ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যশোরে পাট নিয়ে বিপাকে চাষি

যশোর প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০১৮

যশোরে সোনালি আঁশ পাট নিয়ে এবারো বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বৃষ্টির অভাবে খাল-বিল, ডোবা, নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট পচাতে পারছেন না। ফলে পাট নিয়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে যশোরের ৮ উপজেলায় ৩ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। এ বছর ১৪শ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা দরপতনকে দায়ী করছে। তাদের মতে, পাটের মূল্য কমসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অধিকাংশ কৃষকই এখন পাটের বিপরীত অন্য চাষ করছে। আর এ পাট নিয়েও রীতিমতো হতাশ কৃষকরা। বিশেষ করে পর্যাপ্ত পানির অভাবে তারা পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, গত বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির কারণে বীল হরিনার বিল পানির নিচে ছিল। যে কারণে তারা ক্ষেতেই তাদের পাট জাগ দিয়েছিল। কিন্তু এ বছর আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় এলেও যশোরাঞ্চলে প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিলে পানি আগের মতো পানি না থাকায় তারা পাট জাগ দিতে পারছেন না।
চাষি কালিপদ দাস জানান, গত বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলেন। পাটের দাম ভালো না পেয়ে বিঘাপ্রতি তিন থেকে চার হাজার লোকসান করেছিলেন। তাছাড়া পানির অভাবে শুরুতেই পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা নিশ্চিত পাট নিয়ে এবারও পথে বসব।
চাষিরা জানান, পাটের ভালো দাম পেতে হলে রং ভালো হতে হবে। আর ভালো রং পেতে হলে খাল-বিল, নদী-নালায় পাট পচাতে হবে। তবে এ বছর বৃষ্টির অভাবে খাল-বিলে পানি নেই। ডোবা-নালায় সামান্য পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে মানসম্মত পাট উৎপাদন নিয়েও চাষিরা শঙ্কিত রয়েছেন তারা।
তিনি জানান, শ্রাবণ মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে কৃষককে কষ্ট করা লাগবে না। এ বছর পাটের দাম বাড়বে বলেও তিনি আশা কেেরন।
ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে উৎপাদিত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পাট ও পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। এসব পাট সময়মতো বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক সংকটে পড়েছে পাটকলগুলো।
সূত্রটি জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পাটক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট লাখ ৩৫ হাজার ২৫২ কুইন্টাল। এর মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত পাট ক্রয়ে করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ২৬৭। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে আট লাখ ৪৭ হাজার ৬৯০ কুইন্টাল। গত অর্থবছরে ক্রয় করা পাট মিলিয়ে ১১ জুলাই পর্যন্ত মিলগুলোতে পাট রয়েছে দুই হাজার ১৪৭ কুইন্টাল। ফলে এ বছর মিল মালিকরা বাজার থেকে পাট কিনবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর যশোরাঞ্চলে পাটের আবাদ কিছুটা কম হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোরের ৮ উপজেলার চাষিরা তাদের ক্ষেতের পাট কাটতে শুরু করেছেন। তবে পানি অভাবে পাট পচাতে কিছুটা সমস্যা হলেও সামনে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

 
Electronic Paper