ড্রাগন চাষে সফল মান্নান
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ)
🕐 ৪:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২১
কম পরিশ্রমে বেশি লাভজনক হওয়ায় শখের বশে ড্রাগন চাষেই ভাগ্য খুলেছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান মুন্টুর। তার সফলতা দেখে শুধু প্রতিবেশী নয়, উপজেলার অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষের কথা ভাবছেন। আগামীতে ড্রাগন ফল চাষ ও কৃষি পরামর্শ অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নিজ ঘরের আঙিনায় ১৫টি বিদেশি ড্রাগন ফলের সারি সারি সবুজ গাছ। বাগানে প্রতিনিয়ত পরিচর্চায় ব্যস্ত রয়েছেন মান্নান। এর পাশাপাশি কলা, লিচু, পেয়ারা, কাগজি লেবু, পেঁপেসহ অন্যান্য ফলের বাগান করেও সফলতা পেয়েছেন মান্নান।
মান্নান জানান, কয়েক বছর আগে কৃষক উদ্ধুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ ট্যুরে আমি নাটোরে যাই। সেখানে কামরুজ্জামান নামের ব্যক্তির বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হই। পরে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার হটিকালচার সেন্টার থেকে চারা নিয়ে নিজ আঙিনায় রোপণ করি। মাত্র ছয় মাসেই গাছে ফল আসায় আমি অবাক হয়ে যাই। যত্ন নিতে থাকি গাছগুলোর। আমার ১৫টির মতো গাছ রয়েছে। এবার প্রায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার বিক্রি করেছি। এ বছর আরও ৪০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া ড্রাগন গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। তা দিয়েও ভালো আয় হচ্ছে আমার।
তিনি আরও জানান, ড্রাগন একটি বহু বর্ষজীবী ফল। খুঁটি পদ্ধতিতে একটি খুঁটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর ফল আসতে সময় লাগে মোটামুটি ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে পাঁচশ টাকা। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাস হতে আর একটানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। এক নাগাড়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈবসার ও সেই সঙ্গে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং পিঁপড়া দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। ক্যাকটাস গোত্রের এই ফলের গাছ দেখে সবাই একে সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। সাধারণত মধ্য আমেরিকায় এ ফল বেশি পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল দেখতেও খুব আকর্ষণীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি।
প্রতিবেশী খলিল ও মোবারক জানান, মান্নানের বাড়ির উঠোনে যে পরিমাণ ড্রাগন হয়েছে আমরা দেখে অবাক হয়েছি। ফলের দামও অনেক ভালো। এবছর তিনশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ টাকা বিক্রি করেছেন। অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক ও এই ফলটি আমদানি নির্ভর। তবে দেশে অনেক কৃষক ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আগামীতে এটি অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামীতে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী বলেন, আব্দুল মান্নান মুন্টুর এই ড্রাগন বাগানটি তৈরি করতে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
উপজেলায় আরও অনেক কৃষি উদ্যোক্তা বেশ কিছু ছোট-বড় ড্রাগন বাগান তৈরি করেছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে আত্রাইয়ে বেশি করে এই অর্থকরী ফল চাষে কৃষকরা এগিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেন, চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগবালাইও কম। তাই সহজে এই ফল চাষ করতে পারে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম কাওছার হোসেন জানান, ড্রাগন একটি বিদেশি ও জনপ্রিয় ফল। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ড্রাগন ফল বাগান থেকেই বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি করে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।