ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভেড়া পালনে আশার আলো দেখছেন চরাঞ্চলের নারীরা

শাহাদত হোসেন মিশুক, গাইবান্ধা
🕐 ৩:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২১

ভেড়া পালনে আশার আলো দেখছেন চরাঞ্চলের নারীরা

ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার চরাঞ্চলগুলোতে পিছিয়ে পড়া নারীরা স্বপ্ন দেখছেন এগিয়ে যেতে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পালন শুরু করেছেন দেশি ও উন্নত জাতের ভেড়া। এর পাশাপাশি উঠানে সবজি চাষ করে সংসারে সচ্ছলতার মুখ দেখছেন তারা। বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক প্রকল্প (এএসডি) তাদেরকে সহযোগিতা করছে। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে দাতাসংস্থা ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ।

গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ গবেষক ও এএসডি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ভেড়া আছে ৬৯ হাজার ৫৫২টি ও চর আছে ৮০টি। এসব চরাঞ্চলে ভেড়া আছে তিন সহস্রাধিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই থেকে আড়াই বছরে দেশীয় জাতের ভেড়া ১৮-২৫ কেজি ওজনের হয়। যার দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মাত্র। কিন্তু এখন যেসব দেশীয় ভেড়ার সাথে ভারতের মোজাফফর নগর জাতের ভেড়ার বীজ দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন করানো হচ্ছে সেগুলো আড়াই বছর পর ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের হবে। যার দাম হবে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। যা দেশীয় ভেড়ার তুলনায় অনেকগুণ বেশি। ফলে উন্নত জাতের এসব ভেড়া পালন করে আর্থিকভাবে অনেকটাই সচ্ছল হবেন চরাঞ্চলের অনগ্রসর এলাকার এসব নারী। এজন্য ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অন-ফার্ম টেস্টিং-পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প উন্নতজাতের বীজ দিয়ে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজননের এই কাজটি করছে।

পার্টনারশিপ প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারীর নেতৃত্বে এই দলে কাজ করছেন সাতজন। পরবর্তীতে এই কাজটি যাতে স্থানীয়ভাবেই করতে পারা যায় সেজন্য চারজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বাকৃবি থেকে। বাকৃবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা চর কাবিলপুর গ্রামের শাহ দুলাল (১৮) বলেন, কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় হরমোন দিয়ে বছরে দুই বার বাচ্চা দিতে পারে ভেড়া। নয়তো প্রাকৃতিকভাবে হতে গেলে সময় বেশি লাগে। এজন্য কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায় ভেড়া পালন করা বেশ লাভজনক।

ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আনজুমান বেগম (৩৩) বলেন, আগে স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে থাকতাম। গৃহস্থালীর কাজ বাদে অর্থনৈতিক কোন কাজ না করায় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ফ্রেন্ডশিপের দেওয়া একটি ভেড়া থেকে এখন পাঁচটি ভেড়া হয়েছে।

এএসডির প্রকল্প ইনচার্জ দিবাকর বিশ্বাস বলেন, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়াতে দুই বছর মেয়াদ শেষে প্রকল্পটি আবার অন্য চরে গিয়ে কাজ করবে। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং একটি দুর্যোগ সহনশীল জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। কৃষিক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, কৃত্রিম উপায়ে যেভাবে ভেড়াগুলোকে প্রজনন করানো হচ্ছে। এতে করে ভেড়ার উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

 
Electronic Paper