ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্লাষ্টিক বই সার্জারি

শফিক হাসান
🕐 ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

বইমেলা সুবিধার জায়গা নয় তত্ত্বটি শ্যামলের মনে উদয় হওয়ার দিন থেকেই নিরাপদ দূরত্ব রাখার চেষ্টা করল। তেমন লাভ হলো না। বইমেলায় যেতেই হচ্ছে তাকে, বউ খুঁজতে! বাবা-মা লন্ডনপ্রবাসী পাত্রী ঠিক করে রেখেছেন, সে দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে বাংলা বলতে পারে না। ইংরেজির তুবড়ি ছোটায়। পরীক্ষায় ইংরেজিতে সাড়ে বত্রিশ নম্বর পাওয়া শ্যামলের আশঙ্কাটা এখানেই। বাতচিত চালাতে না পারলে ঘরে-বাইরে লজ্জায় পড়তে হবে। আপত্তি জানিয়ে বাবা-মাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ মাসেই পাত্রী খুঁজে বের করবে।

লোকমুখে শুনেছে পাত্রী দেখার ভালো জায়গা বইমেলা। অনেকে বউমেলাও বলে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি এখানে বউরাই আসে ইতোমধ্যে বউ হয়েছে এবং যারা অন্যের বউ হবে! প্রথম দিনেই আলো দেখল সে। একটি স্টলে ব্যানার সাঁটানো প্রিয়জনকে বউ উপহার দিন। বউয়ের খোঁজ করলে স্টলের সুন্দরী সেলস গার্ল রেগেমেগে আগুন হয়েছে; পরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিজের ফোন নম্বর দিতে চেয়েছে। ততক্ষণে প্রকাশক স্টলে হাজির। প্রুফ রিডারকে ফোনে ঝাড়ি দিলেন, ‘বাংলাবাজার আয়, তোরে আইজ বানান শিখামু!’

তারপর শুরু হলো নতুন আপদ। বইমেলায় যার সঙ্গেই দেখা হয়, সে-ই নাকি লেখক! তাদের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, মহাকাব্য প্রকাশিত হয়েছে। সরাসরি না বললেও আহ্বান থাকে বই কেনো, দেউলিয়া হও! বুঝতেই চায় না, ইংরেজিতে ফেল ছাত্রের বাংলা বই পড়ার দরকার নেই। ‘এক সপ্তাহে ইংরেজি শিখুন’ জাতীয় বই-ই যথেষ্ট। বউয়ের খবর নেই, অথচ বইয়ের চাপাচাপি। বইমেলায় একদিন নারীদের গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় পুলিশের ধমক খেয়েছে, নারীরা ইতর-জ্ঞানে অপাঙ্গে তাকিয়েছে। ভেতরে কারও আলাপ জমানোরও উপায় নেই; মেয়েরা দলবল বেঁধে আসে। সবার সঙ্গে খাতির জমানোর রুচিও থাকে না।

গত রোববার বৃষ্টি হলো বইমেলায়। শ্যামল আশান্বিত হলো, বৃষ্টিভেজা বইমেলায় কাদাপানি, স্টলগুলোর দুর্দশা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ পাতা দেখে নিশ্চয়ই মেয়েদের মন নরম থাকবে। মওকা বুঝে ফিটিং দিতে হবে। হলো বিপরীত। যে বন্ধুরা এত দিন তক্কে তক্কে ছিল বই বিক্রির জন্য, তাদের তিনজন হাতে ধরিয়ে দিল বই। বলল, ‘তোর টাকার জন্য চিন্তা করি না। পরে দিস।’

ভাষা জাদুঘরের সামনের জলাশয়ে বইগুলো ছুড়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই, বইবিদ্বেষী তকমা দিয়ে বসতে পারে কেউ। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বইমেলা থেকে বেরিয়ে এলো সে। বইগুলো আলগোছে ফেলে দেয়, কুড়িয়ে নিয়ে পুলিশ পড়ুক! বেরিয়েই সোজা চিকিৎসকের চেম্বারে।

ডা. কলিমুল্লাহ মন দিয়ে শুনলেন শ্যামলের সমস্যার কথা। তাকে কেমন যেন গম্ভীর দেখাল। বললেন, ‘সামান্য ক’টা টাকার বই কিনবেন না বলে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে চেহারাই পাল্টে ফেলবেন? হাজার গুণ বেশি টাকা খরচ করে!’

‘যত লাখ টাকাই লাগুক, দেব। বই কিনবো না!’

শ্যামলের জেদে হেসে ফেললেন ডা. কলিমুল্লাহ পিএইচডি ‘বই কিনলে ক্ষতি কী?’

‘ওসব ভালো লাগে না। আমার ভালো লাগে ফেসবুক আর মেয়েদের বুক!’

বলেই জিহ্বায় কামড় দিল সে। ভুল জায়গায় মনের কথা বলে ফেলেছে!

দ্বিতীয় সাক্ষাতে ডাক্তারের সঙ্গে খরচাদির বিষয়ে আলাপ হলো। বিদায় নেওয়ার আগে তিনি বললেন, ‘আমারও একটি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। কমিশন বাদ দিয়ে ১৫০ টাকা দাম। নিতে পারেন।’

আঁতকে উঠল শ্যামল, ‘আপনার কাছে কেন এসেছি, বোধহয় ভুলে গেছেন!’
‘ভুলে যাইনি। কারও বই কিনবেন বলে বলে দুই সপ্তাহের জন্য চেহারা পাল্টাতে এসেছেন। আমি তো আপনার উপকারী বন্ধু। আমার কবিতাগুলো আপনাকে আনন্দ দেবে!’

‘ক্ষমা করবেন, প্লিজ!’

ডা. কলিমুল্লাহ জানেন কীভাবে রোগী এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বশ করতে হয়। গলায় গ্লিসারিন ও কান্নার জলের মিশ্রণে বললেন, ‘এ বই করতে খরচ করতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। কোনো ওষুধ কোম্পানিই স্পন্সর করেনি। বরং তারা আমাকে ঢাকা-লন্ডন ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট দিতে চেয়েছে।’

শ্যামলের বিস্ময়াকুল চোখের দিকে তাকিয়ে কলিমুল্লাহ পিএইচডি আবার বললেন, ‘টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করেছি বলে মুরগি লেখক অপবাদ পেতে হয়েছে! বন্ধুরা বলেছে, আমি নাকি টাকার জোরে লেখক! চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, বিনিয়োগ তুলে প্রমাণ করব, আমি সত্যিকারের কবি!’

তাতেও মন গললো না শ্যামলের। বই না কিনেই প্লাস্টিক সার্জারি করালো সে। অপারেশনের পর আয়নায় তাকিয়ে চেতে গেল সে; নায়কোচিত চেহারার বদলে কিম্ভুত মুখ কেন?

ডা. কলিমুল্লাহ আরও চেতা, ‘আপনি কী করলেন! কিনেছেন আমার একটিও কাব্যগ্রন্থ?’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper