মিরকাত আলীর প্রেম
আবুল কালাম আজাদ
🕐 ১:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০১৯
ছুটির দিন। মিরকাত আলীর ঘুম ভাঙল ৮টায়। দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তার ভালো লাগল। অফিস ডে হলে এখনই তাকে ওয়াশরুমে দৌড় দিতে হতো। সে আবার চোখ বুজল। কিন্তু চোখে ঘুম এলো না। অনভ্যাস। চাকরিজীবনে প্রবেশ করার পর ৮টার পরে ঘুমানোর অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে।
মিরকাত আলী কিছু সময় এপাশ-ওপাশ করল। তাতেও আরাম পেল না। স্ত্রীকে এক কাপ চা দিতে বলল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মিরকাত আলী ভাবল, তার ভাগ্য ভালো। খুব ভালো একটা মেয়ে তার স্ত্রী হয়ে এসেছে। শান্ত স্বভাব। সংসারী। তার ওপর সুন্দরী।
অফিসের কলিগরা নিজেদের স্ত্রী নিয়ে অনেক সময় কথা বলে। তাদের কথা থেকে বোঝা যায় তারা বেশিরভাগই নিজের স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট না। কারও স্ত্রী বদরাগী। কারও স্ত্রী বেহিসাবি। কারও স্ত্রীর বাপের বাড়ির দিকে অতিশয় টান। আবার কারও স্ত্রীর টান শপিংয়ের দিকে। তাদের প্রত্যেকেরই ভালো লাগে অন্যের স্ত্রী। মিরকাত আলীর স্ত্রীর মধ্যে এরকম কোনো ব্যাপার নেই। সংসারজীবনে সে সত্যিই খুব সুখী। তারপরেও তার ভেতর না পাওয়ার একটা বেদনা আছে। প্রেম না পাওয়ার বেদনা। সে শুনেছে, যার জীবনে কখনো প্রেম আসেনি তার জীবন পরিপূর্ণ নয়। সে অপূর্ণ একটা জীবনযাপন করছে।
চা খেতে খেতে মিরকাত আলী ল্যাপটপ খুলল। ফেসবুকে ঢুকে গেল। তখনই ইনবক্সে এলো নীরা। নামটা খুব সুন্দর। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা কবিতা আছে ‘নীরার অসুখ।’ নীরা বলল, কী করছেন?
-ফেসবুকিং।
-কিছু লিখছিলেন নাকি পড়ছিলেন?
-না, সেরকম কিছু না। এই ছবি-টবি দেখছিলাম।
-ও....। কিছুক্ষণ আগে একটা ছবি আপলোড দিয়েছি। দেখেননি?
-তাই! আচ্ছা এখনই দেখছি।
নীরার ছবির প্রতি মিরকাত আলীর অসাধারণ ভালোলাগা। এত সুন্দর কোনো মেয়ে হতে পারে! মিরকাত আলীর স্ত্রী সুন্দর। কিন্তু নীরার কাছে কিছুই না। নীরার প্রোফাইলে গিয়ে নতুন ছবিটা দেখল। সমুদ্রের বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে দুদিকে দুই হাত প্রসারিত করে আছে। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সেই সঙ্গে ওড়নাটাও। নীরার বুকের দিকে তাকিয়ে মিরকাত আলীর বুকের ভেতর ধক করে উঠল। হেলাল হাফিজের একটা কবিতা মনে পড়ল-তোমার বুকের ওড়না আমার প্রেমের জায়নামাজ। তখনই তার স্ত্রী ঘরে এলো। বলল, কী করছো?
মিরকাত আলী তাড়াতাড়ি নীরার প্রোফাইল থেকে সরে গিয়ে ইতস্তত করে বলল, নাহ, না না, কিছু না!
মিরকাত আলীর স্ত্রী একটু হেসে বলল, আজকাল তোমার ভেতর কেমন পরিবর্তন দেখছি।
-পরিবর্তন! কেমন পরিবর্তন?
-কিশোর ছেলে প্রেমে পড়লে যেমন...।
-কী যে বলো না! ধ্যাত্তেরি।
মিরকাত আলীর স্ত্রী তার কাজে ফিরে গেল। মিরকাত আলী ফেসবুকে তাকিয়ে দেখে নীরা মেসেজ লিখেছে-এত দিন ধরে তোমার সঙ্গে পরিচয়, বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব বলব না, প্রেমই বলতে হবে। অথচ এখন পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার দেখা হলো না। আসো না, আজ একটু দেখা করি।
মিরকাত আলী লিখল, কখন আসব?
-এখনই আসো। একসঙ্গে নাশতা করব। ঘুরব। দুপুরের খাবার খাব।
-কোথায় আসব?
-মগবাজার মোড়ে আসো। আমি থাকব।
মিরকাত আলীর অস্তিত্বে অদ্ভুত এক অনুভূতি শিরশির করে উঠল। নীরা বলল, আমি নীল শাড়ি পরে আসব। হাতে থাকবে কালো চুরি।
-নীল শাড়ির সঙ্গে কালো চুরি?
-আমি তো আর দশটা মেয়ের মতো না। দেখবে কী অদ্ভুত...।
মিরকাত আলী লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমেই ওয়াশরুমে চলে গেল। সেভ করে চমৎকার একটা গোসল দিল। তারপর কালো প্যান্ট আর সাদার ভেতর স্ট্রাইপ শার্ট পরল। স্ত্রী বলল, কোথায় চললে?
-এক বন্ধু ফোন করেছে।
-বন্ধু!
-লক্ষ্মীটি ফিরে এসে তোমাকে সব বলব। এখন হাতে একদম সময় নেই।
মগবাজার মোড়ে এসে মিরকাত আলী ইতিউতি করে খুঁজতে লাগল নীল শাড়ি পরা সুন্দরী নীরাকে। যার হাতে কালো চুড়ি। কিন্তু সেরকম কোনো মেয়ে চোখে পড়ে না। একটু পর একটা লোক এসে দাঁড়াল তার সামনে। গায়ের রং কুচকুচে কালো। গায়ে নীল জামা। লোকটা বলল, নীরাকে খুঁজছেন?
-আপনি কীভাবে জানেন?
-খুঁজছেন কি না তাই বলেন।
-জি, নীরাকে খুঁজছি।
-আমি নীরা।
-নীরা! মিরকাত আলী চমকে দূরে সরে গেল। লোকটা বলল, সত্যি বলছি, আমি নীরা। নীল শাড়ির বদলে নীল জামা। কালো চুড়ির বদলে কালো ব্রেসলেট। আর এই কালো...। থেমে গিয়ে সে কালো একটা পিস্তল বের করল।
মিরকাত আলীর মুখে তখন ভাষা নেই। নীরা বলল, মানিব্যাগটা দিন ঝটপট।
আগের দিন বেতন হয়েছে। পুরো টাকাটাই এখনো মানিব্যাগে রয়ে গেছে। মিরকাত আলী শূন্য চোখে তাকিয়ে রইল।
নীরা বলল, মানিব্যাগ দিন, আর সেলফোন। আর এক মিনিট দেরি করলে...।
মিরকাত আলী হেঁটে হেঁটে বসায় ফিরল। স্ত্রী অনেক প্রশ্ন করল। কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গান গাইতে লাগল-এ কেমন ভালোবাসা কে জানে/কী ভেবে গো ব্যথা দিলে এ প্রাণে...।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228