ডিঙি নৌকায় লেবুর হাট, পেয়ারার অপেক্ষা
শফিউল আজম টুটুল, ঝালকাঠি
🕐 ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৬, ২০২১
ঝালকাঠির শহর থেকে কৃত্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক দিয়ে যেতে হয় ভীমরুলী। সড়কের পাশেই নয়াভিরাম খাল। খাল হলেও স্রোত রয়েছে নদীর মতো। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট মোটরসাইকেল চালালে পৌঁছানো যাবে ভীমরুলী বাজারে। এখানে ব্রিজের ওপরে দাঁড়ালে দেখা যাবে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় বসছে লেবুর হাট। লেবু চাষিরা সাত সকালে গাছ থেকে লেবু পেড়ে নৌকায় নিয়ে আসছেন ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে। পার্শ্ববর্তী ২২ গ্রামের লেবু চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হচ্ছেন এই হাটে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন এখান থেকে লেবু কিনতে। আসছে পর্যটকও। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে পাইকার ও পর্যটকের সংখ্যা এখন কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই হাট জমে থাকে লেবু চাষি, পাইকার ও দর্শনার্থীদের কোলাহলে। এখানে শুধু লেবুর হাটই বসে না। বসে পেয়ারার হাটও। আর ক’দিন বাদেই পেয়ারাও আসবে এই হাটে। ভীমরুলী খাল মূলত পেয়ারার ভাসমান হাটের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন শত শত মণ পেয়ারা বিক্রি হয় এই হাটে। তবে সে দৃশ্য দেখতে আরও ১৫-২০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা যায় লেবু চাষিরা ভীমরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু পাইকারও দেখা গেল খাল পাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দর দাম করছেন। লেবু চাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পন হয়। ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্তীপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষ-াসহ ২২ গ্রামের চাষিরা এই হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশ জনপ্রিয়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগ জানায় ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মে. টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
লেবু চাষিরা জানান, ১ পন (৮০টি) লেবু তারা ৪০০ টাকা বিক্রি করেন। তবে লকডাউনের কারণে জেলার বাইরে তাদের পণ্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় এখন দামও একটু কমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো পূর্বের দামে লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন লেবু চাষিরা। লেবু চাষি তৈয়বুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, তিনি ৪ বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছেন। তার উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বছরে তিনি বিক্রি করেছেন ৪ লাখ টাকার লেবু।
তবে ভাসমান হাটে আসা কয়েকজন লেবু চাষি জানালেন সার সংকট, সরকারি ঋণ ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ার কথা। এসব চাষিরা জানান, সারের অভাবে অনেক সময় তাদের লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যায়। এ কারণে ফলনও কিছুটা ব্যাহত হয়। এ ব্যাপারে তারা কৃষি বিভাগের সহায়তা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক খোলা কাগজকে বলেন, লেবু মানুষের শরীরে লেবু ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরণ করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে লেবু চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।