ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জমে উঠেছে মেলান্দহের বেগুনের হাট

মিঠু আহমেদ, জামালপুর
🕐 ৩:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৭, ২০২১

জমে উঠেছে মেলান্দহের বেগুনের হাট

জামালপুরের মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বেগুনের বাজারে বড় বড় স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। এবার এ উপজেলায় বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। সারা দেশে এ বেগুনের চাহিদা থাকায় বসেছে বেগুনের হাট। হাটে বেগুনের দামও বেশি। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে এ উপজেলার কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। প্রতিদিন দুপুর একটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বেগুনের হাট। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার বেগুনের খ্যাতি সারা দেশেই রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। ‘পুরো উপজেলায় এবার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে বেগুন চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই একটি খোলা মাঠে বসেছে বেগুনের হাট। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বেগুন নিয়ে হাটে আসছেন। কৃষকরা ঘোরার গাড়ি, ভ্যানগাড়ি ও খাচায় করে হাটে বেগুন নিয়ে আসছেন। দুপুরের পরেই পুরো হাট বেগুনে ভড়ে যায়। এরপর শুরু হয় বেচা-বিক্রি। পাইকার ও শ্রমিকরা বেগুন কিনে বস্তা ভর্তি করতে ব্যস্ত। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় নেওয়ার জন্য পাইকাররা ট্রাক ভর্তি করছেন।

কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলান্দহ উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকার কারণে এক সময় নদটি ছিল প্রচন্ড খরস্রোতা। তবে যমুনার সঙ্গে এখন আর সংযোগ নাই। কিন্তু মেলান্দহের পূর্ব অঞ্চলের টুপকার চর, বালুর চর, ৪নং চর, ২নং চর ও ৫নং চরসহ বিন্তীর্ণ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে পলিমাটি পড়ে যায়। ওই থেকে কৃষকরা ওইসব চরে বেগুনের চাষ করে আসছে। ধীরে ধীরে বেগুন চাষে খ্যাতি অর্জন করে এ উপজেলার কৃষক। নভেম্বর থেকে বেগুন বিক্রি হয়ে চলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই তিন মাস রেলওয়ে স্টেশনের সামনেই বসে বেগুনের হাট। শুরুর দিকে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বাজার খুব ভালো পাচ্ছেন কৃষক। গত বছর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণপ্রতি।

টুপকার চর গ্রামের কৃষক মনহর মিয়া বলেন, তিনি এবার ৬০ শতাংশ জমির মধ্যে বেগুন চাষ করেছিলেন। এতে তাঁর ২৫ হাজার টাকা খচর হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি ৭৬ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। এখন আরও ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন। হাটে ভালো দাম পেয়ে তাঁর মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছরের চেয়ে এবার তিনি মণপ্রতি ৫০০ টাকা করে দাম বেশি পেয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন তিনি এ হাটে বেগুন বিক্রি করতে আসেন।

নেত্রকোনা জেলা থেকে আসা বেগুনের পাইকার রাফি তালুকদার বলেন, এ অঞ্চলের বেগুন দেখতে সুন্দর ও খেতেও খুব সুস্বাদু। ফলে বাজারে এ বেগুনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রত্যেক বছর এ অঞ্চলের বেগুন কিনে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এতে ভালোই লাভ পান তিনি। তিনি প্রায় প্রত্যেক দিন এ বাজার থেকে এক ট্রাক করে বেগুন কিনে নিয়ে যায়।

মেলান্দহ রেলওয়ে স্টেশন হাট কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রশিদ বলেন, পুরো তিন মাস ধরে এ হাটে শুধু বেগুন বেচা-বিক্রি হবে। প্রত্যেক দিন এ হাটে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ বেগুন বিক্রি হয়ে থাকে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এ হাটে বেগুন কিনতে আসেন। তাঁরা এ হাট থেকে বেগুন কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যান। সরাসরি পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে বেগুন কিনায় কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। গত বারের চেয়ে এবার বেগুনের দাম অনেক বেশি।

মেলান্দহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান বলেন, ‘পুরো উপজেলায় এবার ৫৫০ হেক্টর জমির মধ্যে বেগুন চাষ হয়েছে। এতে কৃষক এবার ভালো লাভ পাবেন। এ বেগুন-দেখতেই সুন্দর নয়, খেতেও সুস্বাদু। ফলে মেলান্দহের বেগুন সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এ এলাকার কৃষকের কাছে বেগুন এখন অন্যতম অর্থকরী ফসল। বেগুন চাষ করে কৃষক এখন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেক কৃষকের স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।’

 
Electronic Paper