গোয়ালন্দে পাট ও পাটকাঠিতে লাভবান কৃষকরা
মো. সিরাজুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
🕐 ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাটকাঠির বাজার জমে উঠেছে। কৃষকের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ একটি অতি প্রাচীন বাজার। সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই এলাকার সুনাম রয়েছে। পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই বিশাল বাজার ঘুরে দেখা দেখা যায়, এখানে ভোর থেকেই পাট বেচাকেনার বাজার শুরু হয়ে যায়। তবে হাটের দিন (শনিবার ও বুধবার) বেশি জমে কারণ ঐদিন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই বেশি থাকে। উপযুক্ত দামও পেয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। পাটের পাশাপাশি পাটকাঠি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে বাড়তি আয় হচ্ছে তাদের। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অন্যান্য চাষিরা।
পাট বিক্রেতা কৃষক কুদ্দুস ফকির বলেন, এবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ছয়/সাত মণ পাট হয়েছে। এবার দামটা বেশি হওয়ায় প্রতিমণ পাট তিন হাজার থেকে বত্রিশ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উত্তর উজানচরের রিয়াজুদ্দিন পাড়ার জহির মোল্লা বলেন, এবার পাটের ফলন ও দাম দুটোই ভালো তার ওপর পাঠের কাঠি লাভে বিক্রি হচ্ছে। ভেজা পাট কাঠি চার পাঁচশ টাকা এবং শুকনা পাটকাঠি ছয় সাতশো টাকা করে বিক্রি করছে। বাড়ির উপর থেকে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও ব্যাপারী এসে বাড়ির ওপর থেকে কিনে নিয়ে যায়।
বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা সামছু মন্ডলের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, পাট চাষে ব্যয় খুবই কম। একবিঘা পাটে ব্যয় মাত্র পাঁচ/সাত হাজার টাকা। অপরদিকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ মণ পাট পাওয়া যায়। বর্তমানে গোয়ালন্দ বাজারে পাটের বাজার ৩০০০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ৩২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখন মাঠে যেমন কৃষক ব্যাস্ত পাঠ কাটতে তেমনি বাড়িতে মহিলারাও এখন কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন পুরুষের সাথে। রিয়াজুদ্দিন পাড়া ও মৃধা ডাঙ্গা ঘুরে দেখা যায় তারা ও পুরুষের সাথে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মহিলারা। পানিতে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে আর রাস্তার উপর সারি সারি মহিলারা গাছ থেকে পাট ছাড়াচ্ছেন। নিজেদের পাশাপাশি অনেকেই পাটকাঠির বিনিময়ে পাট ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
কুলছুম বিবি নামে একজন মধ্যবয়সী মহিলার সাথে কথা হয় যিনি অন্যের পাঠ ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, কী আর করব বাবা, পাটকাঠি জ্বালানির জন্য লাগে, বুদে বানাতে লাগে তাই ছাড়াতে এসেছি। যতগুলো ছাড়াব সবই আমার।
তবে আবারও পাটের সুদিন ফিরে আসছে। পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাতদ্রব্যে ব্যবহার বাড়াতে ভোক্তাদের আগ্রহী করা হচ্ছে। অপরদিকে পাটচাষে আগ্রহী করতে চাষিদেরকে সরকার থেকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। গত বছর থেকে আবারও পাটের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন চাষিরা। মাঝখানে পাটের আবাদ কমলেও আবারও পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে পাটের আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব মন্জুর রহমান বলেন, আমরা পাটচাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। কৃষক পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং পাটের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছে। আমরা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। গতবছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩২.৭২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। কিন্তু এ বছর পাট চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪২.৮০ হেক্টর জমিতে।