ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তা আজিজুর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৫:২১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১

ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তা আজিজুর

পরিকল্পনা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ নিয়ে পড়াশোনা করার। সে মোতাবেক সুযোগও হয়ে যায়। ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। এবার অন্যদের মতোই চাকরি, পরিপাটি অফিস কক্ষ, রুটিন মাফিক জীবনে পদচারনা করার পালা। কিন্তু কোথায় যেন একটা পিছুটান কাজ করে তার। সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং এর জটিল সব টার্ম নিয়ে পড়াশোনা শেষ করা যুবকটির মাথায় সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে কিভাবে চাকরি না করে ভিন্ন কিছু করা যায়। থাকা যায় নিজ গ্রামে, প্রকৃতির ছোঁয়ায়।

শুধু নিজের জন্যই নয়। বরং তার মাথায় অনবরত একটি বিষয় খোঁচা দিতে থাকে। কি করলে নিজের পাশাপাশি অন্য বেকার যুবকদেরকেও কাজ দেয়া যায়। স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। এমন মহৎ ভাবনার যুবকটির নাম আজিজুর রহমান।

নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের প্রবাসী আব্দুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান আজিজুর রহমান বলেন, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা-মা কখনই কিছু চাপিয়ে দিতেন না। সবসময় আমার নিজের ইচ্ছাকেই অগ্রাধিকার দিতেন। এ ব্যাপারে বাবার ভূমিকাই মুখ্য বলা যায়। আজিজুর নিজ জেলা থেকে শুরু করে ঘুরলেন আরও কয়েকটি জেলা। টান তার কৃষির দিকে। কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, কিভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে কৃষির উৎপাদন বাড়ানো যায় সেদিকেই তার সকল আগ্রহ।

কিভাবে শুরু হলো এদিকে পথ চলা? কিম্বা বর্তমানের সে ইচ্ছের বাস্তবায়নই বা কতটুকো হয়েছে ?
এমন সব প্রশ্নে আজিজুর হেসে বলেন, শুরুতে অনেকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। বলতো- পড়াশোনা শেষ করে ভালভাল চাকরি সুযোগ ছেড়ে কেউ কোনদিন এভাবে কৃষি কাজে নামে?
আমি তাদের কথায় কিছু মনে না করলেও আরও বেশী আগ্রহী হয়ে উঠি। আমাকে সফল হতেই হবে। অন্যদেরকে নিয়ে এগোতে হবে।

“ ডিপ্লোমা শেষ করে আর দশজন যুবকের মতো আমিও চাকরি খুঁজি। এক সময় পেয়েও যাই। যোগদান করি। কিন্তু নিজের মধ্যে সবসময় কিছু একটা করার তাড়না অনুভব করতে থাকি। যেখানে আমিসহ আরও অনেকেই আমার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সে চিন্তা থেকে আজকে আমার কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া শুরু। চাকরি ছেড়ে দেই। শুরুতে অনেকের নেতিবাচক কথা শুনলেও আমার বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ২০১৭’র শেষ দিক। পরীক্ষামুলক দুই বিঘা জমিতে সীডলেস লেবু বাগান করি। এটাই শুরু। বুঝতে পারি এখানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শুরু করি মিশ্রভাবে কমলা, মাল্টা, শরিফা, পেয়ারার চাষ। যদিও আমার অভিজ্ঞতার অভাবে শুরুতে হোঁচট খেতে হয়েছে বেশ। তবে আমি থামিনি। অন্যান্য জেলায় যারা এসবের চাষ করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। নেই ট্রেনিংও যা এখনো চলমান আছে। কেমন যেন একটা নেশার মতো। বাগানের একেকটা গাছ নিজের সন্তানের মতো লাগে । “
কথাগুলো বলার সময় আজিজুরের চখ ছলছল হয়ে ওঠে আবেগে। নিজেকে সামলে নিয়ে ফের বলতে শুরু করেন-

“এখন আমার বাগানে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুল, কাশ্মীরি আপেলকুল, দেশি নারকেলি কুলের চাষ হচ্ছে। দেশি- বিদেশি সবজি চাষ হচ্ছে। স্কোয়াশ ,ক্যাপসিকামসহ ডায়াবেটিকস প্রতিরোধী ফল পেপিনো মেলন পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছি। আস্তে আস্তে আমার প্রোজেক্টের পরিধি দাঁড়িয়েছে ৯ বিঘায । এখন আমার প্রোজেক্টে দেশি-বিদেশি ফল ও সবজির চারা উৎপাদন হচ্ছে । আমার প্রোজেক্টে ৩ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করে। প্রয়োজন অনুসারে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করে। বর্তমানে আমি বাৎসরিক ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করি”।
আজিজুরের বাগান দেখে এবার ওঠার পালা। চোখ জুড়ানো সবুজ গাছ। নানান রকম ফলফলাদি। আরো কিছুক্ষণ থাকতে ইচ্ছে জাগে এ প্রতিবেদকের।
“ও ভাল কথা। আপনার এই প্রোজেক্ট্র নাম কি”?

এক গাল হেসে আজিজুর রহমান বলেন, ড্রিম এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারি। যা শুধু আমাকে নয় স্বপ্ন দেখাচ্ছে অন্যদেরকেও।
ব্যক্তি জীবনে এক ছেলের জনক আজিজুর রহমান বারবার তার পরিবারের কথা বলছিলেন। বলছিলেন, বাবা মা’র সহযোগিতায় তার এতদূর আসার গল্প। এগিয়ে যেতে চান আজিজুর আরও বহুদূর…

 
Electronic Paper