ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চলতি বছরে ৭ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

রাণীনগরে বাণিজ্যিক মাছ চাষে ঝুকছে চাষীরা

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
🕐 ৭:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২২

রাণীনগরে বাণিজ্যিক মাছ চাষে ঝুকছে চাষীরা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে দেশীয় প্রজাতীর মাছ ও বাংলাসহ অন্যান্য প্রজাতীর মাছ চাষ করা হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এই উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ। এই মাছ চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে নিত্যনতুন বিভিন্ন প্রযুক্তি। 

আর উপজেলা মৎস অফিসের পরামর্শে ও সহযোগীতায় লাভের মুখ দেখছেন মাছ চাষীরা। ফলে অর্ধিক লাভের আশায় মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে সরকারি ও ব্যক্তিগত ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩৫ শ’ পুকুর রয়েছে। এসব অধিকাংশ পুকুরেই মাছ চাষীরা বার্ণিজিক ভাবে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ করে আসছেন। এর মধ্যে উপজেলার পারইল, বড়গাছা, একডালা, কালীগ্রাম ইউনিয়নে মাছ চাষীরা বেশির ভাগ পুকুরেই দেশীয় গুলশা, পবদা, ট্যাংরা, সিং ও মাগুর সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ বার্ণিজিক ভাবে চাষ করছেন। আর সদর, মিরাট, গোনা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে কার্প, রুই, কাতলা, মিলেগ, সিলভার, বিকেট, কালিবাউশ সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ করা হয়। এছাড়া পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন পুকুরে চাষ করছেন চাষীরা। মৎস্য অফিস থেকে চলতি বছরে উপজেলায় ৭ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মৎস্য অফিস সূত্র আরও জানায়, প্রতি অর্থ বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার শতার্ধিক মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আর এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই তারা মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছেন ও পাচ্ছেন সুফল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা জুড়ে ছোট-বড় প্রায় ৩২ শ’ মাছ চাষী রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার জন চাষী বার্ণিজিক ভাবে মাছ চাষ করে আসছেন। উপজেলার সব চেয়ে বেশিরভাগ পারইল, বড়গাছা, একডালা, কালীগ্রাম, মিরাট ইউনিয়নে মাছ চাষ করা হয়।

মাছ চাষের বিষয় নিয়ে কথা হয় পারইল ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের মাছ চাষী শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আগের তুলনায় মাছ চাষে নতুন নতুন প্রযোক্তি এসেছে। এতে করে চাষীদের ভুব ভালো হয়েছে। বর্তমানে আমি ১০-১২ টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। এর মধ্যে ৪ টি পুকুরে দেশীয় প্রজাতীর ছোট মাছ। আর অন্য সব পুকুরে বাংলা ছাড়াও অন্যান্য প্রজাতীর মাছ চাষ করে আসছি। আগের তুলনায় মৎস্য অফিসের পরামর্শে ও সহযোতীয় বর্তমানে মাছ চাষে সফলতা পেয়েছি।

বড়গাছা গ্রামের মাছ চাষী আহাদ শেখ বাবু জানান, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছি। বর্তমানে ২৫ বিঘার জলার ৫টি বড় পুকুরে দেশীয় মাছের পাশাপাশি কানচ, পবা, গুলশা, পাঙ্গাস মাছ চাষ করছি। গত বছর মাছের দাম বাজারে কম হওয়ায় চাষীদের লোকশান গুনতে হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মাছের দাম বেশ ভালো আছে। বাজারে এই দাম থাকলে চাষীরা মাছ চাষে লাভবান হবেন বলে মনে করছি।

মিরাট এলাকার মাছ চাষী আবু বক্কর জানান, আমি ৩টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। বর্তমানে আমার পুকুরে বাংলা, রুই, মিগেল, কাতলা, জাপানীসহ তেলাপুয়া মাছ চাষ করছি। আমাদের উপজেলায় উৎপাদিত মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে, সিলেট, বগুড়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন, উপজেলায় কার্প মাছের সাথে দেশীয় প্রজাতীর ছোট মাছ চাষে চাষীরা উৎসাহিত হচ্ছে এবং এলাকায় বিভিন্ন পুকুরে এসব মাছ চাষ করা হচ্ছে। মৎস্য অফিসের সহযোগীতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এছাড়া বর্তমানে মৎস্য অফিস থেকে চাষীদের পুকুরের পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। যার ফলে চাষীরা সঠিক সময়ে সঠিক প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছেন। আর উন্নত প্রযোক্তির মাধ্যামে মাছ চাষের চাষীদের পুকুরে এয়ারেটর ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ চাষ বেড়েছে। সব চেষে বেশি চাষ বেড়েছে দেশীয় প্রজাতীর ছোট মাছ চাষ। আমরা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষীদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগীতা দিয়ে আসছি। চলতি বছরে উপজেলায় ৭ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।



 
Electronic Paper