ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষকদের জন্য চালু হচ্ছে ‘শস্য বীমা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯

কৃষকরা আমাদের জন্য শস্য ফলায় মনের আনন্দে, হাসি মুখে। কিন্তু তাদের জন্য ভাববার মত কেউ নেউ। তাদের জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। তবে এবার নতুন বছর শুরু হবে কৃষকদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে কৃষকদের জন্য ‘শস্য বীমা’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

দেশে জীবন বীমা, সাধারণ বীমা, অগ্নিবীমাসহ বিভিন্ন ধরনের বীমা চালু রয়েছে। অথচ দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে শস্য বীমা নেই। তাই প্রথমে হাওর এলাকায় এ বীমা চালুর মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হবে। পরবর্তীতে পুরো দেশের কৃষকরা এর আওতায় আসবে।

প্রতি বছর বাংলাদেশে কোন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে। এ সময় প্রচুর ফসলহানী হয়। মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যায় কৃষকের অনেক কষ্টের ফলন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শস্য বীমা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে উঠেনি। সর্বশেষ চলতি বছর এ বীমা চালু হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়ে উঠেনি। তবে নতুন বছরের শুরুতেই শস্য বীমা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর থেকে দেশে ‘শস্য বীমা’ চালু করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আগামী বছরে এই বীমা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য এই বীমার আওতায় তাদের নিয়ে আসা হবে। প্রাথমিকভাবে হাওরবেষ্টিত সাত জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শস্য বীমা চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো দেশের কৃষকদের এর আওতায় আনা হবে। শস্য বীমার প্রিমিয়ামের অর্ধেক সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে, বাকি অর্ধেকটা কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জানা গেছে চলতি বছরই শস্য বীমা চালু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সে মতভেদ আর নেই। প্রক্রিয়ার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। ফলে আশা করা যায় আগামী বছরের মাঝামাঝিতে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও দেশে শস্য বীমা চালু করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, এর আগে এ বছরের আগস্ট মাসে শস্য বীমার ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি ধারণাপত্র জমা দেয় সাধারণ বীমা করপোরেশন। ধারণাপত্রে ২০০৪, ২০১০, ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিভিন্ন বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বোরো ধান তোলার ১৫-২০ দিন আগে আকস্মিক বন্যায় এসব এলাকার সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে যায়। ২০১৭ সালের বন্যায় হাওর এলাকার সাতটি জেলার মোট উৎপাদিত ৫২.৫ লাখ টন ফসলে ক্ষতি হয় ৩৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে শস্য বীমার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুফল পাওয়া যাবে বেশি। তাই বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকেও এর সাথে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সাধারণ বীমা করপোরেশন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ‘আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ পাইলট প্রকল্পের মতোই শস্য বীমা চালু করা হতে পারে। প্রথম দিকে দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি হাওর এলাকায় এটি চালু করা হবে। অর্থাৎ এটিও হবে একটি পাইলট প্রকল্প। এডিবির পাইলট প্রকল্পটিতে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের এক তৃতীয়াংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিয়েছে। এডিবির ‘পাইলট প্রজেক্ট অন ওয়েদার ইনডেক্স বেইসড ক্রপ ইন্স্যুরেন্স’ প্রকল্পের আওতায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিন জেলার ৯ হাজার ৬৪১ জনকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ে প্রিমিয়ামের টাকা আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এডিবির এ প্রকল্পের মতো এই বীমায় প্রিমিয়ামের একটি অংশ পরিশোধ করবে সরকার। আর বাকি অংশ দেবে বীমাগ্রহীতা বা কৃষক। ভারতেও এ ধরনের বীমা রয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে শস্য বীমার ৮০ শতাংশ প্রিমিয়াম ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে থাকে। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের পুনর্বাসনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শস্য বীমা চালু হলে এ খাত থেকে ভর্তুকির টাকা দেয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বীমা সংক্রান্ত যত আইন, বিধিবিধান রয়েছে তা অগ্নি, নৌ, মোটর ও জীবন বীমা পরিচালনার জন্য করা হয়েছে। শস্য বীমার জন্য কোনো পৃথক আইন নেই। এক্ষেত্রে একটি পৃথক আইন করা হতে পারে। কৃষকদের বীমার প্রতি আস্থা তৈরিতে কৃষি ব্যাংক, এনজিও ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করা হতে পারে।

তিনি বলেন, এসব সংস্থা ও ব্যাংক কৃষকদের ঋণের শর্তে শস্য বীমার প্রিমিয়াম আদায় করবে। এতে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম আদায় সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যেসব কৃষক এসব সংস্থা কিংবা ব্যাংকের সাথে জড়িত নয় তাদেরকেও শস্য বীমার আওতায় আনা হবে। এর ফলে প্রতি বছর কৃষকের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা থেকে তারা চিন্তামুক্ত হবে।

 

 
Electronic Paper