সুনীতি নির্বাসনে দুর্নীতি নির্বাচনে
শফিক হাসান
🕐 ৪:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৫, ২০১৯
সুনীতি-দুর্নীতি দুই বোন। সুনীতি নিয়ম মেনে চলে, সততাকে প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে দুর্নীতি একটু ইয়ে, সবসময় উল্টো স্রোতে চলতে পছন্দ করে। এ নিয়ে দুই বোনের মনোমালিন্যও হয়। বোনকে তো ফেলা যায় না, বাধ্য হয়ে সুনীতি সব মেনে নেয়। অপেক্ষা করে, দুর্নীতি একদিন সঠিক পথে ফিরবে।
দুই বোন একদিন ঠিক করল, রাতে হেঁটে হেঁটে শহরটাকে কাছ থেকে দেখবে। রাস্তায় নেমে সুনীতি অবাক হলো, দুর্নীতির হেলদোল নেই। এত যানজট, এত কোলাহল মাঝরাতেও! দূরে দেখা গেল, একটি মেয়েকে ঘিরে তিন-চারজন পুরুষের জটলা। ঘুমিয়ে রয়েছে ছন্নছাড়া কয়েকটি শিশু-কিশোর, কাষ্ঠনির্মিত ভিক্ষার গাড়িতে ঘুমিয়ে ভিক্ষুকরা।
দুজনে এগোলো সামনে। বিলাসবহুল একটি গাড়ি পড়ে আছে রাস্তায়। সুনীতি উঁকি দিল, ভেতরে কেউই নেই! অবাক হওয়ার আগেই দুর্নীতি উত্তর দিল, ‘দুদকের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে, তাই কেউ কেউ এভাবেই গাড়ি ফেলে দিয়ে দায় এড়াচ্ছে!’
অবাক হতেই হলো সুনীতিকে-‘তাই নাকি! তুই কীভাবে জানলি?’
‘আমার গাড়িটাও ফেলে দিয়েছি!’
‘দুদকের লোকজন তোকে চেনে?’
‘চিনবে না কেন? দুদকের কালো কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। পাওনা মেটাই নিয়মিত!’
সুনীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে-‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমনটা দেখেছিলাম। অনেকেই সম্পদ ফেলে পালিয়েছে, অথচ সুষম বণ্টন হলে দেশের এমন বাজে পরিণতি হতো না!’
বিরক্ত হলো দুর্নীতি-‘সেটা কখনো হয় নাকি! ওরা ছোট বলেই আমরা বড়! সুষম বণ্টনে সমাজ টিকবে কীভাবে!’
সুনীতি বলল, ‘ওই সময়টা খারাপ ছিল না। গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি বলেই...!’
‘গণতন্ত্র ভালো জিনিস! এটাই আমাদের টিকিয়ে রেখেছে।’
‘ভালো জিনিসের অপব্যবহারে সংজ্ঞাটাই পাল্টে যাচ্ছে। মানুষ হবি না?’
‘দেখিসনি গ্রামে আব্বার নামে স্কুল করে দিয়েছি। সেখানে পড়াশোনা করে কত ছেলেমেয়ে মানুষ হচ্ছে।’
‘না জানি বাবার আত্মা কত কষ্ট পাচ্ছে। জীবদ্দশায় তিনি দুর্নীতির টাকায় স্কুল করতে দিতেন না।’
‘তুই তো আচ্ছা বোকা! হুদা আদর্শ নিয়ে পড়ে আছিস বলেই তুই ভিখারি!’
‘নিঃস্ব নই, সততাই আমার সম্পদ!’
দুষ্টুমতি বোনের সঙ্গে যুক্তিতে পেরে ওঠে না সুনীতি। তার কথায় দুর্নীতি ব্যঙ্গ করে হাসে।
আরেকটু হাঁটতেই আকাশছোঁয়া একটি ভবনের সামনে দাঁড়ায় দুজন। দুর্নীতি বলে, ‘ভবনটা কার জানিস?’
‘না। কীভাবে জানবো!’
‘আমাদের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক মন্ত্রীর। বাড়িটা কিন্তু অপরিচ্ছন্ন টাকায় করা।’
‘তাহলে তিনি কী করে এই পদ অলঙ্কৃত করেন?’
‘বোকা ও চালাকের পার্থক্য এটাই।’ তারা আসে একটি বস্তির সামনে। ততক্ষণে দুর্নীতি ছদ্মবেশ নিয়ে পুরুষে রূপান্তরিত হয়। তার এক হাতে অনিষ্টের প্রতীক ছোরা-যেটা অদৃশ্যমান, ডান হাতে দৃশ্যমান ফুল, মুখে কেলানো হাসি। কাকে যেন সে ফোন করে। মুহূর্তেই চলে আসে ১০০ ট্রাক চাল ডাল তেল নুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। দুর্নীতির ডেকে জেগে ওঠে বস্তিবাসী। কর্মিবাহিনী তাদের হাতে তুলে দেয় খাদ্যসামগ্রী।
একজন কোত্থেকে যেন এনে দেয় কাঠের তৈরি উঁচু মঞ্চ। সেটার ওপর দাঁড়িয়ে পঙ্গপালের মতো আসা হাজার হাজার ভুখা নাঙ্গা মানুষকে লক্ষ করে হাত নাড়ে দুর্নীতি। বলে, ‘শোনেন বস্তিবাসী, আমি ঘুমিয়েছিলাম। আপনার কষ্টের কথা ভেবে চলে এলাম এখানে!’
ততক্ষণে চলে এসেছে বেসরকারি টেলিভিশনের অসংখ্য ক্যামেরা, সাংবাদিককুল। মহান কীর্তি ধরে রাখার জন্য অনেকেই শুরু করে ফেসবুক লাইভ। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে দুর্নীতি বলল, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হব। মানুষের দুঃখ লাঘব করার ব্রত নিয়েছি।’
সুনীতি ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খায়। খাওয়া হজম হলে ফস করে বলে ওঠে-‘এখন ক্ষমতায় যারা আছেন তারাও জনপ্রতিনিধি। তাহলে বস্তির সংখ্যা বাড়ে কেন?’
দুর্নীতির উচ্চকণ্ঠ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের তোড়জোড়ে সুনীতির সেই স্বর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যায়। সুনীতি লোকালয় থেকে অরণ্যে প্রবেশ করে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228