামানের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য ফাইল পেশ করতে আদেশ দিয়েছিলেন।

শীলকে কামানের লাইসেন্স ইস্যু করে একটা বিপদে ফেলতে চেয়েছিলেন। ব্যাটা ফাইজলামি করে, কামানের লাইসেন্স চাই। পৃথিবীর কোনো দেশ এখন আর কামান বানায় না, বিক্রিও করে না। লাইসেন্স দিয়ে এক মাসের মধ্যে কামান কেনার জন্য আদেশ প্রদানের ইচ্ছাটা তার ছিল। কিন্তু এ আদেশ জারির আগে আচমকা টেনসনের বদলির আদেশ আসে। তারপর সে ব্যাপারটা ভুলে যান। ভুলে না গেলে শীল মহাশয়ের খবর ছিল।

 

 

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper