ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মৎস্য চাষীদের আদর্শ তিনি

ইকবাল হোসেন জীবন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
🕐 ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১

মৎস্য চাষীদের আদর্শ তিনি

পৈত্তিক সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে ২০০০ সালে এক একর প্রকল্পে ৪০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন কামরুল হোসেন। তখন থেকে সফলতার গল্পের শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, সততার উপর ভর করে তিনি এখন উত্তর চট্টগ্রামের মৎস্য চাষীদের আইডল। ধীরে ধীরে প্রকল্পের পরিধি বেড়ে এখন তিনি মাছ চাষ করেন ২৫০ একরেরও বেশি মৎস্য প্রকল্পে। তাঁর দেখাদেখি, পরামর্শে সহযোগীতায় এই শিল্পের সাথে জড়িত হয়েছে আরো ৫০০ বেকার যুবক।

চট্টগ্রামের মৎস্য জোন হিসেবে খ্যাত মুহুরী প্রকল্প এলকায় এখন শত শত মৎস্য চার্ষীদের আদর্শ কামরুল হোসেন প্রকাশ কামরুল হুজুর। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তিনি পুরো উপজেলার মাছ চার্ষীদের প্রতিকৃৎ। অনেকে তাকে অনুসরণ করে চাষ করছে। নিয়মিত তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয় চাষীরা।

মো. কামরুল হোসেন বলেন, পড়াশোনার সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মানুষের সফলতার গল্প পড়তাম। এগুলো পড়ে আমার খুব ভালো লাগতো। এক সময় চাষে আমার আগ্রহী হই। এরপর আমাদের কিছু জায়গা বন্ধক দিয়ে ৪০ হাজার টাকা নিই। বারইয়ারহাটের একটি খাদ্যের দোকান থেকে বাকীতে খাদ্য নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। প্রথম বছরে আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। এরপর থেকে মাছ চাষের পরিধি বাড়াতে থাকি। বর্তমানে ২৫০ একর জায়গাজুড়ে আমার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। এসব মৎস্য প্রকল্পে রুই, কাতাল, মৃগেল, শিং, মাগুর, পাবদা গুলসা মনোস্যাক্স তেলাপিয়া চাষ করছি। বর্তমানে আমার প্রকল্পে অর্ধশত কর্মচারী রয়েছে। মৎস্য চাষ আমার জীবনের একটি অংশ। নিজের কঠোর পরিশ্রম মানুষের দোয়ায় আমি সফল হয়েছি। পাশাপাশি গত ২০ বছরে প্রায় ৫০০ বেকার যুবককে মাছ চাষে উদ্বুর্ধ করেছি। আমাদের পরিবারের সবাই এখন মাছ চাষের সাথে জড়িত রয়েছে।

কামরুল বলেন, এখানে অন্যান্য মৎস্য চাষীরা প্রতি একর প্রকল্প থেকে বছরে ১৫-১৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন। আমি আধুনিক প্রদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রতি একর প্রকল্প থেকে বছরে ২৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করি। আমার কিছু নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে মাছ চাষ করি।

তিনি আরও বলেন, গত এক বছর ব্যবসার অবস্থা খুব খারাফ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে মাছের দাম একেবারে কমে গেছে। এখনো পর্যন্ত মাছের ভালো দাম পাচ্ছি না। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া ফিডের মূল্য প্রতিকেজিতে ৪/৫ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেকে মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাছাড়া মাছের সঠিক রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। পোলট্রিতে যেমনি মুরগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু মাছ কোন রোগে আক্রান্ত হলে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে ৫ হাজার টাকার খরচের বিপরিতে লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তাই উপজেলা ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ করছি মাছের সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, মাছ চাষ করে কোটিপতি হয়েছেন কামরুল হোসেন। কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন, একটি মাছের খাদ্যের দোকান দিয়েছেন। ভাইদের ব্যবসায় সম্প্রক্ত করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০১৯ সালে মিরসরাই উপজেলার শ্রেষ্ঠ চাষীর পুরস্কার লাভ করেন তিনি। সফল মৎস্য চাষী কামরুল হোসেন উপজেলার ৫ নম্বর ওছমানপুর ইউনিয়নের বাঁশখালী গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে।

ওছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, মাছ চাষ করে কামরুল এখন জিরো থেকে হিরো। সে তার কিছু নিজস্ব কৌশলে মাছচাষ করে অন্য চাষীদের চেয়ে বেশী মাছ উৎপাদন করে। সে নিয়মিত মাছের পরিচর্চা করে। পানি ও মাটির গুনাগুন বুঝে প্রকল্পে যখন যা দরকার তা প্রয়োগ করে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, কামরুল একজন সফল মৎস্যচাষী। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় শত শত মৎস্য চাষীদের মধ্যে তিনি ব্যতিক্রম। মাছচাষে সে অনেক দক্ষ। মাছের গুনাগুন বুঝে সে খাদ্য প্রয়োগ করে। এতে করে সে অন্যদের চেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, পোলট্রি ও ডেইরীতে সহজে রোগ নির্ণয় করে যেভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় মাছের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তাই মাছের রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে চাষীদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এছাড়া আমাদের লোকবল সংকট, উপজেলাতে পরীক্ষার জন্য ল্যাব না থাকায় সহজে রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে না।

 
Electronic Paper