রূপগঞ্জে প্রবাসীর আয় বিলাতী ধনেপাতায়
মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ
🕐 ২:৪৫ অপরাহ্ণ, জুন ০৬, ২০২১
করোনায় আটকে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মালেশিয়া ফেরত প্রবাসী জিন্নাত আলীর আয়ের অবলম্বন এখন বিলাতী ধনে পাতায়। মাত্র ১ বিঘা জমিতে চাষ করা বিলাতী ধনে পাতা বিক্রি করে চলে তার সংসার। এমনই চিত্র পাওয়া গেছে উপজেলার দাউদপুরের কাজিরটেক গ্রামে। তবে বিলাতী ধনে পাতা বলা হলেও এটি এখন দেশীয় ধনে হিসেবেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের একোয়ার শুরু করে আলমপুর গ্রামের জিন্নাত আলী ও তার ভাই শামীম মিয়া রোজগারের জন্য মালেশিয়া চলে যান সেখানে কাজ করাকালীন সম্প্রতি গত বছর করোনা মহামারী শুরু হলে তারা দেশে চলে আসেন। তবে এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভিসা জটিলতায় তারা দুই ভাই থেকে যান গ্রামে। তবে পূর্বাচল শহরের তাদের ঘর বাড়ি উচ্ছেদ করায় উপজেলার দাউদপুরের কাজিরটেক এলাকায় মাত্র ১৮ শতক জমিতে বসত ঘর গড়ে তুলেন। সেখানেই পরিবার পরিজন নিয়ে তারা বসবাস করেন। কিন্তু চাষাবাদের জমি না থাকায় পাশের জমি মালিক থেকে ১ বিঘা জমি বর্গা নেন। সেখানে বিলাতী ধনে পাতার চাষ শুরু করেন।
গত ১ বছরে সেখানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ধনে পাতা। এতে প্রতিদিন স্থানীয় হাটে ৫ থেকে ৬ কেজির অধিক ধনে পাতা বিক্রি করতে পারেন তারা। স্থানীয় বাজারে কেজি হিসেবে বিক্রি না হলেও আঁটি বেঁধে বিক্রির নিয়ম রয়েছে। তাই গড়ে কেজি প্রতি হিসেবে এর দাম পাওয়া যায় ৬শ থেকে ৮শ টাকা দরে। এভাবে দৈনিক গড়ে ৫ কেজি হিসেবে আয় হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকার মতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী জিন্নাত আলী বলেন,বিলাতী ধনে বা সচপাতার গোড়া ধেকে পূনরায় চারা গজে। এটা চাষাবাদে জৈবিক সার ছাড়া তেমন কিছু প্রয়োজন হয় না। বেলে ও দোঁয়াশ মাটিসহ সব রকম পরিবেশে অনেকটা অযত্নেই বেড়ে ওঠে এ ধনে পাতা। অথচ লাভজনক এ কৃষিপন্য চাষাবাদে অনেকেই আগ্রহী নয়। আমি ভাবছি জমি পেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করবো। পাশাপাশি পুদিনা পাতাও চাষ করবো। তবে নিজের জমিতে চাষাবাদ করলে আরো লাভবান হতে পারতাম।
সূত্র জানায়, বাজারে ব্যাপকভাবে মসলাজাতীয় কৃষি পন্যের চাহিদা থাকায় স্থানীয়ভাবে বাড়ছে এমন জাতীয় চাষাবাদ। তবে কৃষকদের উপযুক্ত জমি সংকট থাকায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন না। যত্রতত্র আবাসন কোম্পানীর গড়ে তোলার জন্য বহু কৃষক তার নিজ পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অথচ, সকাল হলেই রূপগঞ্জের পূর্বাচলের টাটকা ফসলাদি সংগ্রহ করতে রাজধানীর লোকজন ভির করেন। আবার শীতলক্ষ্যা নদী পারের কৃষকরাও ড্রেজারের পাইপের কারনে তাদের কৃষিকাজে বাঁধা পাচ্ছেন।
এমন একজন কৃষক শিমুলিয়ার রোমান মিয়া বলেন, শীতলক্ষ্যা পাড়ে অন্যের বর্গা জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন সেখানে বালি ভরাট করায় ওই নদীর পারে আর কৃষি জমি নেই। ফলে বেকার হয়ে অন্য কাজ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, নদী পারের উর্বর জমিতে কৃষি কাজ করে আরো হাজারের অধিক কৃষক তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন প্রায় সবাই ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নুর বলেন, ধনেপাতাসহ মসলাজাতীয় কৃষি পন্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকদের উচিত বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাষাবাদে যুক্ত হওয়া।এ ধরনের চাষাবাজে যে কোন কৃষক সহায়তা চাইলে সরকারীভাবে সহায়তা করা হবে। এছাড়াও আদা, হলুদ, কচু চাষাবাদেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। তাছাড়া আবাসনের বালিতেও বহু কৃষক চাষাবাদ করছেন। বালিতে চাষাবাদ উপযোগী ফসল নিয়ে কৃষকদের মাঝে কর্মসূচীর চিন্তাভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিলাতী ধনে পাতার ব্যাপক ব্যবহারের দেখা যায়, বিলাতি ধনে পাতা ও কচি পুষ্পদন্ড একাধারে সবজি, সালাদ এবং মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রান্নার কাজে তরকারিতে, ডাল, ভাজি ও নিরামিষে সুগন্ধি বাড়ায়। সালাদ হিসেবে অন্যান্য সালাদের সাথে মিশ্রণে সবজি হিসেবে এবং ভর্তা করেও খাওয়া যায়। বেসন দিয়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার বড়া তৈরিতে, পেঁয়াজুতে, সিঙ্গাড়ায় এবং ভেজিটেবল রোলে সুগন্ধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিলাতি ধনিয়ার ঔষধি গুণাগুণ ও রয়েছে। এর পাতা, কান্ড ও ফুলে বিভিন্ন উদ্বায়ী সুগন্ধি তেলজাতীয় পদার্থ এবং ডোডেসিনোয়িক এসিড (১৫.৫%) এবং ই-২ ডোডেসিনোয়িক এসিড (৪৫.৫%) রয়েছে যা এ সুগন্ধির কারণ। এসব উদ্বায়ী সুগন্ধি তেলজাতীয় পদার্থ এবং এসিড জাতীয় উপাদন এক্সট্রাক্ট করে উচ্চমূলের সুগন্ধি ও ভেষজ ওষধ তৈরি করা যায়।