ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চর চরাষাড়িয়াদহে লাখ টাকার টমেটো বিক্রি

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২১

চর চরাষাড়িয়াদহে লাখ টাকার টমেটো বিক্রি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম চর চরাষাড়িয়াদহ। পদ্মার বুকে এ চরাঞ্চলের অবস্থান। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এ গ্রাম বা ইউনিয়নে রয়েছে মোট সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। গ্রামটির উপার্জনের একমাত্র পন্থা কৃষি কাজ। এই ছোট গ্রাম থেকে রবি মৌসুমে প্রতিদিন টমেটো বিক্রি হয় প্রায় ৫-৭ লাখ টাকার। তবে গড়ে প্রতিদিন ৭ লাখ টাকার টমেটো বেচা-কেনা হয় বলে জানিয়েছে গ্রামের চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

পদ্মাপাড়ের এই ছোট্ট গ্রামটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই হয়েছে টমেটোর চাষ। পদ্মাপাড়ে দেখা গেছে সারি সারি ট্রলার। তাতে কর্মব্যস্ত শ্রমিকেরা টমেটোর বোঝাই ট্রলি থেকে মাথায় করে নামাচ্ছেন টমেটোভর্তি বস্তা। নিয়ে গিয়ে ফেলছেন নৌকায়।

এদিকে ঘাটে সারি সারি নৌকায় একে একে ভর্তি হচ্ছে টমেটোর বস্তায়। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে টমেটোর বেচাকেনা। সবজির ব্যাপারি, শ্রমিক থেকে শুরু করে ঘাটের সিরিয়াল মাস্টার কারোরই যেনো বিন্দু মাত্র সময় নেই কথা বলার।

চর আষাড়িয়াদহ পদ্মাপাড়ের নৌকার সিরিয়াল মাস্টার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই ঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার টমেটোর বস্তা যায় রাজশাহী শহরে। নদীর ওপারেই গেলেই টমেটোর বস্তা উঠে যাবে ট্রাকে। সেগুলো চলে যাবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন এই ছোট্ট ইউনিয়ন থেকে সবজির ব্যাপারিরা ৬-৭ লাখ টাকার টমেটোই বিক্রি করেন। টমেটোর সঙ্গে যায় অন্যান্য ফসলও।

পদ্মার চরাঞ্চল থেকে টমেটোর সংগ্রহ করছিলেন ব্যাপারি সোহরাব আলী। রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাক-সবজি কিনে সরবরাহ করেন তিনি। প্রায় ২০ বছর যাবৎ করছেন এই ব্যবসা।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের খেত থেকে টমেটো সংগ্রহ করে তা ট্রলিতে নেওয়া হয়। বস্তা প্রতি ২০ টাকা করে সেগুলো আনা হয় পদ্মাপাড়ে। এরপর নৌকা তোলা হয়। আবার বস্তা প্রতি নৌকার ভাড়া গুনতে হয় ১৫ টাকা করে। প্রতি বস্তায় প্রায় ২ মণ করে টমেটো ধরে। আজও হাজার খানের বস্তা মাল নিয়ে যাচ্ছি।

আষাড়িয়াদহ গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন। এবার ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন টমেটোর। টমেটোর চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ বিঘা জমিতে গাছের চারা, সার, কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ৩ বিঘায় ফসল হবে প্রায় ১০-১৫ টন। এতে খরচ বাবদ লাভের আশা করছেন প্রায় লাখ খানেক।

একই গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামব বলেন, আমার আড়াই বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। এবার অন্যান্য মৌসুমের চাইতে ফলনও বেশ ভালো। তবে উঁচু অঞ্চলের চাইতে আমাদের পদ্মা পাড়ের টমেটোর দাম কম।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, চর নওশেরা ও দিয়ারমানিক চর এই তিনটি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে চর আষাড়িয়াদহ ব্লকে সবচেয়ে বেশি টমেটোর আবাদ হয়। এই ব্লকে ৬০০ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। হেক্টর প্রতি আবাদ হয় প্রায় ২৫ টন। সেক্ষেত্রে প্রায় ১৫ হাজার টন টমেটোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর আবাদ ও ফলন সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে চর আষাড়িয়াদহ ব্লকে টমেটোর চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। কারণ, বন্যা পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের জমিতে পলি পড়ে। পলি পড়ার কারণে মাটি উর্বর হয়।

এছাড়া পানির সহজ লভ্যতাও রয়েছে। একারণে উচু জমির চাইতে তুলনামূলক সার কম লাগে। তাই খরচও কম।

 
Electronic Paper