ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাওয়া বদল

শফিক হাসান
🕐 ১২:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮

যে কোনোভাবে নাম ছড়ানোকেই যদি খ্যাতি গণ্য করা হয়, রমিজ মৃধার চেয়ে খ্যাতিমান মানুষ বাংলাদেশে বর্তমানে দ্বিতীয়টি নেই! প্রায় প্রতিদিনই কাগজে তার ছবি ছাপা হচ্ছে, কোনো না কোনো চ্যানেলে সাক্ষাৎকার প্রচার হচ্ছে। রমিজ মৃধাও অকাতরে বলেই যাচ্ছেন, বেয়াড়া সাংবাদিকরা কোনো প্রশ্নেই তাকে আটকাতে পারছে না। প্রশ্ন করার আগেই যেন উত্তর হাজির!

১০ দিকের কোনো দিকই তার কাছে অগুরুত্বপূর্ণ নয়। ডান থেকে বাম, বাম থেকে মধ্যপন্থা, মধ্যপন্থা থেকে চরম এবং গরমপন্থা সব পথে অনায়াস যাতায়াত! নতুন করে আবার আলোচনার তুঙ্গে উঠেছেন রমিজ মৃধা। ভেতরের খবর আগেই পান তিনি, এবারও পেলেন; পেয়ে প্রথমে মর্মাহত হলেন তারপর পরিবেশবাদী চিন্তা এলো তার মনে। এ দলে আর হচ্ছে না! হাওয়া বদল করতে নতুন দলে যেতে হবে। পরদিনই তিনি নতুন দলে যোগ দিলেন, যে দলটির বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে মুখে ফেনা তুলেছেন! দলটিও এমন পরীক্ষিত নেতা পেয়ে লুফে নিয়েছে। সেই দলের মহাসচিব তুরুপের তাসের মতো পরদিনই রমিজ মৃধাকে নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে গেলেন। তাকে দেখিয়ে বললেন, ওই দলটা কত খারাপ তা জানা যাবে আমাদের নতুন সহযাত্রীর কাছে। বিপক্ষ রাজনৈতিক দলটি পৃথিবীর অন্যতম নিকৃষ্ট দল। এদের কাছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণের কোনো মূল্য নেই। ঠিক বলেছি না, রমিজ ভাই?

রমিজ মৃধা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লেন। অবশ্য সম্মতি না জানিয়ে উপায়ও নেই। তার বক্তব্যের পালা এলে বললেন, আসলে বিবেকের কাছে বেশি দিন বন্দি থাকতে পারলাম না। এ দলের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে শেষমেশ যোগদান করেই ফেললাম!

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাকে বলতেই হলো, এত দিনকার কুৎসা রটানো দলের আদিষ্ট হয়েই! এখন একই কাজ ‘বিপক্ষ’ দলের হয়ে করতে হবে। তবে সেটা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে! ইতোমধ্যে কাগজে কাগজ জোড়া লাগিয়ে পাঁচ মাইল দীর্ঘ একটি ফর্দে ছেড়ে আসা দলের নানা অব্যবস্থাপনা প্রণয়ন করলেন। নির্বাচনের আগপর্যন্ত এসব কথাই বারবার বলে যেতে হবে।

পরদিন দলের হাইকমান্ড থেকে তলব করা হলো। উৎফুল্ল বোধ করলেন তিনি। এত দিন পর দলের হুঁশ ফিরেছে। সাহস কত, রমিজ মৃধাকে মনোনয়ন না দিয়ে কোথাকার কোন ভুঁইফোড় টাকাওলাকে কাছে টানে! তলব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটলেন না তিনি। মজা করে বার্তা পাঠালেন, সামনে নির্বাচন, এ জন্য ব্যস্ততায় দিন কাটছে। সময় করে পরে আসবো!

এরই মধ্যে তার ‘বাড়ি’তে লেগে গেছে জনসমাগমের মচ্ছব। একসময় এ বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন তিনি। বাড়িওলা পরপর তিন মাস নিয়ম করে ভাড়া চাইলে উল্টো তাকেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করলেন। কত্ত বড় হাঁদারাম, নেতার কাছে ভাড়া চায়। সেই বাড়িওলা পরে উকিল-পুলিশ করেছে। শেষমেশ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা তাকে মানসিক রোগী হিসেবে সাব্যস্ত করে বেকুব আখ্যা দিয়েছে। কার নামে অভিযোগ দিতে হয়, কোনটা চেপে যেতে হয় ব্যাটা এটা না বুঝে পুলিশকে বিপদে ফেলার পাঁয়তারা করছে!

এ বাড়িতে রমিজ মৃধার রক্ষিতা থাকে, বউও। কুলবউ সব জেনে-বুঝেও প্রতিকার চাইতে পারে না। রোকেয়া রচনাবলি পড়ে কেঁদে বুক ভাসায় কেবল। অবলা নারীর দুঃখ বাড়াতে আরও কত খবর ভাসে বাতাসে!

আত্মীকৃত বাড়িতে পরদিন প্রবেশ ঘটল বিশেষ লেবাসধারী এক দল লোকের। তাদের দলনেতা বলল, ভাই, এদ্দিন আশঙ্কায় ছিলাম আপনাকে নিয়ে। ভেবেছিলাম আপনি জয়বাংলার লোক। এখন দেখছি আপনি আমাদের নিজস্ব লোক! আপত্তি না থাকলে আপনাকে উপদেষ্টা বানাবো!

রমিজ মৃধা জানালেন, উপদেষ্টা বানাতে হবে না। তিনি আগেও এ পক্ষের লোক ছিলেন, এখনো আছেন। শুধু আনুগত্যের কথাটা মুখ ফুটে জানানো হয়নি! রমিজ মৃধা অঙ্গীকার করলেন, এখন থেকে তাদের যে কোনো আয়োজনে-অনুষ্ঠানে পাশে থাকবেন।

সেদিন সন্ধ্যায় ছেড়ে আসা দলের শীর্ষনেতা কল করলেন। জানালেন রমিজের মতিগতি বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি যেন সত্বর দেখা করেন। দেরি করলে অতীতের চাপাপড়া পাঁচটি মামলা জ্যান্ত হয়ে উঠতে পারে! আফটার অল, দল এখনো ক্ষমতায়। পড়িমড়ি করে ছুটলেন রমিজ মৃধা। পার্টির প্রধান তার হাতে ধরিয়ে দিলেন মনোনয়নপত্র! সেই সঙ্গে ঘোষণা দেওয়া হলো, দলেও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। তিনি বললেন, আমি যে অন্য দলে যোগ দিয়েছি, গত দুদিনে দলের বিরুদ্ধে অনেক কথাও বলেছি...।

কী আর হবে, ভুলে যান। মনে করেন, দুদিন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন।
সাংবাদিকরা আবার যদি ছেঁকে করে!

বলবেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। অথবা বড় কোনো নেতার নামে মিছেমিছি অভিযোগ তুলবেন!
পরদিন পত্রিকায় বড় শিরোনামে লালরঙে ছাপা হলো শীর্ষ সংবাদ-ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল! পাশে ছাপা হলো কার্টুন-এক দুধের গ্লাস ঘিরে অসংখ্য মাছির জটলা। লক্ষ্য, দুধে হামলে পড়া। কিন্তু সতীর্থদের বাধায় অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যাঘাত ঘটছে বারবার!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper