ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শীতের রাজ্যে কাতুকুতু

আলম তালুকদার
🕐 ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

একবার ক্লাসে এক শিক্ষক ছাত্রদের প্রশ্ন করেছেন, ঋতু কত প্রকার ও কী কী? এক ছাত্র ঝটপট বলে দিল, ঋতু ছয় প্রকার গ্রীষ্ম, মা, বাবা, কাকা, শীত ও মামা! যদি তাই হয় তাহলে দেখা যায়, গ্রীষ্ম ও শীত বাদে সবগুলোই আপন রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ! কারণ, বর্ষা তার মা, শরৎ তার বাবা, হেমন্ত তার কাকা আর বসন্ত তার মামা! বেচারার গ্রীষ্মে মেজাজ গরম হয়ে গেল। ঠিক আছে আমি যখন কেউ নই তাহলে দেখ কেমন মজা দেখাই! তখন থেকে গ্রীষ্ম তার গরম মেজাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিগ্রিতে দেখিয়ে যাচ্ছে! আর শীত! প্রথমেই ‘শি’! ইংরেজি শির মতো শিং বাঁকিয়ে ১০ মাস তাকিয়ে থাকে কখন তার খেলা শুরু করবে! ‘শীত পায় ভীত তায়’!

কবি কি এমনি এমনি লিখেছেন? মোটেই না! একবার এক রসিকজন আরেক রসিকজনকে প্রশ্ন করেছে, আচ্ছা বলত মূলধন কাকে বলে? তো রসিকজন রসিকতাপূর্ণ জবাব দিলেন, ‘তীব্র শীতের সময় বেলা ওঠার আগে যদি কোনো পুরুষ পুকুরের পানিতে গোসল করতে নামে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার ধনের যে রূপ আকার ধারণ করে তাহাকে ‘মূলধন’ বলা হয়!’

শীতকালে অনেক সুবিধা ভোগ করা যায়। বিশেষত এ সময়টা বিবাহ করার সময়। শাকসবজির সময় ফুলের মৌসুমও বটে। এ সময় গাছ ন্যাড়া হয়ে যায়, মানুষের চেহারায় শুকনা শুকনা ভাব আসে। আবার কাকের চেহারার তেলতেলা ভাব আসে। তো কাকের কথাই যখন এলো, তখন একটা জোকস বমি করে দেই। একবার এক কাক গাছের উঁচুডালে বসে আরাম পোহাচ্ছিল। ওই সময় গাছের নিচ দিয়ে এক খরগোশ যাচ্ছিল। কাকের এ মহা আরাম আরামভাব দেখে বলল, তুমি আরাম করতে পারলে আমি পারব না কেন? কাক বলল, অবশ্যই পারবে। তুমি ইচ্ছামতো আরাম করো না কেন? কেউ তোমাকে কিচ্ছুটি বলবে না। তো খরগোশ কাকের কথায় সাহস করে গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসে আরাম পোহাতে থাকে। এদিকে চালাক শিয়াল সুযোগমতো খরগোশকে খপ করে কামড় দিয়ে ধরে ফেললে, করুণভাবে খরগোশ কাককে বলতে থাকে, এটা কী হলো? তোমার কথায় একটু আরাম করতে গিয়ে এখন দেখি আমার জীবন যায়। চালাক কাক তখন দার্শনিক বাণী দিয়ে বলল, ‘আরে বেটা যারা ওপরে থাকে তারাই কেবল আরাম করতে পারে’! এ শীতে একজন মানবদরদি আহ্বান জানিয়েছে। সেটা আপনাদের জানানো আমার কর্তব্য ‘এ তীব্র শীতে আসুন নিজে বিবাহ করি, নিজে গরম থাকি এবং অন্যকে গরম রাখতে সাহায্য করি’।

যারা অলস তারা শীতকালে গোসলের ধার ধারে না। তারা বডি স্প্রে করে চালিয়ে যায়। তো এমন এক অলস ছিল যে স্প্রে তো করতই না ভুলেও পানির কাছে কিনারে যেত না। শরীরের গন্ধের জন্য পরিবার থেকে বহিষ্কার হয়েছে। সে এক বট গাছের নিচে এক খুপরিতে থাকে। এক দিন এক বাউণ্ডুলে পাঁঠা ওই ডেরায় শীত থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল ১০ মিনিটের মধ্যে ওই পাঁঠা ডেরা থেকে বের হয়ে ভোঁ দৌড়! নিজের বোঁটকা গন্ধ ওই অলসের গন্ধের কাছে হার মেনেছে! আমাদের দেশের শীত আসলে তেমন ভয়ঙ্কর সুন্দর শীত নামে না। ইউরোপে কোনো কোনো দেশে মাইনাস শীত কোনো বিষয় না। শীতের সময় বরফপাতের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। বাতাস জমে যায়। তো জমা নিয়ে একটা জোকস গলে এসেছে। একবার গায়ক হেমন্তকুমার হিমালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে বন্ধুরা ছিল।
যেখানে হেমন্ত সেখানেই গান। তিনি বেশ কয়েকটি গান গেয়েছিলেন, কিন্তু কেউ সে গান শুনতে পারেনি। কারণ? মুখ থেকে কথা বের হতে না হতেই কথা ও সুর জমে গিয়েছিল! হেমন্তবাবুরা তিন দিন পর হাওড়া রেলস্টেশনে নামার পর সেই গানের কথা ও সুর জমাটাবস্থা থেকে গরমের আঁচে আস্তে আস্তে মুক্ত হযে সরব হয়ে হাওড়াবাসীদের বিনা টাকায় গান শোনার বিরল সৌভাগ্য বিতরণ করেছিল।

বিয়ে করতে যেমন সাহস লাগে তেমনি শীতকালে গোসল করতেও সাহস লাগে। এক সাহসী ডায়লগ ‘ঐ ঠাণ্ডা তুই আমার দেহ পাবি, মন পাবি না’! অনেকে রাতে টয়লেটে যাওয়ার ভয়ে পানি পান থেকে বিরত থাকে! তো একবার এক যুবক চাকরির জন্য নির্বাচনী বোর্ডের সামনে হাজির হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রশ্ন একটাই নিজের ওপর কন্ট্রোল কতটা? এক চালাকবাজি বলল, ‘স্যার শীতের রাতে আমার হিসু পেলে রাতে না উঠে একবারে সকালে করি। আমার নিজের ওপরে সাংঘাতিক কন্ট্রোল!’ চালাক বাবাজির চাকরি হয়েছিল বলে জানা গেছে। যারা একটু আদুরে তারা এ শীতে অতি সাবধান কারণ ‘আপনি চোখের জল মোছার জন্য অনেককেই পাবেন, কিন্তু নাকের জল মোছার জন্য কাউকে পাবনে না! কাজেই ঠাণ্ডা হতে সাবধান, সর্দি হতে ঠাণ্ডা’! শীতের দিনে সুবিধা যেমন আছে অসুবিধাও আছে।

পিকপকেটারে জন্য অসুবিধা, কারণ, লোকেরা সব সময় পকেটে হাত দিয়ে রাখেন। শীতবস্ত্র ব্যবসা বেশ জমে। টাটকা সবজি সহজলভ্য হয়। মুলার চাষ হয়। তাতে আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়। ঘরে ঘরে গ্যাস কারখানা বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়তে পারে। শীতকালে মনে রাখবেন, এ কালে অনেকজনে স্নান করার আগে ‘সাইলেন্ট মুড’ থাকে, স্নান করার সময় ‘লাউড মুডে’ আর করার পরে ‘ভাইব্রেট মুডে’ থাকে। একজন বলছে যাই বলেন তাই বলেন, শীতকাল বড়ই ভালো কাল, লেপের নিচে ফোন ঘাঁটাঘাঁটির মজাই আলাদা!

হাত ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। চিন্তাও জমে যাচ্ছে। তাই আর চালাই না। তার চেয়ে চলুন লেপের নিচেই পালাই না! তবে কথা শেষ করার আগে একটা বাস্তব কথা বলে শেষ করি। এক ফাঁকিবাজ বলছে, ‘শীতকালে আমার গোসল করতে মাত্র এক মিনিট লাগে, কিন্তু গোসল করব কি করব না এটা ভাবতে ভাবতেই দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায় আর কি!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper