ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তিস্তার বুকে সবুজের সমারোহ

সরকার অরুণ যদু, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
🕐 ৩:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৬, ২০২১

তিস্তার বুকে সবুজের সমারোহ

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে, পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি’। বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের কালজয়ী কবিতা এখন বাস্তবে রুপ ধারণ করেছে। প্রমত্তা তিস্তা এখন নব্যতা হারিয়ে মৃত নদীতে পরিণত প্রায়। পানিবিহীন নদীর বুকে ধু ধু বালুচর। মাঝে মাঝে সবুজের সমারোহ। চাষাবাদ হচ্ছে ইরি, বোরো, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, তিল, তিষি, কাউনসহ রকমারি ফসল। কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর শত শত হেক্টর জমিতে বালুর স্তর পড়েছে। নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌরুট। যুগ যুগ ধরে নব্যতা হারিয়ে তিস্তা নদী শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই পানিশূন্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নুড়ি পাথর, কাকনযুক্ত বালি ও মাটি বয়ে আসায় দ্রুত নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে।

এরমধ্যে অতিরিক্ত বালু ও কাকনযুক্ত মাটির স্তর আবাদি জমির ওপর পরে অনাবাদি করে তুলছে। বিশেষ করে গত ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কেটে জনবসতি গড়ে তোলার কাজ চলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে তিস্তা নদী।

নানা প্রয়োজনে নদী পথে এক স্থান থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষকে এখন নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরের মাইলকে মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝ নদীতে পানি থাকলেও নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ চলাচল বন্ধ হয়েছে। অনেক স্থানে তীরবর্তী এলাকার জনসাধারণ সচরাচর পায়ে হেঁটেও হাঁটুজল পাড়ি দিচ্ছে।

অপরদিকে প্রতি বছর তিস্তা নদীতে নতুন নতুন স্থানে চর পড়ে বালুর স্তর বাড়ায় অনেক পলিময় উর্বর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। প্রতিবছর বন্যার কারণে নদী চরের অনেক জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও ইরি বোরো চাষাবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। এতদাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। নানা কারণে প্রতিবছর আবাদি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। তবুও থেমে নেই কৃষকরা।

উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট গ্রামের সিরাজুল জানান, এক সময় এই চরগুলোতে কোনো চাষাবাদ হতো না। এখন আলু, বাদাম, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ, রসুন, কাউনসহ রকমারি আবাদ হচ্ছে।

চরবিদ্যানন্দ গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস ছালাম বলেন, আলু ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের পর এখন আমরা বাদাম, রসুন, মিষ্টি কুমড়া ও কাউন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শম্পা বেগম জানান, রাজারহাট উপজেলায় চরের মোট ১৬৯০ হেক্টর জমির মধ্যে ১৩৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রণোদনা পুনর্বাসন ও কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চরে আলুর ভালো ফলনে তিনি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।

 

 

 

 

 
Electronic Paper