নাগেশ্বরীতে ধানক্ষেতে নেকব্লাস্ট রোগের ব্যাপক সংক্রমণ
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
🕐 ৮:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০২১
নাগেশ্বরীতে নেক বা শীষ ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ধান। এখনো বেড়েই চলছে এর সংক্রমণ। ক্ষেতেই ফসল হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হয়তো আর কয়েকদিন পরে সেখান থেকে ফসল গোলায় উঠত তাদের। ঠিক এ মুহূর্তে পাইরিকুলারিয়াপ্রিসিয়া নামক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আগাম জাতের ধান ব্রি-২৮। শীষের গোড়া অথবা শাখা প্রশাখার গোড়ায় কালো দাগ হয়ে পচে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা। চিটা হয়ে যাচ্ছে ধান। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত নেক বা শীষ ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে উপজেলার ৩.২৫ হেক্টর জমির ধানক্ষেত। এখনো বেড়েই চলছে এর সংক্রমণ। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চোখের সামনে ফসল হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
পৌরসভার বুদ্ধির মোড় এলাকার জামাল উদ্দিন জানান, তার এক বিঘা জমির ধানে চলে পেটের ভাত ও ফুটপাতে পান-সিগারেট বিক্রির আয়ে সংসার চলে। তাই অধিক যত্নে সে জমিতে এবারও লাগিয়েছেন ব্রি-২৮ জাতের ধান। আগাছা পরিষ্কার করেছেন নিজ হাতে। দিয়েছেন নিয়মিত সেচ ও সার। শীষ বের হলে মনে স্বপ্ন জাগে। আর কয়েকদিন পরে ঘরে আসবে ফসল। সে স্বপ্নে ছেদ টানে শীষ ব্লাস্ট রোগ। হঠাৎ তিনি একদিন দেখেন তার ক্ষেতের কয়েকটি জায়গায় ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। পরদিন কীটনাশকের দোকানীর সাথে কথা বলে তার পরামর্শে ওষুধ নিয়ে ক্ষেতে স্প্রে করতে গিয়ে দেখেন সম্পূর্ণই নষ্ট হয়ে গেছে। মন ভেঙে যায় তার।
প্রায় একই রকম কথা জানান ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মন্নেয়ারপাড় গ্রামের কৃষক আ. ছালাম, ইয়াজ উদ্দিন, ইছিমুদ্দিন, পৌরসভার তেলীপাড়া গ্রামের নুর আলী, চৌবাড়ী পায়রাডাঙ্গা গ্রামের যামিনী চন্দ্র মোদক, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কোরালী পাড়ার হোসেন আলী, নুরল ইসলাম, মোহাম্মদ আলীসহ অনেক কৃষক। তারা বলেন, নিজের জমানো অর্থ দিয়ে ও ধার-কর্য করে অনেক ব্যয়ে সেচ নির্ভর এ বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে লাগিয়েছেন ব্রি-ধান-২৮। চোখের সামনে যত্নে গড়া সে ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদের মন ভেঙে গেছে। ফসল হারিয়ে ঋণের বৃত্তে আটকে গেলেন তারা।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ জানান, আগাম জাতের কিছু ব্রিধান-২৮ এর আক্রমণ ঘটেছে। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো বালাইনাশক প্রয়োগ করলে তা ঠেকানো সম্ভব। এক্ষেত্রে শীষ বের হওয়ার আগে ১৬ লিটার পানিতে ট্রুপার, জিল মিশিয়ে এর ৪ ড্রাম প্রতি বিঘায় ছিটাতে হবে। সেই সাথে ২০ গ্রাম পটাশ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সেটা অবশ্যই বিকেল বেলায়। শীষ বের হওয়ার পর নাটিভো, সেলটিমা, ফিলিয়া পানিতে মিশিয়ে একইভাবে জমিতে ছিটাতে হবে।