ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সোনাগাজীতে সফল মাল্টা চাষির বদলে যাওয়ার গল্প

ফেনী প্রতিনিধি
🕐 ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২১

সোনাগাজীতে সফল মাল্টা চাষির বদলে যাওয়ার গল্প

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চর সাহাভিকারী এলাকার মোশারফ হোসেন জীবিকার তাগিদে ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি দেন। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো বেতনে চাকরি করতেন। ২০ বছর প্রবাস জীবন শেষে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে দেশে চলে আসেন মোশারফ। তার কাছে বেশ ভালো টাকাও ছিল। চিন্তা করেন তিনি বাকী জীবন কি ভাবে কাটাবেন। কি করলে টাকার অপচয় হবে না বরং পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবেন। এলাকার অনেকেই তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তবে মোশারফ দমে যাওয়ার লোক নন।

২০১৮ সালের জুন মাসে তার ছোট ভাই ইমাম হোসেনকে নিয়ে ৪০ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে নিজের সাড়ে চার একর জমিতে ২ হাজার ২০০টি গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান শুরু করেন। একই সঙ্গে পাশের দুই একর জায়গা জুড়ে এবং বাগানের চারপাশে ৫ হাজার আকাশমনি গাছের চারা লাগান। মাত্র তিন বছরেই তিনি আজ সফল মাল্টা চাষি। চলতি বছরে জুলাই মাসে তার বাগান থেকে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে প্রায় দুই হাজার কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে। এই বাগানে আরও প্রায় ৮০০-১০০০ কেজি মাল্টা বিক্রি করা যাবে।

উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিকারী এলাকার প্রবাস ফেরত মোশারফ হোসেন ফল চাষে আগ্রহী হন। ২০১৮ সালে প্রবাস থেকে এসে তিনি গ্রামের বাড়ির পাশে ছোট ফেনীর নদীর তীরে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া শুধুমাত্র ইউটিউব দেখে মাল্টার বাগান শুরু করেন। বর্তমানে সাড়ে ছয় একর জমিতে তার বাগান রয়েছে। সেখানে আছে ২ হাজার দুই শতাধিক মাল্টাগাছ ও ৫ হাজার আকাশমনিসহ অন্যান্য ফলের গাছ রয়েছে।

মোশারফ হোসেন বলেন, বাগানে মাল্টার পাশাপাশি বেশ কিছু জাতের দেশি-বিদেশি আম গাছ লাগিয়েছেন। আরও আছে বিভিন্ন ধরণের ফলগাছ। তবে মাল্টা চাষের ওপর তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। তার বাগানে বারি মাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা) জাতের মাল্টা গাছ আছে। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। কিন্তু তিন বছর পর একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে। চলতি বছর প্রথমে গাছ প্রতি ৫০-৮০টির বেশি মাল্টা ধরেছে। বর্তমানে তার বাগান পরিচর্যার জন্য ১০ জন লোক কাজ করেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টা বাগান করে বেকারত্ব দূর করছেন।

শাহ আলমের ছোট ভাই ইমাম হোসেন বলেন, দুই ভাই মিলে মাল্টা চাষে হাত দিয়ে ভালো ফলন দেখছেন। গত দুই বছর অনেক পরিশ্রম করে বাগানটি দাঁড় করিয়েছেন। এ বছর থেকে তারা পরিশ্রমের ফল পাচ্ছেন। বাগানটির নাম দিয়েছেন মোশারফের মাল্টা বাগান। মনোরম পরিবেশ হওয়ায় প্রতিদিন বিকেলে শত শত মানুষ মাল্টা বাগানে বেড়াতে আসেন। সোনাগাজী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তারা কোন ধরনের সহায়তা পাননি। তবে পাশ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে মাল্টা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পরামর্শসহ সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়েছেন।

মোশারফ আরও বলেন, ফলের পাশাপাশি তার বাগানে নানা জাতের ফলের চারা রোপণ করে বড় হওয়ার পর তা বিক্রি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, এ বছর পাইকারী ও খুচরা ভাবে প্রায় তিন লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে পাশের ফেনী, দাগনভূঁঞা, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ আরও কয়েকটি ফলের বাজারে পৌঁছে গেছে। দূর-দূরান্তের ফল ব্যবসায়ীরা তার বাগানের মাল্টা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি ১০০ টাকা দরে কেনেন।

সরেজমিনে মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মোশারফ তার মাল্টা বাগানে পাইকারদের কাছে মাল্টা বিক্রি করে শ্রমিকদের সঙ্গে পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারেরা তার বাগানের মাল্টা ওজন করে মেপে নিয়ে যাচ্ছেন। আশ-পাশের এলাকা থেকে মাল্টা বাগান দেখতে অনেকে বিনোদন প্রিয় মানুষ বাগানে ভিড় জমাচ্ছেন।

বাগানে বেড়াতে আসা মো. মাইন উদ্দিন বলেন, বাগানের পরিবেশটা খুবই সুন্দর। সময় পেলে বন্ধুদের নিয়ে বিকেলে মাল্টা বাগানে বসে ও ঘুরে ঘুরে সময় কাটান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে অনেক দুরে ও নদীর ওপারে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। এজন্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের কৃষি বিভাগ মোশারফকে মাল্টা চাষে সর্বাত্মক সহযোগীতা করছেন।

চর দরবেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, মোশারফের বাগানে উৎপাদিত মাল্টা আকারে বড় ও মিষ্টি। সরকারি কোন সাহায্য ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাড়ে ছয় একরের মাল্টা ও গাছের বাগান করায় তিনি মোশারফের প্রশংসা করেন। মাল্টার উৎপাদন বৃদ্ধিসহ রোগ-বালাই থেকে বাগানকে রক্ষা করতে কৃষি বিভাগকে দেখভাল করার জন্য অনুরোধ করেন। কৃষি বিভাগ ও সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে মোশারফের বাগানটি জেলার সর্ববৃহত মাল্টা উৎপাদনকারী বাগানে পরিনত হবে।

 
Electronic Paper