ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারতীয় চিংড়ি উৎপাদন

খুলনা প্রতিনিধি
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৮

চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান চাষি ও ব্যবসায়িরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার গত ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে সবধরনের মাছ ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই এ সময় দেশের সব হ্যাচারিতে চিংড়ি পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকার কথা। অথচ এ সময় অসাধু চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী ও হ্যাচারি মালিক অবৈধভাবে জীবাণুযুক্ত নপলি দিয়ে পোনা উৎপাদন করে তা বিভিন্ন ঘেরে সরবরাহ করছে। 

চিংড়ি চাষিদের মতে, নিম্নমানের চিংড়ি পোনা (নপলি) ঘেরে ছাড়ার কারণে দেখা দিচ্ছে ভাইরাসসহ নতুন রোগ-বালাই। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিংড়ি চাষিরা।
এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট লবণ পানির চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ অঞ্চলের প্রায় দেড়লাখ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। ১৯৯৫ সালে থাইল্যান্ড থেকে পোনা আমদানি করার পর চিংড়িতে হোয়াইট স্পটসহ (ভাইরাস) বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেওয়ার পর গুরুত্ব বাড়ে মানসম্মত পোনার। নিম্নমানের পোনা ব্যবহার করে টানা কয়েক বছর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চিংড়ি চাষিরা।
গত ২০মে থেকে বঙ্গোপাসাগরে মাছসহ চিংড়ি আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় ৬৫ দিন দেশের সব হ্যাচারিতে চিংড়ি পোনা উৎপাদন বন্ধ থাকার কথা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠিত বেশিরভাগ হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগে উপকূলীয় এলাকার কতিপয় ব্যক্তি ও হ্যাচারি মালিকরা পার্শ্ববর্তীদেশ ভারত থেকে নিম্নমানের জীবাণুযুক্ত নপলি পোনা উৎপাদন করে স্থানীয় বিভিন্ন ঘেরে সরবরাহ করছে।
ঘের মালিক মাসফিয়ার রহমান সবুজ জানান, ‘যে সময়টাই সরকার চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সেই সময়টাই ঘের মালিকদের প্রচুর পরিমাণে পোনার প্রয়োজন হয়। তবে আমরা চাই সরকার নিষেধাজ্ঞার সময়টা আরও ১ মাস পরে নির্ধারণ করুক।
চিংড়ি চাষি গোলাম কিবরিয়া রিপন জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যে পাইকগাছা ও কয়রা এলাকায় সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে শুধুমাত্র পাইকগাছা ও কয়রার জন্য প্রতিদিন ১ কোটিরও বেশি পোনার চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নিম্নমানের নপলি এনে পোনা উৎপাদন করে সরবরাহ করছে। ফলে ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এতে দেশের সম্ভাবনাময় চিংড়ি শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, ২০১৫ সালের ২০ মে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে প্রতিবছর ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ও চিংড়ি আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাইকগাছাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েকটি হ্যাচারি রয়েছে এদের কোনোটার নিবন্ধন নেই। তবে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ের মধ্যে যদি কোনো হ্যাচারি নিম্নমানের নপলি দিয়ে পোনা উৎপাদন করে তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খান কামাল উদ্দীন জানান, চিংড়ি চাষের জন্য গুণগত ও মানসম্মত চিংড়ি পোনার কোনো বিকল্প নেই। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বজায় রাখার জন্য মানসম্মত পোনা ঘেরে মজুদ করা উচিত বলে জানান তিনি।

 
Electronic Paper