ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফুলবাড়ীতে ব্লাস্ট রোগে ধানের ব্যাপক ক্ষতি, হতাশ কৃষক

এস এম আসাদুজ্জামান, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
🕐 ৪:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০২১

ফুলবাড়ীতে ব্লাস্ট রোগে ধানের ব্যাপক ক্ষতি, হতাশ কৃষক

বৈরী আবহাওয়ার কারণে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মাঠের জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাসের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে ধানের ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার কৃষকদের বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ধান চাষ করলেও ধানের ব্লাস্ট রোগ সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ক্ষেতের ধান ঘরে তুলার স্বপ্ন দেখছিলেন ধানচাষীরা। সে স্বপ্ন এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। নষ্ট ক্ষেতগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হয় ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় পরিপক্কতা আসার আগেই ধানের শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে সোনালী রং ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, তারা সময়মতো কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে এ রোগের প্রদুর্ভাব হতো না।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা আরও জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সময়মতো মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করলে এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতো।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, অধিক মাত্রায় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার ও হঠাৎ করে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং দিনে গরম পড়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চলতি বছর এ উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। সময়মতো বীজ, সার কৃষকের হাতের নাগালে থাকায় এবার বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব জমি থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার হাইব্রিড বাকী উপশি ২৮ ও ২৯ জাতসহ অন্যান্য ধান রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ ক্ষেতের ধানগাছে শীষ বেরিয়েছে। কিন্তু চৈত্র মাসের শুরু থেকে উপজেলায় গরম ও রাতে শীত অনুভূত হয়। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ধান ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। যার কারণে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

শনিবার উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর, অনন্তপুর এলাকায় বিভিন্ন মাঠ ঘুরে এ রকম অহরহ চিত্র দেখা গেছে। ওই এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন ৩ বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানরে শীষ শুকিয়ে মারা গেছে। শুধু আমজাদ হোসেন নন ওই এলাকার হাসেম আলী, হানিফ উদ্দিন, করিম উদ্দিন,জাহিদ হাসান, জমির উদ্দিন, রফিকুল ইসলামসহ অধিকাংশ কৃষকের ধান এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

এ সময় কৃষক হানিফ উদ্দিন বলেন, এ রোগ মোকাবিলায় তিনি কৃষি অফিসের আগাম কোনো পরামর্শ পাননি এবং কোন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেখভাল করেন, তা-ও তিনি জানেন না। ক্ষেতের অবস্থা দেখে কৃষি অফিসের পরামর্শ না পেয়ে লোকাল দোকান থেকে নাটিভো নামের ছত্রাকনাশক ওষুধ ক্রয় করে স্প্রে করেছেন। এতেও কোনো ফল হয়নি। উল্টো ১ বিঘার উপশি ২৮ জাতের ধানের শীষ শুকিয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক হাসেম আলী জানান, ধারদেনা করে ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এ রোগে তার সমস্ত ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

আমজাদ হোসেন জানান, ধান ক্ষেতে যে রোগ ধরেছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। বিভিন্ন ডিলারের পরামর্শে তারা কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। অবশেষে জানতে পারেন এটি ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশিদ জানান, চলতি বছর এ উপজেলায় ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এসব ক্ষেতে বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অল্প কিছু ধান ক্ষেতে হঠাৎ করে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের অবহিতকরণ, পরামর্শ প্রদান ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

 
Electronic Paper