ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনায় সূর্য্যপুরীর মন্দা

হাসান বাপ্পি, ঠাকুরগাঁও
🕐 ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২১

করোনায় সূর্য্যপুরীর মন্দা

করোনার প্রভাব পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী সূর্য্যপুরী আমে। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে দেশের অন্য কোথাও সূর্য্যপুরী আম হয় না বলেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এ আমের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় বাজারগুলোতে এবার সূর্য্যপুরী পাকা আম বিক্রি হচ্ছে সাত টাকা কেজি দরে। আর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে। করোনার প্রভাবে বাজারে ক্রেতার আগমন না হওয়া এবং অন্য জেলাগুলো থেকে পাইকারি ক্রেতাদের আম ক্রয়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় আমের বাজারে এমন বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কালিবাড়ি বাজার, কালেক্টরেট চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সত্যপীর ব্রীজ, গোধুলী বাজার, সেনুয়া হাট, খোচাবাড়ী হাট, লাহিড়ী হাট, স্কুলহাট, কুশালডাঙ্গী, হলদিবাড়ীসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আমের ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে বসে থাকলেও বাজারে ক্রেতা নেই। দু-একজন স্থানীয় ক্রেতা থাকলেও বহিরাগত ক্রেতা নেই বললেই চলে।

বাজারে সূর্য্যপুরী আম প্রতিমণ কাঁচা বিক্রি হচ্ছে ছয়শ’ থেকে আটশ’ টাকা, আ¤্রপালি সাতশ’ টাকা, হিমসাগর এক হাজার চারশ’ টাকা, লখনা আমের প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে চারশ’ টাকা, ল্যাংড়া আমের প্রতিমণ ছয়শ’ টাকা। কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের মূল্য অর্ধেকের চেয়ে আরও কম।

গত বছর বাজারে সূর্য্যপুরী আম ৫০-১০০ টাকা কেজি, আ¤্রপালি ৭০-১০০ টাকা কেজি, হাড়িভাঙা ৮০-১২০ টাকা, ল্যাংড়া ৯০-১৩০ টাকা, হিমসাগর ৮০-১৫০ টাকা, আশ্বিনা ৫০-১০০ টাকা এবং বাড়ি-৪ আম ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে করোনার প্রভাবে এবার এসব আমের দাম কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।

বালিয়াডাঙ্গী বাজারে আম কিনতে আসা তুহিন হাসান তনু চার মণ আম কিনেছেন তিন হাজার দুইশ’ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, আমের দাম কম শুনে ঠাকুরগাঁও থেকে সকালেই এসেছি আম কিনতে। ভাল মানের আম কিনলাম বেশ কম দামেই।

আম ব্যবসায়ী নজরুল ও জালাল জানান, বাজারে আমের ক্রেতাও নেই, দামও নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকেও আম কিনতে কেউ আসেনি। বিক্রি না হওয়ার কারণে পাকা আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৪ শত ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্য্যপুরী, আ¤্রপালি, হাড়িভাঙা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, বাড়ি-৪ সহ বিভিন্ন জাতের আম হয়েছে। এর মধ্যে সূর্য্যপুরী ও আ¤্রপালি আমের বাগান বেশি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গত ৩ বছর ধরে আম বিক্রি করছেন মিলন, পায়েল, তানভীর নামের বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তারা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে তেমন সাড়া নেই। দাম কম হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রত্যেকে ২০ মণ আমের অর্ডার পায়নি। গত বছর প্রায় ২শ’ মণ আম বিক্রি করেছি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারা দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকে না- এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। জেলায় আমের ভালই ফলন হয়েছে। করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

নওগাঁয় নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে এবং লকডাউনও চলছে জনস্বার্থে। আম বিক্রিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া এই মুহূর্তে কোনো কিছু বলার নেই। যদি তারা কারিগরি সহায়তা চান, আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হবে।

 
Electronic Paper