উপরিভাগের মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ইট
ময়মনসিংহে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি
ময়মনসিংহ ও ফুলপুর প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০১৮
দ্রুত নগরায়নের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলা ইটের চাহিদা মেটাতে ও খরচ কমিয়ে অধিক লাভের আশায় এক শ্রেণির অসাধু চক্র ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমির টপসয়েল ব্যবহার করছে। উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলায় দুই ফসলি জমির টপসয়েল (উপরিভাগের মাটি) ব্যবহার করে বছরে প্রায় ২০ কোটি ইট তৈরি করা হচ্ছে। একই অবস্থা জেলার ১২টি উপজেলার। অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে এসব ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটার লাইসেন্স, অনুমোদন বা ছাড়পত্রসহ কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ফুলপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, এ গ্রামে প্রায় ২২ বছর আগে দুইশ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছিল তিনটি ইটভাটা।
ইট তৈরির মাটি আশপাশের দুই ফসলি জমি থেকে সংগ্রহ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ১২ বছর আগে ৬০ শতাংশ আবাদি জমির মাটি ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করার পর চার ফুট গর্ত করে মাটি উত্তোলন করায় এখন আর সে জমিতে আমন চাষ করা সম্ভব হয় না।
ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মডার্ন ব্রিকস, রূপা, সামাদ, সততা, আলাল, স্বপ্না, সেবা, সুপার সলিড, নূর, যুমনা, টাটা, হৃদয়, এএমএ, সৌরভ, বাশাটি জিকজাক, মেঘনা, দিয়া, দাওয়া, উত্তরা, সততা, রূপসী, তাহের, সৌরভ, সমতা, জনতা, লাকী, আশা ও হাসান ব্রিকস গড়ে তোলা হয়েছে দুই ফসলি কৃষিজমিতে।
পরিবেশ অধিদপ্তর আইনের সুনির্দিষ্টভাবে ইটভাটার জন্য দুই একরের বেশি জমি ব্যবহার করার নিয়ম না থাকলেও প্রতিটি ইটভাটায় প্রায় ৬-৮ একর দুুই ফসলি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফুলপুর ও তারাকান্দার পাশাপাশি অন্য উপজেলা হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নান্দাইল, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ সদর, ফুলবাড়ীয়া, ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, গফরগাঁও, ভালুকাতেও কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। কৃষিজমির টপসয়েল ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হচ্ছে এসব ভাটায়। এক এলাকার ভাটার মালিকরা দালালের মাধ্যমে অন্য এলাকায় গিয়ে উচ্চমূল্যের লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ফুলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকল্প দাস জানান, তিনি যোগদানের পর থেকে কোনো ইটভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়নি। ইট তৈরিতে কৃষিজমির টপসয়েল ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টপসয়েল কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরা শক্তি ফিরে আসতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে।’