ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যশোরে শ্রমিক সংকট ধান নিয়ে বিপাকে চাষি

যশোর ও মণিরামপুর প্রতিনিধি
🕐 ৩:২১ অপরাহ্ণ, মে ০২, ২০১৮

যশোরের মণিরামপুরে চলতি বোরো মৌসুমের মাঝপথে ব্লাস্ট আক্রমণ এবং কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টিতে ফলনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে বাজারদর মোটামুটি ভালো থাকায় চাষিরা আশার আলো দেখতে শুরু করেন।

কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে উচ্চ মজুরি দিয়ে ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। বাজারদর কিছুটা ভালো হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না বলে দাবি কৃষকের।
অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের সুযোগে পৌর শহরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ চা দোকানি, ভ্যানচালক এমনকি গরিব শিক্ষার্থীরাও ধান কেটে বাড়তি রোজগার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার মণিরামপুর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া এবং বীজ, সার, কীটনাশকের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং বাজারমূল্য ভালো থাকায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এবার চাষ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি। উৎপাদনও রেকর্ড পরিমাণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে আবাদে দেখা দেয় গিট ব্লাস্ট রোগ। তার ওপর কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টিতে ধানগাছ পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে কাক্সিক্ষত ফলন না হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য কৃষি অফিসের দাবি, চলতি বোরো আবাদে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ছিল ৬০০ হেক্টর।
মাঠপর্যায়ে পাওয়া তথ্যমতে, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত আবাদের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার হেক্টর। বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধানে এই রোগ ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলে এবার ব্রি-২৮ জাতে ফলন হ্রাস পেয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ধান পেকে যাওয়া এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেত থেকে ঘরে তোলার জন্য রাতদিন সময় পার করছেন চাষিরা। ধানকাটা মৌসুমের শুরুতে বাজারদর কিছুটা হলেও ভালো থাকায় চাষিরা আশার আলো দেখতে শুরু করেন। কিন্তু সে আশার আলো দেখতে না দেখতেই হঠাৎ করেই যেন ম্লান হয়ে পড়েছে। ধানকাটার শেষ পর্যায়ে বর্তমান শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও কিছু সংখ্যক পাওয়া গেলেও মজুরি দ্বিগুণ দিয়ে ধান ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। মনিরামপুর পৌর শহর, রাজগঞ্জ, চিনাটোলা, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, কুয়াদা, খেদাপাড়াসহ বিভিন্ন মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, এসিলাইট মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৭০ টাকা মণ। আবার ব্রি-২৮, ব্রি-৫৮, ব্রি-৫০, ব্রি-৬০ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা মণ। জিরা মিনিকেট এবং সুপার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৬০ টাকা মণ।
মাঝিয়ালী গ্রামের চাষি নিরঞ্জন দাস জানান, ব্লাস্টের কারণে ফলন কাক্সিক্ষত না হলেও বাজারদর কিছুটা ভালো ছিল। বাজারদর ভালো হলে কী হবে- ক্ষেত থেকে ধান ঘরে তুলতে শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আর যা পাওয়া যাচ্ছে তা আবার দ্বিগুণ হারে মজুরি দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। বেগমপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। আবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা।
এদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে পৌর শহরসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে অধিকাংশ চায়ের দোকানদার, ভ্যানচালক এমনকি গরিব শিক্ষার্থীরাও বাড়তি রোজগারের আশায় ধানকাটার কাজ করছেন। পৌর শহরের দক্ষিণমাথার চা দোকানি সিরাজুল ইসলাম জানান, সারা দিন চা বিক্রি করে ৫০০ টাকা রোজগার করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ৭-৮ ঘণ্টা ধান কেটে ৮০০-৯০০ টাকা রোজগার করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় ৭০ ভাগ ক্ষেত থেকে চাষিরা ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে বাকি ধান ঘরে উঠবে।

 
Electronic Paper