কৃষি শ্রমিক সংকটে চলনবিলের চাষিরা
নাটোর প্রতিনিধি
🕐 ৩:২১ অপরাহ্ণ, মে ০৫, ২০১৮
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারছেন না নাটোরের চলনবিল এলাকার চাষিরা। বৃষ্টির কারণে অনেক জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির আঙিনায় কেটে রাখা ধানের গাছ বের হচ্ছে।
বৃষ্টি ছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করছে। ফলে অনেক এলাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষিরা পানির নিচের আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এসব এলাকায় কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের এই সময়ে চলনবিলে হঠাৎ বন্যার কারণে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যায় অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। পাশাপাশি বাদাম, ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়। সে সময়ও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান ঘরে তুলতে বেগ পেতে হয় তাদের। একই বছরে বোরো ধানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার রোপা-আমন ধানের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে। চলনবিলের অন্তত ৪০ হাজার চাষির ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চলনবিলের চাষিদের। সে সময় সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি অন্তত আট হাজার চাষিকে কৃষি সহায়তা হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৭-১৮ মৌসুমে আবারও বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। গত তিন মৌসুমে একটানা ক্ষতির কারণে অনেকটা দিশেহারা এই অঞ্চলের চাষিরা।
সরেজমিন দেখা যায়, টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করার কারণে চলনবিলের চৌগ্রাম, সারদা নগর, হুলহুলিয়া, ডাহিয়া, ডেহবাড়িসহ বিভিন্ন মাঠের বোরো ধান ডুবে গেছে। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব এলাকার চাষিরা। এতে নিচু এলাকার অনেককে নৌকা নিয়ে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতে দেখা গেছে।
চলনবিলের চাষিরা জানান, গত শনিবার থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শিলাঝড় হচ্ছে। ফলে বোরো ধানকাটা শুরু হলেও তা ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধানকাটা শ্রমিকরা বৃষ্টি দেখে বাড়ি চলে যাওয়ায় ধানকাটা শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এরপরও যেসব চাষি ধান কেটেছেন বৃষ্টি ও শ্রমিক সংকটের কারণে তারা তাদের কাটা ধান বাড়িতে আনতে পারছেন না। এদিকে বৃষ্টির কারণে ধান মাড়াই এবং শুকানোর জায়গা ডুবে যাওয়ার চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
চলনবিলের হুলহুলিয়া গ্রামের কৃষক তৌফিক পরশ জানান, গত শনিবার থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার কারণে কোনো চাষি ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
চৌ গ্রামের কৃষক সোহেল হোসেন জানান, গত বছরের এই সময় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারণে চলনবিলের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এবারও একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যে ধানকাটার কারণে আগে যে ধানের দাম ৮০০ ছিল এখন সে ধান ৬০০ টাকায় নিতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের কারণে বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষকদের চরম বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের হিসাব অনুযায়ী চলনবিলে অন্তত ৬০ শতাংশ জমির ধান ঘরে তুলেছেন চাষিরা। বন্যার পানি আসলে গত বছরের মতো ক্ষতি হবে।