ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দুধ নিয়ে বিপাকে সিরাজগঞ্জের খামারিরা!

প্রতিদিন উৎপাদিত ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ

এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ২:২৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২১

দুধ নিয়ে বিপাকে সিরাজগঞ্জের খামারিরা!

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগের মধ্যেও প্রতিদিন উৎপাদিত ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জে খামারিরা। সংরক্ষণের অভাবে নষ্টও হচ্ছে হাজার হাজার লিটার দুধ। মিষ্টির দোকান ও চা স্টল বন্ধ এবং হাটবাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় খোলাবাজারেও খুচরা দুধের চাহিদা কমে গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের এক সপ্তাহের লকডাউনে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনছেন খামারিরা। বিক্রি করতে না পারায় অনেকে খামারিরাই রাস্তায় ঢেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের গো-চারণভূমি খ্যাত সিরাজগঞ্জের সমবায় ভিত্তিক গরুর খামারিরা এমন অবস্থায় দিশেহারা। ছোট খামারিদের অনেকেই গরু বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠে। এরপরই অঞ্চলটিতে হাজার হাজার গরুর খামার গড়ে ওঠে। সেখান থেকে মিল্কভিটা এখন প্রতিদিন ২ লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। তরল দুধ, পাউডার দুধ, কনডেন্সড মিল্ক ও খাঁটি গাওয়া ঘি তৈরি করে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করছে। বর্তমানে জেলায় ১৫ হাজার ৩৮০টি সমবায় ভিত্তিক গো-খামারের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়।

খামারিরা বলছেন, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ক্রমাগত বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। সেই তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম। এছাড়া ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব হওয়ায় বেড়েছে গবাদি পশুর অসুখ। অনেকেই গরু অসুখে মারা গেছে, আবার কারও গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে কম মূল্যে।

শাহজাদপুর রেশমবাড়ীর খামারি ও মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির জানান, দিনে যে দুধ উৎপাদন হয় তার মধ্যে জেলায় চাহিদা আট লাখ লিটার। তা মিটিয়ে এই দুধ চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলের উৎপাদিত প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার দুধ প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার ও ঈগলু কেনেন। অবশিষ্ট নয় লাখ লিটার দুধ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হয়।

সামাদ ফকির বলেন, ‘গত নয়দিন থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল না করায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেকে দাম না পেয়ে রাস্তায় ফেলেও দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা পথে বসবেন।’

জামিরতার খামার মালিক সানোয়ার হোসেন বলেন, শাহজাদপুরে দুধকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেউ দুধ পরিবহন করেন। কেউ গোবর কিনে সার তৈরি করেন। কেউ ঘুঁটে বিক্রি করেন। কেউ আবার ঘাস চাষ করে বিক্রি করেন। একসময় এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের বড় উৎস ছিল তাঁত। এখন গরু পালন আয়ের পথ দেখাচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসে এবার সেই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। অনেক মালিক বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া কান্দাপাড়া এলাকার তালুকদার ডেইরি ফার্ম লিমিটেডের পরিচালক মনির তালুকদার বলেন, ‘আমার খামারে ৭০টি গরুর মধ্যে ২০ গরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বর্তমান করোনার জন্য ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছি না। ‘গত বছরে যে লোকসান হয়েছে এ বছরে তার চেয়ে বেশি লোকশান হচ্ছে। আমরা হয়তো আর খামার চালাতে পরব না।’

এই অবস্থার জন্য অনেক ছোট ছোট খামারিরা তাদের গরু বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন। আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ারও দাবী জানান এই খামারি।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, করোনাকালীন সময়ের জন্য আমরা খামারিদের কথা ভেবে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, লকডাউনকালীন সময়ে কোনোভাবেই দুধ কম নেয়া যাবে না। দুগ্ধ খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যে সকল খামারিরা দুধ বিক্রি করতে না পারবে তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়ীতে দুধ দেবে। এই গাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবে। এভাবে দশদিন তারা ভ্রাম্যমাণ সেবা দেবেন খামারিদের। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

 
Electronic Paper