হাঁসের খামারে দিন বদল ইয়াকুব আলীর
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
🕐 ১:২৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১
বাড়ির সামনে খড় দিয়ে ছোট একটা মাচালি পেতে থাকার জায়গা করে সেখানে রাত্রিযাপন করেন তিনি। সামনে জাল দিয়ে ঘেরা প্রায় তিনশ হাস আটকানো রয়েছে, সেখানেই খুব সকালে কথা হয় তার সাথে। তার নাম ইয়াকুব আলী ব্যাপারী, পিতা বিরাজ ব্যাপারী। তিনি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে বসবাস করেন।
খোলা কাগজ প্রতিনিধির সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আগে মুরগির খামার করতাম কিন্তু গত তিন চার বছর ধরে হাসের খামার করতেছি। এতে লাভ বেশি এবং খরচ কম। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এই যে দেখতেছেন সারা মাঠ পানিতে প্লাবিত একটু পর ছেড়ে দিলে সারাদিন পানিতে থাকবে পানিতে চড়ে বেড়াবে। সকালে কিছু খাবার দিয়ে ছেড়ে দিব আর সন্ধ্যায় যখন আসবে। তখন খাবার দিলেই হয়। সারাদিন দেখে দেখে রাখতে হয় তা-না করলেই মাঝে মাঝে দুই একটা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। চারশ হাস কিনেছিলাম এখন আছে প্রায় তিনশ।
তিনি আরও বলেন, এতদিন দুইশ আশি থেকে তিনশ ডিম দিয়েছে। হারানোর ফলে এখন ডিম কমে এসেছে। তিনশ ডিম দিলে তা কম করে হলেও তিন হাজার টাকা বিক্রি প্রতিদিন খাওয়া খরচ আটশ থেকে হাজার টাকা বাদ দিলে লাভ প্রায় প্রতিদিন দুই হাজার টাকা মানে মাসে প্রায় ষাট হাজার টাকা।
তিনি বলেন, তার হাসের বয়স প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। এ বছর আবার নতুন বাচ্চা কিনতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা পয়ত্রিশ টাকা করে কিনেছিলেন এখন প্রত্যেকটি হাস তিন থেকে চারশ টাকা, গড়ে একটা লাভ রয়েছে।
তেনাপচা এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ইয়াকুবের সংসারে কিছুদিন আগেও অভাব অনটন লেগেই থাকতো কিন্তু হাঁস পালন করে তার অভাব দূর হয়েছে। সংসারে সচ্ছলতা ও জীবনে সফলতা এসেছে।
ইয়াকুব আলী এই এলাকায় বেশ পরিচিত হাঁস পালনের জন্য তার বাড়তি কোনো খরচ নেই। সে মাঠেই হাঁস রাখে। ঝড়-বৃষ্টিতে কোনো সমস্যা হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন ঝড়-বৃষ্টিতে হাসের কোনো রোগ-বালাই হয় না। মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে এখানে হাঁটু সমান পানি হয়ে যায়। একদিন সকালে উঠে দেখি এখানে হাঁটু সমান পানি হয়ে গেছে, আর হাঁসগুলো তার মধ্যে সাঁতার কাটছে। তবে মাঝে মাঝে একটু আধটু ঠান্ডা লাগলে ভিটামিন খাওয়ালে ঠিক হয়ে যায়।
অভিজ্ঞতার ফলে যে কোনো কাজে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে প্রমাণ করেছেন ইয়াকুব আলী।
প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকরা জানান, হাঁসের রোগ বালাই সাধারণত কম হয়। তবে কিছু মৌসুমে ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা রোগের সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চার বয়স ২১ দিন থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ডাক প্লেগের ভ্যাকসিন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে ডাক কলেরার ভ্যাকসিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান খোলা কাগজকে জানান, ছোটভাকলার ইয়াকুব আলীসহ উপজেলার দেআগ্রাম, উজানচর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অনেক দরিদ্র পরিবার ক্ষুদ্র আকারে হাঁসের খামার করে লাভবান হয়েছেন। তবে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ইয়াকুব আলী অল্প শিক্ষিত হয়েও পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ও কঠোর পরিশ্রম করে উপজেলার মধ্যে সফল হাঁস খামারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ হাঁস পালনে এগিয়ে এলে সবাইকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সাহায্য করা হবে। শুধু হাস পালন নয়, অন্যান্য যে কোনো খামার করলেই তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।