ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরাপদ সবজির শুশুলী

এস. এম. রকি, খানসামা
🕐 ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ০৪, ২০২০

বর্তমান সময়ে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার শুশুলী গ্রামের কিষাণ-কিষাণিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভোক্তাকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়ানোর সংকল্প নিয়েছেন তারা। শীত মৌসুম থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে এবং রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়াই নিরাপদ সবজি চাষাবাদ করছেন তারা। মানুষকে বিষমুক্ত শাকসবজি খাওয়াতে পারছেন- এই ভেবেই তারা আনন্দিত।

এই কৃষকেরা সবাই দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের শুশুলী গ্রামের বাসিন্দা। তাদের প্রচেষ্টার কারণে গ্রামটি এখন ‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে। মোট ১২০ জন কিষাণ-কিষাণী এবার তাদের জমিতে চাষ করেছেন বিষমুক্ত করলা, বেগুন, শসা, চাল কুমড়া ও পটল। 

সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের চারদিক সবুজ সবজির ক্ষেতে ভরা। কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রশংসনীয় এই উদ্যোগের ফলে শুশুলী ও ফরিদাবাদ এবং বাসুলী গ্রামের ৩৫ একর জমিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। জমিগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে সেক্সফেরোমন ফাঁদ। এটি হচ্ছে কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বাক্স ব্যবহার করা হয়। যার দুপাশে তিন কোণা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত এক রকম রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। এতে জমির ফসল নিরাপদ থাকে। অতীতে এসব কীট দমনে ব্যবহার হতো বিষাক্ত কীটনাশক।

সেক্সফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকছে। এছাড়াও তারা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করছে জৈব সার ও ভার্মি কম্পোষ্ট সার। এতে খাদ্যমান ও পুষ্টি সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

চাল কুমড়া চাষি রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমরা জমিতে কীটনাশক দিয়ে শাকসবজি আবাদ করেছি। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানতে পারি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা কমে যায়। বর্তমানে আমাদের গ্রামের সবাই নিরাপদ সবজি চাষাবাদে সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।’

কৃষক ধরনী রায় বলেন, বাজারে বিষমুক্ত সবজির দাম চাহিদা ও বেশি হওয়ায় অল্প খরচে ভালো টাকা উপার্জন সম্ভব হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় নিরাপদ সবজি গ্রাম করার বিভাগীয় নির্দেশনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাসুলী, শুশুলী ও ফরিদাবাদ গ্রামের কৃষদের সংগঠিত করে জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত ফসল উৎপাদনের সুফল বুঝতে পেরে কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এই কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদ জৈবিক উপকরণ সরবরাহে সহযোগিতা করেছে। এছাড়াও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষিবিদ আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, খানসামায় বর্তমানে কৃষি বিভাগের সহায়তায় নিরাপদ সবজির চাষাবাদ করা হচ্ছে। এটি ইতিবাচক দিক। কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজির সঠিক মূল্য প্রাপ্তি ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper