ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নীলফামারীতে বোরো আবাদে নতুন প্রযুক্তি

বাঁচবে সময় বাড়বে ফসল

মোশাররফ হোসেন, নীলফামারী
🕐 ১২:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২১

নীলফামারীতে বোরো আবাদে নতুন প্রযুক্তি

বোরো ধান আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীলফামারী সদরের তরণীবাড়ি গ্রামে স্বল্প সময়ে চাষাবাদ নামের নতুন এক পদ্ধতিতে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি চলছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবেন বলে জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ওই গ্রামে ৫০ একর জমিতে বোরো আবাদের জন্য সাড়ে চার হাজার ট্রে-তে বোরো বীজতলা তৈরি হয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভ করতে সক্ষম হবেন কৃষক এবং বোরো ফসলে তাদের আগ্রহ বাড়বে।

তরণীবাড়ি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম রায় সমন্বয় চাষ পদ্ধতির উপযোগিতা সম্পর্কে বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে বীজ বপন করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ফ্রেমের পাত্র বা ট্রের প্রতিটিতে উৎপাদন মাধ্যম ব্যবহার করে বীজতলা তৈরি করা হয়। তিন ভাগের দুই ভাগ অনুপাতে মাটি ও এক ভাগ গোবর মিশিয়ে উৎপাদন মাধ্যম তৈরি করা হয়। এই মাটি মাধ্যম ট্রেতে বিছিয়ে এরপর তাতে বীজ ছিটিয়ে দিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির ৩ দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এখন বীজতলার বয়স চলছে ২১ দিন। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ কাজ শুরু করা হবে জমিতে। এ পদ্ধতিতে কৃষক ভালোমানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে রোপণ করতে পারবেন।

এই কর্মকর্তা জানান, এই ব্লকে পরীক্ষামূলকভাবে ৭৭ কৃষক সরকারের এই প্রণোদনার আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে ২২ জন নারী কৃষক রয়েছেন। তিনি বলেন, বোরো ধান করার জন্য প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার ৫০০ ট্রে-তে বীজতলা তৈরির লক্ষামাত্রা নেওয়া হয়েছে। এটি অর্জনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বর্তমান সরকারের এ কার্যক্রমে সহজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের অধিক ফলন ঘরে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তরণীবাড়ি ব্লকের কৃষক মোস্তফা, নুর আমিন, বিধান চন্দ্র রায়, জাহাঙ্গীর আলম, সামছুল ইসলাম, নুরনাহার ও অন্য কৃষকরা বলেন, সেচের অভাবে সব জমিতে বোরো আবাদ করা যায় না। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ‘সমলয়ে চাষাবাদ’ নামে নতুন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে। আমাদের কাছে এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন। সরকারের এ নতুন পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা ভালো চারা ও অধিক ফলন পাব বলে আশা করছি। তারা আরও জানান, এবার আমনের ধানের বাজার অনেক ভালো। তাই এলাকার সব কৃষক বোরো ধান আবাদে বেশি মনোযোগী হয়েছে। এ পদ্ধতিতে স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও দেশের খাদ্য জোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নীলফামারীর উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধান ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব।

উপ-পরিচালক বলেন, সফলভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে নীলফামারী সদর উপজেলার তরণীবাড়ি ব্লকে ৫০ একর জমিতে প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় কৃষক বোরো বীজ সার ও ফসলের উপকরণ পাবে। প্রদর্শনীতে আবাদ ও উৎপাদনে সাফল্য পেলে এই অঞ্চলে বোরো আবাদে কৃষকের আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করা যায়।

 
Electronic Paper