ফুলে ভরা জীবন
ফরিদপুর প্রতিনিধি
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২০
চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে অনেক ছুটেছেন তিনি। কিন্তু সেই সোনার হরিণ মেলেনি। এতে খানিকটা বিষণ্ন হয়েই শেষ পর্যন্ত কিছু একটা করার তাগিদে শুরু করেন ফুল চাষ। চাকরি না পেয়ে যে বেদনা মনে জেঁকে বসেছিল তা কেটে গেছে এবং তার জীবন এখন ফুলে ভরা।
এই ফুলই খুব অল্পদিনেই হাসি ফুটিয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের লিয়াকত হোসেনের মুখে। তিনি এখন স্বাবলম্বী ও সচ্ছল। এক সময় তিনি চাকরি খুঁজেছেন আর এখন চাকরি দেন।
আলীয়াবাদে খুশির বাজার এলাকায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে মাত্র ৫২ শতাংশ জমিতে বড় ভাই আনোয়ার হোসেনের সহযোগিতায় জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেন লিয়াকত। ২০১৯ সালে ব্যবসা ভালো হওয়ায় আরও ৭৫ শতাংশ জমি নিয়ে এখন মোট ১২৭ শতাংশ জমিতে ফুল চাষ করছেন সাবেক ছাত্রনেতা লিয়াকত হোসেন।
জারবেরার পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ফুল চাষ করছেন তিনি। নতুন করে গোলাপ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। তার ফুল চাষ দেখে এখন এলাকার অনেকেই ফুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
এখানকার ফুল চাষিদের টার্গেট ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে। কারণ, এ মাসে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। একদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, অন্যদিকে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।
লিয়াকত হোসেন বলেন, প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি ফুলের চাষ শুরু করেন। এখন তার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা। যা তিনি গত দেড় বছরের লাভ থেকে করেছেন। তার বাগানের ফুল ফরিদপুর ও আশপাশের জেলা ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, অনার্স ও এলএলবি শেষ করে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেও তা ভাগ্যে জোটেনি। পরে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সাভারে গিয়ে ফুলচাষের কাজ শিখে ফরিদপুরে চলে আসেন। এরপর যশোর ও ভারত থেকে সাত হাজার জারবেরা ফুলের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন। এখন তার বাগানে শুধু জারবেরাই নয় হাজার ছাড়িয়েছে। তার এখানে এখন কাজ করছেন এলাকারই কয়েকজন।
লিয়াকত হোসেন বলেন, আদর্শ ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করায় গাছে ভালো ফুল হচ্ছে। চোখ জুরানো হৃষ্টপুষ্ট ফুলে দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এখন আমাদের ফুল হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসকে সামনে রেখে। এ মাসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে।
আলীয়াবাদের আরেক ফুলচাষি আবু সাইদ মণ্ডল বলেন, চাকরির পিছে ছুটে ব্যর্থ হয়ে ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন লিয়াকত। এলাকার একজন সফল মানুষ তিনি। তাই লিয়াকতের চাষ করা ফুলের পাশাপাশি তাকে দেখতে এবং তার সঙ্গে কথা বলতে আসে মানুষ।
ফুলের বাগান দেখতে আসা রেজাউল করিম বিপুল বলেন, আমার মতো অনেকেই বিকেলে এ এলাকায় আসেন ফুল দেখতে। অনেকেই পরিবারের জন্য ফুল কিনে নিয়ে যান।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলায় কয়েকটি স্থানে ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল চাষে কেউ সমস্যা দেখলে যদি যোগাযোগ করেন তাহলে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।