ইক্ষু-গুড় উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অনেক জমিতে এখন চাষ হচ্ছে ইক্ষু। একসময় যেসব জমিতে তামাক চাষ করে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তেন, বর্তমানে সেই জমিতেই ইক্ষু চাষ করে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় নেমেছেন তারা। শুধু ইক্ষু চাষ করেই কাজ শেষ নয় এখন ইক্ষু থেকে গুড় উৎপাদন করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক।
জেলার হানসামাপাড়া, বাঘমারা, জামছড়ি, বালাঘাটা, মুসলিমপাড়া, লেমুঝিড়ি, ভরাখালিসহ বিভিন্ন কৃষি জমিতে এখন সিও-২০৮, রংবিলাস-৪২, বি এস আর আই, অমৃতসহ নানা জাতের ইক্ষু চাষ হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা সদর ছাড়াও এখন রোয়াংছড়ি উপজেলা, লামা এবং আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে চলছে ইক্ষুর চাষ। একসময় পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তামাক চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলে এখন অনেক চাষিই ইক্ষু চাষ করে জীবন নির্বাহ করতে শুরু করেছেন। ইক্ষু চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকায় কৃষকেরা এখন পাহাড়ের বিভিন্ন জমিতে ইক্ষু চাষ করছেন আর ভালো ফলন হওয়ায় বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার হানসামাপাড়ার ইক্ষু চাষি লা মং বলেন, ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট’ বান্দরবানের সহযোগিতায় আমি ৩৩ শতক জমিতে ইক্ষুর চাষ করেছি এবং বিক্রি করে ভালো লাভবান হয়েছি।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার হানসামাপাড়ার আরেক চাষি মং এ নু মার্মা বলেন, আগে তামাক চাষ করতাম, বছর শেষে লাভ কম হতো আবার ক্ষতিও হতো বেশি। এখন পাহাড়ে ইক্ষু চাষ করছি উৎপাদনও হচ্ছে ভালো।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে ইক্ষু একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
কৃষকেরা জানায়, প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইক্ষু চাষিদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও আপদনাশক দেওয়া হয়। আর ইক্ষু চাষে রোগ বালাই কম হয় এবং বিক্রি করেও লাভ হচ্ছে ভালো। অন্যদিকে এখন ইক্ষু থেকে গুড় উৎপাদন করে প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিয়ে চাষিরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানায়, প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইক্ষু চাষিদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও আপদনাশক দেওয়া হয়। এছাড়া ইক্ষু চাষে রোগ বালাই কম হওয়ায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন বেশিরভাগ কৃষক তাই কিছু কৃষক এখন ক্ষতিকর তামাক চাষ ছেড়ে ইক্ষু চাষ করছেন।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান সাব-স্টেশনের বৈজ্ঞানিক সহকারী মং থোয়াইচে মার্মা বলেন, আমরা সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান সাব স্টেশনের মাধ্যমে ইক্ষু চাষিদের বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছি। বান্দরবানের পরিবেশ ও প্রকৃতি ইক্ষু চাষের জন্য বেশ উপযোগী।এ জেলায় আগামীতে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণ হবে বলে আমাদের আশাবাদী।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান সাব-স্টেশনের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ কৃষিবিদ ক্যছেন জানান, সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮-১৯ রোপণ মৌসুমে বান্দরবানে ৫৭০ হেক্টর জমিতে ইক্ষু আবাদের বিপরীতে ৮৩ হাজার ৬২২ মেট্রিক টন ইক্ষু উৎপাদন হয় আর ২০১৯-২০ রোপণ মৌসুমে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩০ হেক্টরে চাষাবাদ হয় আর তা থেকে ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ইক্ষু উৎপাদন হওয়ার আশা রয়েছে।
কৃষিবিদ ক্যছেন আরও জানান, বর্তমানে প্রায় ৪শ জন চাষি বান্দরবানে ইক্ষু চাষ করছেন এবং অনেক চাষিকে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান সাব-স্টেশনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বান্দরবানে গুড়ের চাহিদা প্রায় ৩৩ মেট্রিক টন কিন্তু এখানে গুড় উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮/৯ মেট্রিক টন আর এই ঘাটতি পূরণের জন্য একটি সুর্বণ সুযোগ ইক্ষু চাষের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন করা।
ইক্ষু চাষিদের প্রত্যাশা পার্বত্য এলাকায় কৃষকদের ইক্ষু চাষের ব্যাপক প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা ও কৃষিঋণ গ্রহণে সহজলভ্যতা সৃষ্টি করতে পারলে এই এলাকায় আরও ব্যাপক আকারে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারিত হবে।