ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্রুত শস্য শুকানোর কৌশল উদ্ভাবন করলেন হাবিপ্রবির শিক্ষক

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
🕐 ৬:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০১৮

কৃষি নির্ভরশীল বাংলাদেশের সঠিক আদ্রর্তার ও শুকানোর অভাবে প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। তাই দ্রুত শস্য শুকানোর জন্য দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক গবেষণা শুরু করেন এবং দ্রুত সময়ে ভূট্টা, ধানসহ অন্যান্য ফসল শুকানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।

তারা কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ শুরু করেন। প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মসলা জাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে টুকিটাকি ফাস্ট স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক ছাড়া গ্রেইনের (ভুট্রা, ধান) জন্য আমাদের দেশে টু স্টেজ ড্রায়িং টেকনিক নিয়ে কোথাও কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরাই প্রথম এই টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি। এটি পরিবেশ বান্ধব, বিধায় পরিবেশে ও জীব বৈচিত্রের প্রতি এর কোন বিরুপ প্রভাব নেই। এটি আমাদের তিন বছরের প্রকল্প আমরা মাত্র দেড় বছরে এই পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছি। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে প্রথম স্টেজে ভুট্রা বা ধান ফ্লুডাইজড বেড ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র ৪ মিনিটে ২৮% আদ্রতা থেকে ২০% আদ্রতায় নিয়ে আসা যায় এবং দ্বিতীয় স্টেজে এলএসইউ/সান ড্রাই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ৩-৪ ঘন্টায় ২০% থেকে ১২% এ নিয়ে আসা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পোল্ট্রি ফিড, ডেইরি ফিড ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভূট্টার ব্যবহার দিন দিন বাড়ার কারণে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষাকালে যে ভূট্টা হারভেস্ট হয় তা শুকানোর জন্য কিন্তু এর চাহিদা অনেক বেশি হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি। এটা ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক দ্রুত শস্য শুকাতে পারবে এবং বেশি লাভবান হবে। মাঠ পর্যায়ে ভুট্টা শুকাতে বর্তমান কেজি প্রতি ৫০-১০০ পয়সা লাগে। আমরা চেষ্টা করব একই খরচের মধ্যে রাখতে। আর আমাদের এই মেশিনে ড্রায়িং করলে রং ও পুষ্টি গুনাগুণ ভাল থাকবে। এতে কৃষকরাও বাজারে বেশি মূল্য পাবে। কাজেই একটু খরচ বেশি হলেও তা পুষিয়ে যাবে। আবহাওয়া খারাপ থাকলেও এই পদ্ধতিতে ফসল শুকিয়ে ফসলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর যে পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়, সেটি আর হবে না।

তার এই উদ্ভাবনী কৌশলটি দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম, কোষাধক্ষ্য, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার পরিচালকগণ দিনাজপুরের উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে যান। সেখানে তারা উদ্ভাবিত যন্ত্রের বিভিন্ন দিক ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং উপস্থিত একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে যন্ত্রের গুণাগুন ও কার্যকারিতা দেখেন।

এসময় উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, এটি একটি নিড বেসড টেকনোলজি। বর্তমান সময়ে যেভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রতিবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে যে হারে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাতে করে আমার কাছে মনে হয়েছে এই টেকনোলজি একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। আমি তার এই উদ্ভাবনকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং তার পরিকল্পনা ও কাজের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।

উল্লেখ্য যে, এই প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে আছেন প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার, কো-ইনভেস্টিগেটর হিসেবে ড. মো. মফিজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল মোমিন শেখ। রিসার্চ ফেলো হিসেবে আছেন মোঃ এজাদুল ইসলাম, আক্তারুজ্জামান ও হাসান তারেক।

 
Electronic Paper