আলপনার কৃষি ক্ষেত
এম. ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০২, ২০২০
শক্ত মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোই চাষির কাজ। কিন্তু সেই মাঠে ফলানো ফসলে যদি থাকে শিল্পের ছোঁয়া, ফসল দিয়ে আঁকা হয় আলপনা-তবে সেটা ভিন্ন এক আমেজ বহন করে। এমনই শৈল্পিক দৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন আলপনা এঁকে মাঠে ফসল ফলিয়ে আলোচনায় এসেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কাদির।
কৃষি জমিতে বিভিন্ন নকশা করে রবিশস্য চাষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছেন কৃষক আব্দুল কাদির। ফসলের মাঠে নিজের নাম এবং ভালোবাসার লাভ চিহ্ন আঁকায় এলাকায় অনেকেই তাকে প্রেমিক পুরুষ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ এসে তার সঙ্গে ছবিও তুলছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কাঁচা মাটিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে পলীমাটির উর্বর জমিতে তিনি সরিষাসহ বিভিন্ন শাকসবজি ও রবিশস্য চাষ করেছেন। উপজেলার পাড়াখালবলা গ্রামের হাজী তারা মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র সৃষ্টিশীল মনের অধিকারী কৃষক আব্দুল কাদির নিজের ৩৫ শতক জমিতে কারুকার্যের মতো ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। জমিতে বারী-১৫ জাতের সরিষা বীজ বপন করেন।
জমিতে সেই বীজ গজানোর পর পুরো ক্ষেত যেন জীবন্ত ছবির রূপ ধারণ করে। কৃষক কাদির জানান, কৃষি কাজকে কেউ কেউ কাজ মনে করে না; কেউ সম্মানও করে না। আর এ কাজ করে তেমন আনন্দও পাওয়া যায় না। কিছুটা আনন্দ পাওয়ার জন্য আমার ফসলি জমিতে খেয়ালিপনা করে নিজের আবেগ অনুভূতি ও আমার জীবনের কিছু স্মৃতি তুলে ধরেছি। জমির বুকে চিত্রাঙ্কন করে সরিষা বুনি।
তিনি জানান, গ্রামে একটি ক্লাব আছে। আমি এ ক্লাবের উপদেষ্টা। আমার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ক্লাবের অন্য সদস্যরা এ কাজের ব্যাপারে সহযোগিতা করে। ক্লাবের কেউ একজন আমার ক্ষেতের ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়। তারপর থেকে আমার ক্ষেত নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এমন হবে-আমি ভাবিনি।
ক্ষেতের মাঝখানে ফসল দিয়ে অঙ্কিত বড় আকৃতির লাভ চিহ্ন, দুপাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে আরও চারটি ভালোবাসার প্রতীকী চিহ্ন।
কাদির জানান, নৌকা হলো আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও গণমানুষের প্রতীক। শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। ফুল আমার ভালো লাগে। ভালোবাসার চিহ্ন হচ্ছে আমার জীবনের মধুর স্মৃতি। আমার স্ত্রী যাকে নিয়ে আমি সংসার করছি। তাকে বিয়ে করার আগে তার সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। তখনকার যুগে মুঠোফোন না থাকায় চিঠিতে আমাদের যোগাযোগ হতো। আমি যখন তাকে চিঠি দিতাম। তখন চিঠির চার কোণায় চারটি লাভ চিহ্ন একে মাঝখানে একটি বড় লাভ এঁকে আমার নাম লিখে দিতাম। তাই আমি এগুলো এঁকেছি।
স্বামীর ভালোবাসার এমন বহিঃপ্রকাশে কিছুটা লজ্জা প্রকাশ করে কৃষক কাদিরের স্ত্রী মুর্শিদা আক্তার বলেন, আল্লাহর রহমতে আমি আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে আছি। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।
উপজেলার আঠারো বাড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল হক ইমরান বলেন, পাড়াখালবলা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষক আব্দুল কাদিরের এমন শৈল্পিক কাজের জন্য কৃষক সমাজ ও আমারা যারা কৃষি সেবা দিয়ে থাকি, তারা সম্মানিত হয়েছি।