ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মরুভূমির খেজুর বাগেরহাটে

বাগেরহাট প্রতিনিধি
🕐 ১২:০১ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২১

মরুভূমির খেজুর বাগেরহাটে

বাগেরহাটের উপকূলীয় রামপাল অঞ্চলে লবণের পরিমাণ বাড়ায় সব ধরনের ফসলের চাষ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক সময় এ অঞ্চলের ধান, নারিকেল, সুপারি দেশের অন্য অঞ্চলে রপ্তানি হতো। এখন সেই অঞ্চলে এসব অর্থকরী ফসলের উৎপাদন প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। সেই লবণাক্ত অঞ্চলে এখন সৌদি খেজুরের চাষ করে আশা জাগিয়েছেন। ঠিক যেন মরুভূমিতে একটুখানি উদ্যান।

ভিনদেশী ফলের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছেন বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী দিহিদার জাকির হোসেন। ১৫ একর মৎস্য ঘেরের খামারের বেড়িবাঁধে এখন আড়াই হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে জাকিরের। দুই বছরেই ফল এসেছে অনেক গাছে। লোনা পানির এই এলাকায় সৌদি খেজুর চাষের সফলতাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জেলা কৃষি বিভাগ।

খেজুরচাষি দিহিদার জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ১৫ একর জমিতে ৯টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। পুকুরের পাড়জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লোনা পানির জন্য এসব ফসলে লাভ হচ্ছিল না। অন্যদিকে অতিরিক্ত লোনা পানির কারণে ঘেরে গলদা চিংড়ি বা কার্পজাতীয় মাছ ভালো হয় না। তারপর কয়েক বছরে বাগদা চিংড়িতেও লোকসানে পড়ি। পরে হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘রামপাল সৌদি খেজুর বাগান’ নাম দিয়ে এই খেজুর চাষ শুরু করি। তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে লোকজন আমাকে পাগল বলত।

ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও ১০০ চারা আনি। বর্তমানে আমার আজোয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহিÑ এই পাঁচ জাতের আড়াই হাজারের মতো খেজুর চারা রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৫০০ চারা প্রস্তুত রয়েছে নার্সারিতে। বর্তমানে ৫০টি গাছে ফলন হলেও আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ গাছে খেজুর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিক উপায়ে খেজুর ও চারা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ ছাড়া খেজুরের পাশাপাশি ভিয়েতনামি নারিকেল, কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ বেশ কিছু ফলের চাষ করেন তিনি। খামারে রয়েছে ৩০টি দেশি গরু। নতুনদের উদ্দেশে জাকির হোসেনের পরামর্শ, কলম ও বীজ দুভাবেই সৌদি খেজুরের চারা তৈরি হয়। এই বীজের চারার বেশির ভাগ পুরুষ হয়ে যায়। ফলে ফল আসে না। তাই নতুন যারা শুরু করবে, তাদের কলমের (অপ শুট) চারা কেনার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। জাকির হোসেন আরও বলেন, আমার এখানে এখন সার্বক্ষণিক তিনজন কর্মচারী রয়েছে। ভবিষ্যতে এই নার্সারিতে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সদর উপজেলার ঘের চাষি আলামিন খান সুমন বলেন, আইনজীবী জাকির ভাই আমার পরিচিত। একদিন তার ঘেরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে সৌদি খেজুর চারা দেখে আমার ঘেরেও কয়েকটি চারা রোপণ করেছি। চারাগুলো বড় হয়েছে। যদি ভালো ফলন পাই ভবিষ্যতে আরও চারা রোপণ করবেন বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সৌদি খেজুর মরুভূমির ফসল। লোনা পানির জমিতে এই ফসল চাষের খবর শুনে প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি দিহিদার জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এখন যদি খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তাহলে লোনা পানির এলাকার জন্য এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হবে।

 
Electronic Paper