ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক আড্ডার কথা

অমল সাহা
🕐 ১২:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯

সন্ধ্যা বেলায় আড্ডা দেওয়ার জন্য আমার এক অধ্যাপক বন্ধুকে কল করলাম। সারা দিন পর সাধারণত সন্ধ্যা বেলায় আড্ডা দিই আমরা। সেই আড্ডায় নানা ধরনের জ্ঞানগর্ভ বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশ উদ্ধার থেকে সুকৌশলে বউয়ের বায়না থেকে উদ্ধার পাওয়ার বিষয় অব্ধি তুমুল আলোচনা হয়। তবে যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত আলোচনা আঠারোশ’ শতকের শিল্প বিপ্লব থেকে রাশিয়ার পেরেস্ত্রইকা হয়ে গণমানুষের ভোটের অধিকারে এসে ইদানীংকার মানুষের মূল্যবোধের ক্ষয়প্রাপ্তির ফলে বিস্তর আফসোসের পর ঘুরে-ফিরে মেয়ে মানুষের নানা পুলকিত বিষয়ে এসে ঠেকে!

আলোচনা জমে ওঠে। আমরা এক চা’র দোকানে বসি। কালামের চা’র দোকান। কালামের দোকানের বেশির ভাগ খদ্দেরই হলো বাজারের কুলিকামিন মানুষ। তবে একটা অবাক করার বিষয়, আমরা আলোচনা করতে করতে চায়ের পর চায়ের কাপ উড়িয়ে দিই। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে গত কুড়ি বছর ধরে চা বানিয়েও কালাম মিয়া চায়ের স্বাদ পোড়া দুধের পাতিল ধোয়া পানির স্বাদের ওপর তুলতে পারেনি। কালামের চা খেলে ঘোড়ায়ও বমি করবে। কিন্তু আমরা করি না। কারণ হয়তো ঘোড়া আমাদের মতো মেয়েমানুষ নিয়ে আলোচনা করে না। আমাদের যেমন ঐসব নিয়ে আলোচনা করার সময় বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হয় এবং আমরা জগৎ সংসার ভুলে যাই তাই হয়তো কালামের অতি বিস্বাদ চায়ের স্বাদ সোয়াদ আমাদের জিবের এন্টিনার ওপর দিয়ে চলে যায়। বউয়ের সঙ্গে তো সব বিষয় শেয়ার করা যায় না। সেসব বিষয় এখানে এসে শেয়ার করা যায়। বলতে গেলে কালামের চায়ের দোকান অনেকটা জ্বালা জুড়ানোর জায়গা। তাই অষ্টপ্রহর কালামের চায়ের চুলা জ্বলতে থাকে।

আমাদের জন্য কালাম একটা নির্দিষ্ট টেবিল চেয়ার ঠিক করে রেখেছে। বলা বাহুল্য সেটা অতি সাধারণ কাঠের টেবিল চেয়ার। এ কাঠের টেবিল চেয়ারের দিকে তাকিয়ে একটা বেসরকারি কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ আমাদের বন্ধু জামান প্রায়শই বিরাট এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, হা কাঠের টেবিল চেয়ার রে! কী পার্থক্য তোর আর তার মধ্যে? আমি একদিন উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার, কাঠের টেবিল আর চেয়ার নিয়ে তুমি কী বলো? মাথামুণ্ডু তো কিছুই বুঝি না।

অধ্যক্ষ বেশ গম্ভীর হয়ে জবাব দেয়, মাথা থাকলে তো বুঝবে।

আমি মাথায় হাত দিই, আসলেই মাথা আছে কি না! মাথার জায়গায় মাথা আছে। আবার প্রশ্ন রিপিট করলে জবাব দেয়, শোন কাঠের টেবিল চেয়ারগুলোকে দেখলেই আমার বউয়ের কথা মনে পড়ে।

আমরা আড্ডার সভ্যরা অবাকের উপর অবাক! বলা যায় অবাকেস্ট। সুপারলেটিভ ডিগ্রি। কাঠের টেবিল দেখে বউয়ের কথা মনে পড়ে! এমন কথা তো জীবনেও মনে হয়নি। আমি একবার টেবিল চেয়ারের দিকে তাকাই। তারপর চোখ বুজে বউয়ের কথা মনে করতে চেষ্টা করি। উহু! বউয়ের মুখ তো মনে পড়ছে না। ব্যাপারটা জানার জন্য উৎসুক হই। আমাদের উৎসুক দৃষ্টি দেখে জামান অধ্যক্ষ বলে, আরে বউয়ের হাতে হাত রাখলে মনে হয় আম কাঠের টেবিলের পায়াটা ধরেছি। চেয়ারের হাতলেও একই অনুভূতি।

পরম জ্ঞানী যেটা মাঝে-মধ্যে চরমও হয়ে ওঠে সেই মিয়াচান ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের বিয়ে হয়েছে কদ্দিন হয়েছে?
অধ্যক্ষ বিরক্ত হয়ে বলে, দিন? আরে আমরা তো বিয়ের ২৫ বছর পার করলাম।
মিয়াচান ডাক্তার বেশ হতাশ ভঙিতে বলে, তাহলে তো ঠিকই আছে। বহু আগেই তোমার এ অনুভূতি হওয়া উচিত ছিল। জিজ্ঞেস করে দেখো গিয়ে তোমার বউয়েরও একই মনে হচ্ছে। তোমার হাত ধরলে তার মনে হচ্ছে, আম কাঠের চ্যালা ধরেছে।
সত্যি? অধ্যক্ষ জানতে চায়।
সত্যি না কী আবার? আমি কি মিথ্যা বলার মানুষ?
এবার আমাদের অধ্যাপক বন্ধু হা হা করে অট্টহাসি দিয়ে মিয়াচান ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, তুমি তো মিথ্যার রাজা।
আমি? মিয়াচান ডাক্তার অবাক হয় বেশ।

তা না তো কী? তুমি রোগীকে বলো, ক্যান্সার সেরে যাবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর আমাদের কও, সর্দি, কাশি, চুলকানি, আমাশয় ছাড়া আসলে আর কোনো রোগের ওষুধ নাই। বাকিগুলোর ওষুধ খাইলেও চলে, না খাইলেও চলে।

মিয়াচান মাথা নাড়ে, হুম, ঠিকই কইছো, আসলে তাই। কোনো মরণ রোগের ওষুধটা আছে কও তো দেখি? ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক... তাই মিথ্যা আশ্বাস দিই মানুষরে। মিথ্যা কথা বলি।

এভাবেই আড্ডা এগিয়ে চলে...।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper